চারুপমা

• মডেল: ধ্রুবজ্যোতি সরকার, বিনতা চক্রবর্তী • মেকআপ: বিউটি সাহা, আশিষ মণ্ডল 
• ছবি: সুহাশিষ • পোশাক: রাহুল সর্দার • আয়োজক: পিয়ালী সেন (বং কানেকশন স্টুডিও)
• মডেল: আদিত্য চৌধুরী • মেকআপ: অনীতা সাধুখাঁ • পোশাক: শ্রীগোপাল পাঞ্জাবি মহল, 
• যোগাযোগ: ৯৮৩৬৫৯২৫৪৯ • ছবি: প্রদীপ পাত্র • গ্রাফিক্স: সোমনাথ পাল

দাক্ষিণাত্য বিজয়

পুজোর বাজারে এবার দক্ষিণের শাড়ির চাহিদা প্রচুর। লিখছেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।

চোল, চের, পল্লব। নামগুলো কোথায় শুনেছেন মনে করতে পারছেন? ইতিহাসের পাঠ্যবইতে এই সব রাজবংশের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় সকলের। দক্ষিণ ভারতকে সেই চেনার শুরু। কেউ তাদের মনে রাখেন। কেউ বা রাখেন না। কখনও বেড়াতে যাওয়ার স্মৃতি, কখনও বা দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের স্বাদে দাক্ষিণাত্যকে নিয়ে মুগ্ধতা বাড়তেই থাকে। এরপরই হইহই করে প্লে লিস্টে এসে পড়ে দক্ষিণের সিনেমা-সিরিজ। আর সাজ সরণিতে পসরা সাজায় দক্ষিণের নানা শাড়ি। কখনও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দক্ষিণের সিল্ক। কখনও বা শাড়ি চিনতে শিখে কিনে ফেলা দক্ষিণের সুতি। এভাবেই দক্ষিণ ভারত সাম্রাজ্য বিস্তার করে আপনার সংগ্রহে। পুজোর আগে বাঙালি কন্যেদের আলমারির খোলনলচে খানিক বদলায় প্রতি বছর। পুরনোদের পাশাপাশি এসে জমে নতুনরা। পুজোর চারদিন ঘুরিয়েফিরিয়ে পরা শাড়ি রোদে দিয়ে বা পালিশ করিয়ে ফের তুলে রাখা হয় আলমারিতে। বিশেষ কোনও অনুষ্ঠানে তা আবার নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পায়। পুজোর বাজারে এবার দক্ষিণের শাড়ির চাহিদা প্রচুর। যে কোনও বয়সের মহিলাই দক্ষিণের সুতি বা সিল্কের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। কেউ ইতিহাস জেনে সাজছেন। কেউ বা শাড়ির রূপের মোহে মন দিয়েছেন দক্ষিণকেই। 
দাক্ষিণাত্য বিজয়ের শুরুতেই কাঞ্চিপুরম সিল্কের কথা বলতে হয়। এই ধরনের সিল্কের শাড়ির সঙ্গে তাঁতিদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। কারণ মনে করা হয় এ শাড়ি ঈশ্বরের হাতে তৈরি। ‘ঐত্রিকা উইমেন অ্যাটায়ার’-এর কর্ণধার পারমিতা বসু ঘোষ বললেন, ‘এ বছর দক্ষিণের ট্রেন্ড সত্যিই বেশি। অনেক শাড়ি সম্পর্কে মানুষ আগে জানতেন না। অনলাইনের জন্যই ধীরে ধীরে জানতে শিখেছেন। বিভিন্ন রাজ্যের শাড়ির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। হাতে বোনা কাঞ্চিপুরম সিল্ক বা কাঞ্চি কটন এগুলোর চাহিদা প্রচুর। দক্ষিণের সুতির প্রতি এত ভালোবাসা হতে পারে, এটা কিন্তু দেখার মতো। গত পাঁচ বছর ধরে আমি দক্ষিণী শাড়ি নিয়ে কাজ করছি। মানুষ ভাবতেন এত দাম দিয়ে সুতির শাড়ি কিনব কেন? কিন্তু এ বছর দক্ষিণের শাড়ির বুনন, ডিজাইন সব কিছু নিয়েই মানুষের ভালোলাগা তৈরি হয়েছে।’
দক্ষিণের নানা ধরনের শাড়ির মধ্যে বাঙালির ভীষণ পছন্দের গাদোয়াল। যেকোনও অনুষ্ঠানে যে কোনও বয়সে এই শাড়ি আলাদা লুক তৈরি করে। সুতি এবং সিল্ক দু’ধরনের সুতোতেই বোনা হয় এই শাড়ি। সুতির জমিতে সিল্কের পাড় যে পদ্ধতিতে বোনা হয় তাকে বহু শিল্পী বলেন কুট্টু। 
সারা বছরই এই শাড়ির চাহিদা থাকে। কিন্তু পুজোর সময় কেনার ঝোঁক বেশি, একথা স্বীকার করে নিলেন ‘এথনিক বুটিক’-এর কর্ণধার গার্গী সোনকার। তিনি বললেন, ‘এবছর দক্ষিণের সুতি, সিল্ক যে কোনও রকম ট্র্যাডিশনাল শাড়ির উপর আগ্রহ রয়েছে। সুতির শাড়ি চিরকাল বাঙালি পছন্দ করেন। বাংলার সুতির পাশাপাশি দক্ষিণের নানা ধরনের সুতির বাজার ভালো। তবে সবথেকে বেশি চাহিদা কাঞ্চিভরম আর গাদোয়াল। টিস্যু গাদোয়াল, টিস্যু কাঞ্জিভরম সব বয়সের মানুষ কিনছেন। টিস্যু ট্রেন্ডে রয়েছে এ বছর। অরগ্যাঞ্জা হোক, দক্ষিণের শাড়ি বা বেনারসের কোনও শাড়ি— টিস্যু খুঁজছেন সকলে।’ 
কলমকারি একটি অনবদ্য আর্ট ফর্ম। শুধু শাড়ি নয়, বিভিন্ন পোশাকের উপর কলমকারির চাহিদা রয়েছে। এটাও দক্ষিণী হাওয়া। 
গার্গী বললেন, ‘কলমকারির চাহিদা খুব। এটা তেলেঙ্গানার। তসর, কটন, কোটা যে কোনও ফ্যাব্রিকের উপর কলমকারি দেখতেও ভালো লাগে আর পরেও আরাম। তাই ভীষণ চাহিদা।’ 
তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা জেলায় তৈরি হওয়া চেট্টিনাড সিল্ক এবার পুজোর বাজার আলো করে রয়েছে। টেম্পল, রুদ্রাক্ষম এবং ম্যাঙ্গো অর্থাৎ মন্দিরের আদলে বা রুদ্রাক্ষের মতো অথবা আম কলকার ডিজাইনে এই শাড়ির পাড় তৈরি হয়। অত্যন্ত হালকা এই শাড়ি দিনভর পরে থাকা যায়। দক্ষিণের ঐতিহ্যশালী মাইসোর সিল্কেরও চাহিদা রয়েছে। প্রায় ৪০ বছর আগে এই শাড়ি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরি করেছিল। একরঙা এই শাড়িতে জমকালো ব্লাউজ দিয়ে সাজতে পারেন। আবার এধরনের শাড়ির মধ্যে স্ট্রাইপ বা ছোট বুটির কাজও ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। সেক্ষেত্রে কনট্রাস্ট করে একরঙা ব্লাউজ দিয়ে সাজতে পারেন। উত্তর কর্ণাটকের বিখ্যাত ইক্কল সিল্কও বাঙালি নারীর মন ছুঁয়েছে। সবচেয়ে নজরকাড়া এই শাড়ির জমিতে জ্যামিতিক নকশা। সপ্তমীর রাতে ঠাকুর দেখা বা নবমীর পেটপুজো— সবেতেই আপনার সঙ্গী হতে পারে। 
দক্ষিণের সিল্ক শাড়ি সাধারণত গাঢ় রঙের বুনন চোখে পড়ে বেশি। পুজোর বাজারও তাই রঙিন। লাল, সবুজ, নীল, কমলা, হলুদের মতো খাঁটি রঙের উপর দক্ষিণী শাড়ি আধিপত্য বজায় রেখেছে চিরকাল। তবে শুধু সলিড কালার নয়, অন্যধারার রঙের প্রতিও আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। পারমিতার অভিজ্ঞতা, ‘দক্ষিণের শাড়িতে ক্রস উইভ অর্থাৎ ডুয়েল শেডেরও ডিমান্ড আছে। মাস্টার্ড ইয়েলো সঙ্গে গ্রিন সুতো। পিকক গ্রিন, ব্লু শেডের চাহিদা বেশি।’
আর একটা নাম এবছর প্রায় সকলেরই মুখে মুখে ঘুরছে। তা হল পচমপল্লি। অন্ধ্রপ্রদেশের একটি গ্রামের নামে তৈরি এই শাড়ি। পচমপল্লি সিল্ক আসলে পুজোর রাতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার মুড তৈরি করে দিতে পারে। এর সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শাড়ির কথা পারমিতা মনে করিয়ে দিলেন। তা হল পাটোলা। তিনি বললেন, ‘অন্ধ্রপ্রদেশের পাট্টু শাড়ি, পচমপল্লি, পাটোলার চাহিদা রয়েছে। পিওর পাটোলার দাম বেশি। ৩৫ হাজার থেকে শুরু। সকলে কিনতে পারেন না। ফলে পাটোলার আদলে পচমপল্লিতে ইক্কত বোনা হয়। যার দাম ১৬ হাজার টাকা থেকে শুরু। সেটা অনেকেই কিনছেন।’ 
পুজোর জন্য বাঙালির সারা বছরের অপেক্ষা। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যেই কেনাকাটা সারতে হয়। এবার কি শাড়ির দাম কিছু বেড়েছে? গার্গী বললেন, ‘দাম অনেকটাই বেড়েছে। সেজন্য বাজারে এখন নকল শাড়ি ছেয়ে গিয়েছে। বারো হাজার টাকার শাড়িও লোকে পিওর বলছে। দক্ষিণের যে কোনও শাড়ির দাম কিন্তু সবসময়ই বেশি। হ্যান্ডলুম শাড়ির দাম শুরু হয় ১৭-১৮ হাজার টাকা থেকে। কিন্তু পাওয়ারলুমের শাড়িই লোকে হ্যান্ডলুম বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। দু’বছর আগে ৩৫০০-৪০০০ টাকায় সিল্কের থান কিনতাম আমরা। এখন তার দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে মজুরিও বেড়েছে।’ 
সব মিলিয়ে দক্ষিণের সুতির শাড়ি কেনার ইচ্ছে থাকলে অন্তত পাঁচ হাজার টাকা থেকে দাম শুরু হবে। এটা ভেবে এগনোই ভালো। আর ভালো সিল্ক সংগ্রহ করতে চাইলে বাজেট রাখতে হবে অন্তত ২০ হাজার টাকা। হ্যান্ডলুমের বাজেট সকলের থাকে না ঠিকই। সেক্ষেত্রে পাওয়ারলুমই ভরসা। ফলে এবার পুজোয় পকেট বুঝে দাক্ষিণাত্যের ঐতিহ্যকে আপন করে নিন। 
শাড়ি ভালোবাসলে এর যত্নের কথাও মনে রাখতে হবে। আসলে এসব ঐতিহ্যবাহী শাড়ি বংশপরম্পরায় হাত বদল হয়। সিল্ক বা সুতির শাড়ি ড্রাই ওয়াশ করানোর পরামর্শই দেন বিশেষজ্ঞরা। অন্তত প্রথমবার ধোয়ার সময় ড্রাই ওয়াশ করাতেই হবে। পরবর্তী ক্ষেত্রে বেবি শ্যাম্পু দিয়ে দক্ষিণী সুতির শাড়ি বাড়িতেও কেচে নিতে পারেন। কিন্তু কখনও কড়া রোদে মেলবেন না। পুজোর দিন নতুন শাড়ি পরার পর ঘাম শুকিয়ে নেওয়ার জন্য হালকা রোদে রেখে তবেই আলমারিতে তুলবেন।  
শাড়ি: ঐত্রিকা উইমেন অ্যাটায়ার
যোগাযোগ: ৮২৪০৫১৪৫১৬
10Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা