বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

চল্লিশেই চর্চা

চুলে পাক ধরেছে? সে তো কবেই...। মুখের বলিরেখা? সেও নতুন সঙ্গী নয়। গোছানো কেরিয়ার? এটা হতে পারে। সংসারী, থিতু? এও খানিক সত্যি। আপ্রাণ দৌড়ে চলা বাইরেটা সাজিয়ে তুলতে ভিতরের আমি যখন ক্লান্ত, তখনই যেন চিনে নেওয়া যায় ৪০-কে। এ এক এমন বয়স যেখানে পৌঁছে অধিকাংশেরই সামাজিক, আর্থিক অবস্থান স্পষ্ট। সুখের চাবিকাঠির খোঁজে ইঁদুরদৌড়ের নিয়ম পালন করতে গিয়ে হঠাৎই যেন মনে পড়ে, ওহো! আমার আমির যত্ন হচ্ছে কই? খুব তো দেরি হয়নি। মাত্র ৪০। এভাবেই ভাবুন না। নতুন বছরে আপনারও চর্চার পারদ নতুন সাজে সেজে উঠুক। ক্ষতি কী?
যাঁরা অন্তত নিজের যত্নের কথা ভেবেছেন, তাঁরা বাকি জীবনের রসদ সংগ্রহে এক কদম এগিয়ে আছেন বলে মনে করেন মেডিটেশন মেন্টর নন্দিনী চৌধুরী। ৪০-এর কোঠায় মেয়েদের কিছু স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি অনেক স্বপ্ন ধ্বংসও হয়েছে। ভাবতেন হয়তো, প্রধানমন্ত্রী হব বা অ্যাস্ট্রোনট। নানা রকম কিছু হতে পারার স্বপ্নকল্পে তেপান্তরের মাঠে ঘোড়া ছুটিয়ে দেওয়া শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য পেরিয়ে ৪০-এ এসে বুঝে যাওয়ার পালা, আমি কে। নন্দিনীর কথায়, ‘এই পরিস্থিতিতে যিনি নিজেকে নতুন করে ভালোবাসতে চাইছেন, তিনি অর্ধেক যুদ্ধ জিতে শুরু করছেন।’ 
আশুতোষ কলেজের সাইকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর রিমঝিম রায় ৪০-কে ছেড়ে দেওয়ার বয়স হিসেবে ব্যাখ্যা করলেন। তাঁর মতে, ‘এই বয়স থেকে পরবর্তী প্রজন্মকে এগিয়ে দেওয়ার পালা। মা হওয়ার যাত্রায় একটি মেয়েকে অনেক ঘাতপ্রতিঘাত, ক্ষয়-অবক্ষয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তখন নিজের দিকে তাকানোর সময় পান না। তার মধ্যে যদি নিরাপত্তাহীনতা বাসা বাঁধে সেটা তার সন্তানকেও প্রভাবিত করবে। সেই মানুষদের দেখি সন্তানকে আঁকড়ে কুঁকড়ে বাঁচার প্রবণতা। জীবনে তাঁর নিজস্ব অস্তিত্ব থাকছে না। ৪০, ৪৫... যত এগব, তত সন্তানদের ছেড়ে দেওয়ার পালা। শূন্যতা তৈরি হলেই বিভিন্ন মানসিক সমস্যা জর্জরিত করছে। কিছুতেই ভালো থাকতে পারছে না সে’, বললেন তিনি। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটা যে কোনও বয়সেই জরুরি। ৪০ আসলে মনে করিয়ে দেয় বার্ধক্যের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে শরীর। রিমঝিম বললেন, ‘এই বয়স থেকে সুগার, হাইপারটেনশন, আর্থ্রাইটিস আসে। মেনোপজও খুব দূরে নয়। বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতিরোধ ক্ষমতা ধাক্কা খাচ্ছে। এছাড়া একটা সামাজিক চাপও তৈরি হয় যেটা চোখে দেখা যায় না। আমি একজন মা, একজন সন্তান, একজন মহিলা হিসেবে কী করব, তার চাপ। খানিকটা কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর মতো। প্রত্যেক সময় নিজেকে প্রমাণ করতে করতে যাওয়া। আমি নিজেকে কীভাবে দেখতে চাইছি, সমাজ আমাকে কীভাবে দেখতে চাইছে। এইগুলোর সমষ্টিগত প্রভাব এই বয়সে পড়ে।’
কিন্তু ভালো তো থাকতেই হবে। আর তার জন্য জরুরি সচেতনতা। রিমঝিম মনে করেন, ‘এগুলো থেকে বেরতে গেলে প্রয়োজন এ বি ফ্যাক্টর। অ্যাওয়ারনেস এবং ব্যালান্স।’ নিজের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। কী চেয়েছিলাম জীবনে, কতটা অর্জন করেছি, ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখছি, সে ধারণা থাকা জরুরি। সন্তান, অভিভাবক, পেশাদার— সব জায়গায় নিজের ভূমিকা সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণা থাকা দরকার। বাস্তবকে মেনে নিতে হবে। 
নন্দিনী ৪০-এ চনমনে থাকতে নিজেকে ভালোবেসে নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর পরামর্শ দিলেন। তাঁর মতে, ‘কিছুটা সময় নিজের থাকুক। নিজের মতো কিছু খান। এটা নিজেকে নিজের দেওয়া উপহার মনে করুন। নিজেকে ভিটামিন খাওয়ানোর মতো সবুজের দিকে তাকান। প্রকৃতির আওয়াজ শুনুন। কমলালেবু, চন্দন, ল্যাভেন্ডারের গন্ধ নিন। এগুলো মনকে শান্ত করে। ছোট এলাচের গন্ধ, মিন্ট মানসিক প্রশান্তি দেয়। সেগুলো ট্রাই করতে পারেন।’ 
এখন লাইফস্টাইল এমন, সব বয়সের মেয়েই নিজেদের যত্ন নেন। তবুও ৪০-এ নিজেকে যখন নতুন করে ভালোবাসার পশমে মুড়ে নিচ্ছেন, সাজগোজও ঝালিয়ে নিতে হবে বইকি! রূপবিশেষজ্ঞ শর্মিলা সিং ফ্লোরা বললেন, ‘ক্লেনজিং, স্ক্রাবিং করুন। রাতে নাইট ক্রিম দিন। সানস্ক্রিন বারবার লাগালে পিগমেনটেশন আসবে না। সঠিক বিউটিশিয়ানের কাছে যান। পেডিকিওর করান। মাঝে মাঝে ফেসিয়াল করলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। সৌন্দর্যের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য, আভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য জড়িত।’  
শর্মিলা মনে করেন, ৪০ এমন একটা সময় যখন থেকে মেটাবলিজম সিস্টেম কম হয়ে যায় বলে ত্বক, চুল সবই মলিন হতে থাকে। জরুরি স্বাস্থ্য সচেতনতা। ‘ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, গাইনির সমস্যা, ডিপ্রেশন— সবকিছুর দিকে এই বয়স থেকে নজর দেওয়া দরকার। জীবনসঙ্গী কেমন ব্যবহার করছেন, কেন কোনও মহিলা নিজের যত্ন করছেন না, সবই নজর করতে হবে। সঙ্গে যোগাসন, নিয়মমাফিক খাওয়া,’ বললেন তিনি। 
যোগাসন এবং মেডিটেশন এই বয়সে বন্ধুর মতো আপনার হাত ধরতে পারে। কিন্তু তারও কিছু নিয়ম রয়েছে। নন্দিনী মনে করেন, ‘যোগাসনে কীসের সঙ্গে কীসের যোগ সেটা গুরুত্বপূর্ণ। যিনি কোনওদিন যোগাসন করেননি, তিনিও ৪০ বছরে পেশাদারের পরামর্শে পদ্মাসন, গোমুখাসনের মতো সহজ আসন দিয়ে শুরু করতে পারেন।’
মেডিটেশনের ক্ষেত্রেও আপনি কী পেতে চাইছেন, সেটা জরুরি। যে কোনও মেডিটেশন সকলের জন্য নয়। এক্ষেত্রেও পেশাদারের কাছে গিয়ে জেনে নিন আপনার কোনটা দরকার। নন্দিনী বললেন, ‘অনেকে বলেন আমি একজায়গায় বসলেই মনে নানা ভাবনা ভিড় করে আসে। সেটাই মনের ধর্ম। মনের ভাবনা খেয়াল করলে অনেক সময় নিজের কাছেই নিজের উত্তর বেরিয়ে আসবে।’
নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে মানসিকভাবে কতটা ভালো থাকা যায়, সেটাও ভাবতে হবে বলে মনে করেন রিমঝিম। তাঁর কথায়, ‘সামাজিকভাবে ইতিবাচক কাজে নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। তার মানে কিন্তু পরনিন্দা-পরচর্চা নয়। কোনও ভালো সংগঠনে যুক্ত হওয়া বা বন্ধুর দল থাকতে পারে। সেখানে আবৃত্তি শোনালেন, সিনেমা দেখলেন। তার সঙ্গে ‘উই টাইম, মি টাইম’ ব্যালান্স।’ সংসারে শান্তি বজায় রাখা তথাপি নিজেরও মানসিক প্রশান্তির দাওয়াই দিয়ে বললেন, ‘কতটা কথা বলব, কোথায় আর কথা বলার দরকার নেই, এই বোধটা আসা খুব জরুরি। পরিমিতি বোধ যাপনের জন্য খুব দরকার। ক্ষমা করতে শিখতে হবে।’
৪০ বোধহয় এমন একটা বেঞ্চমার্ক যা শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্যও বাঁচতে শেখার অভ্যেস তৈরি করার সুযোগ দেয়। নন্দিনী বললেন, ‘যাপনের মধ্যে মেডিটেশনকে ঢুকিয়ে নিন। গরিব মানুষের থেকে দরকার না হলেও দু’বান্ডিল শাক কিনলে বিনিময়ে যে হাসিটা পাবেন তা মন ভালো করবে। অর্থাৎ অন্যের জন্য কিছু করার ক্ষমতা আপনার আছে।’ 
ভালোবাসার আসলে কোনও বয়স হয় না। নিজেকে জড়িয়ে ধরুন শক্ত করে। শুরুর শুরু হোক এভাবেই। 

31st     December,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ