বিশেষ নিবন্ধ

মোদিতন্ত্রের শিকার স্কুলশিক্ষা
হারাধন চৌধুরী

বন্যার কোপ
মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা। পড়াশোনা এবং কর্মসূত্রে ২০০৫ সাল থেকে পাঁশকুড়ায় আছেন। একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের‌ ইংরেজির শিক্ষক। আরও দুই যুবকের সঙ্গে হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে একটি সেলফি তুলে পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। তাঁদের পরনে ট্রাউজারের বদলে গামছা ও জামা, হাতে জুতো এবং পিঠে একটি করে ব্যাগ। কম বয়সি শিক্ষক মহাশয় ওই ছবির সঙ্গে লিখেছেন, ‘এমন ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কখনও হইনি। বাধ্য হয়ে মেস ছেড়ে স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম। বাড়ি ফিরছি। স্কুলে যেতে পারছি না বলে মন ভারাক্রান্ত।’ এবার বন্যার শিকার শুধুমাত্র দক্ষিণবঙ্গেরই ১২টি জেলা। তাই অনেক স্কুলবাড়িও যে জলমগ্ন হয়েছে তা একটি সংগত অনুমান। আবার দুর্গত অঞ্চলের যেসব স্কুলে জল ওঠেনি সেগুলিতে নিশ্চয় চলছে অস্থায়ী ত্রাণ শিবির। হঠাৎ সব হারানো মানুষগুলি কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন তার উপর নির্ভর করছে স্কুল খোলার ব্যাপারটা। জল নেমে যাওয়ার পরেও সব স্কুলে পঠনপাঠনের পরিবেশ ফিরবে কি? বিল্ডিং থাকবে স্যাঁতসেঁতে। বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, ব্ল্যাক বোর্ড, আলমারি—এসব অক্ষত থাকবে না। নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিছু বই, খাতাপত্র। স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা, খেলার মাঠ প্রভৃতিও বরবাদ হয়ে যেতে পারে অনেকাংশে। এসবের ইনসপেকশন হবে, রিপোর্ট তৈরি হবে, তারপর চলবে রিপোর্টের সত্যাসত্য যাচাইয়ের অসহ্য নাটক। টাকার জন্য চলবে স্কুলের তরফে উপর্যুপরি দরবার এবং কেন্দ্র-রাজ্য দড়ি টানাটানি। শিক্ষক ও স্কুলের অন্য কর্মীরা বেতন নিশ্চয় পেয়ে যাবেন, শুধু পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হবে অসংখ্য ছেলেমেয়ে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে তাদের বেশিরভাগই গরিব বাবা-মায়ের সন্তান। 
ভোটের বলি
ভারতীয় গণতন্ত্রকে ‘ভোট বাহাদুর’ বললেই ঠিক বোঝানো যায়। স্কুল কমিটি থেকে লোকসভা গঠন পর্যন্ত ঠিক কত রকমের ভোটের লাইনে যে ভারতবাসীকে দাঁড়াতে হয়, তা গুনে পারা মুশকিল! তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোটগুলি হল—পঞ্চায়েত/পুরসভা, বিধানসভা ও লোকসভা। এই সমস্ত ভোটের জন্য সবচেয়ে বেশি চাপ দেওয়া হয় স্কুলগুলির উপর। রাজ্য এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশন নামে দুটি গালভরা স্বশাসিত সংস্থার মাতব্বরিতে নির্বাচন ও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বটে, কিন্তু তাদের কর্মিদল বলে কিছু নেই। সবটাই চলে রাজ্যে রাজ্যে কর্মরত সরকারি কর্মী এবং স্কুল শিক্ষকদের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে। ভোটার তালিকা তৈরি, সংশোধন থেকে ভোটের ডিউটি—সবেতে শুধু তাঁরাই। ভোটকেন্দ্র বা বুথ তৈরির জন্য মূলত স্কুলগুলিরই (গুটি কয়েক কলেজও) দখল নেওয়া হয়। ভোটের কাজে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের থাকার বন্দোবস্ত করতেও ভরসা সেই স্কুল। এমনকী নির্বাচন-পরবর্তী হিংসা রুখতেও কিছু এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দীর্ঘদিন রেখে দেওয়া হয়। বলা বাহুল্য, তার জন্য ফের আটকা পড়ে যায় কিছু স্কুলই। সব মিলিয়ে যা দাঁড়ায়, বহু শিক্ষক দীর্ঘদিন স্কুলে থাকার সুযোগ পান না এবং স্কুলগুলিও সবদিন ফাঁকা পাওয়া যায় না। ফলে সিলেবাস শেষ করা সত্যিই অসম্ভব হয়ে পড়ে।  
 উটকো ঝামেলা
লোকসভা ভোটের জন্য এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী স্কুলগুলিতে দীর্ঘদিন ছিল। ফলে দেদার আলো জ্বলেছে, পাখা চলেছে। কোনও কোনও স্কুলে জলের পাম্প চালাবার ক্ষেত্রেও লাগাম ছিল না। বাহিনী পাততাড়ি গোটাবার পর বিদ্যুৎ বিল পেয়ে তো স্কুলগুলির মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়! দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী স্কুলকে তো লাখ টাকার কাছাকাছিই বিল ধরানো হয়েছে! এমন অবাঞ্ছিত বিল আপাতত স্কুলগুলিই মেটাচ্ছে তাদের নিজ নিজ তহবিল থেকে। কিন্তু ওই বিপুল অর্থ তো তাদের মেটাবার কথা নয়। এতে স্কুলগুলির অন্যান্য খরচে টান পড়তে পারে। রাজ্য সরকার দিল্লির কাছ থেকে ওই টাকা আদায়ের চেষ্টায় আছে এখন। কিন্তু দিল্লিওয়ালাদের কাছ থেকে হকের পাওনা আদায় করা কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙানোর চেয়েও কঠিন ব্যাপার নয় কি? উত্তরটা আমাদের বাংলার মানুষের চেয়ে ভালো কারাই-বা জানবে!
মোদিতন্ত্রের শিকার
পিএমশ্রী প্রকল্প চালুর জন্য মউ সই করেনি রাজ্য সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নাম প্রচারের দায় কেন নেবে রাজ্য? এই সংগত প্রশ্নেই আপত্তি রাজ্যের। তার মাশুল দিতে হচ্ছে বাংলার মানুষকে। সমগ্র শিক্ষা অভিযানের টাকা আটকে দিয়েছে কেন্দ্র। কেননা, এই প্রকল্পের টাকা পাওয়ার পূর্বশর্ত রাখা হয়েছে পিএমশ্রী প্রকল্পে মউ স্বাক্ষর। পিএমশ্রীর অধীনে রাজ্যের দেওয়া জমিতে হবে কেন্দ্রীয় স্কুল। কিন্তু কয়েক বছর পর সেই স্কুলেরই আর্থিক দায় নিতে হবে রাজ্যকে। স্বভাবতই এই উটকো ঝামেলা নিতে বাংলা রাজি হয়নি। অমনি শুরু হয়েছে সবক শেখাবার পাঠ—বন্ধ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ। ফলে স্কুলগুলিকে কম্পোজিট গ্রান্টের টাকা দিতে পারছে না রাজ্য সমগ্র শিক্ষা মিশন এবং অর্থ সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে বহু স্কুল (প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক)। অন্যদিকে স্কুলগুলির খরচ বেড়ে চতুর্গুণ হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ বিল স্থানীয় পঞ্চায়েত/পুরসভার দেওয়ার কথা। কিন্তু সেই নিয়ম সবসময় মানা হচ্ছে না। বিল বকেয়ার কারণে জুটছে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি। তখন কিছু শিক্ষকই নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে বিল মেটাতে বাধ্য হচ্ছেন। সাধারণত, স্কুলগুলি এই টাকা রাজ্যের কাছ থেকে এপ্রিলে পায়। ছন্দপতন শুরু হয়েছে গতবছর থেকে। 
এদিকে, সম্প্রতি হুগলি জেলার তিনটি স্কুলে ক্লাস চলাকালেই সিলিং ফ্যান খুলে পড়ার মতো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে! প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, পোলবার বেলগরিয়া প্রাইমারি স্কুলের ঘটনায় জখম হয়েছে তিন পড়ুয়া। তাদের মধ্যে একজনের তো মাথাই ফেটে গিয়েছে! অন্য দুটি ঘটনা ঘটেছে চুঁচুড়া ও পাণ্ডুয়ার দুটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে। এরপর স্কুলশিক্ষাকে মোদিতন্ত্রের শিকার বলা কি অতিরঞ্জন হবে?   
আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই
প্রান্তিক মানুষের হাতে নগদের জোগান নিশ্চিত করতে জনকল্যাণমূলক একগুচ্ছ প্রকল্প চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সামাজিক ক্ষেত্রেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলার কন্যাশ্রী এবং রূপশ্রী প্রকল্পের ভূয়সী প্রশংসা প্রসঙ্গে ইউনিসেফই বলল এই কথা। গত কয়েক বছরে সামাজিক উন্নয়নে প্রকল্প দুটি বড় ভূমিকা নিয়েছে। মত আন্তর্জাতিক সংস্থাটির। সম্প্রতি কলকাতায় এক আলোচনাসভায় ভাষণ প্রসঙ্গে এই দুই প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন পশ্চিমবঙ্গে নিযুক্ত ইউনিসেফের চিফ অব ফিল্ড অফিস মঞ্জুর হোসেন। তাঁর দাবি, ‘এই দুই প্রকল্পের সৌজন্যে স্কুলছুটের সংখ্যা এবং বাল্যবিবাহ কমেছে।’ এই দাবি অবশ্যই সংগত। কেননা এখনও পর্যন্ত তিন কোটির বেশি মেয়ে কন্যাশ্রীর সুবিধা পেয়েছে। অন্যদিকে, রূপশ্রীর সুবিধা পেয়ে উপকৃত তরুণীর সংখ্যা ১৮ লক্ষের বেশি। তবে এই দুই মহৎ উদ্যোগের সীমাবদ্ধতাও ধরা পড়েছে একই সঙ্গে।
সরকারি হাসপাতালের সৌজন্যে সম্প্রতি একটি বাল্যবিবাহের ঘটনা সামনে এসেছে। মাত্র ১৫ বছরের কিশোরীকে চিকিৎসার জন্য ভাঙড়ের ওই 
গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষায় ধরা পড়ে যে, ন’মাস আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসা মেয়েটি গর্ভবতী! শোনা যাচ্ছে, এই ব্যাপারে মেয়েটির স্বামী এবং বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করছে পুলিস। কিন্তু তাতে মেয়েটির কী লাভ? তার যা সর্বনাশ হওয়ার তা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। কলকাতা পুলিসের ভাঙড় ডিভিশন সূত্রের আরও খবর, ওই এলাকা থেকে মাসে অন্তত তিন-চারটি বাল্যবিবাহের অভিযোগ তারা পাচ্ছে! 
দেশ তোলপাড় কতিপয় মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আইআইটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং কিংবা যৌননির্যাতনের কিছু ঘটনা নিয়ে। এসব ক্ষেত্রে জোরালো প্রতিবাদই হওয়া দরকার। কিন্তু ওইসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দোরগোড়ায় পৌঁছনো আর চন্দ্রাভিযানের আয়োজন যাদের কাছে সমার্থক, তাদের কথা রাষ্ট্র আর একটু ভালো করে কবে ভাববে?  
17d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা