জিম ও ডায়েটের মাঝে থেকে যায় নানা গলদ। সেসব ভুল না এড়ালে রোগা হতে পারবেন না কিছুতেই। জানাচ্ছেন পিজি হাসপাতালের ডায়েটেশিয়ান সায়ন্তনী চট্টোপাধ্যায়।
প্রতিদিন নিয়ম করে জিমে যান। প্রয়োজন মতো কার্ডিওভাস্কুলার, স্ট্রেংথ ট্রেনিং সব করেন। তবু মাসের শেষে ওজন ঝরার কাঙ্ক্ষিত সীমা ছুঁতেই পারছেন না। হয়তো লক্ষ্য তৈরি করেছেন, মাসে ৪ কজি ঝরাবেন, দেখা যাচ্ছে, সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে রয়েছেন। ওয়ার্কআউট ডায়েট কোনও কাজে আসছে না।
ফলে দীর্ঘ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে একটা সময় হতাশা গ্রাস করছে। ডায়েট ও ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সায়ন্তনী চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘ওয়ার্ক আউটের সময় ও জিম সংক্রান্ত কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও মিথ এই সমস্যা ডেকে আনে। আমাদের চারপাশে জিম অনেক, কিন্তু বহু জিমেই প্রশিক্ষিত ট্রেনার নেই। ফলে জিম করতে এসে ভালো গাইডেন্স পান না অনেকে। প্রত্যেকের শরীর আলাদা। সেই অনুযায়ী চাহিদা, অসুখ, প্রয়োজন সবই আলাদা। আর ওজন কমানো মানেই একগাদা সাপ্লিমেন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়া দেখে ডায়েট নয়। ডায়েট আবার দিনের পর দিন এক রেখে দিলেও ওজন কমবে না। প্রতি দিন ১৫ অন্তর ডায়েট পল্টে ফেলতে হবে। কিছু ডায়েটিশিয়ান সেটা মানেন না। ফলে শরীরও একই ডায়েটে অভ্যস্ত হয় ও ওজন কমে না।’
কাজেই ওজন কমাতে চাইলে মিথ ভেঙে এগতে হবে। তবেই কাঙ্ক্ষিত চেহারায় পৌঁছবেন ও সুস্থ থাকবেন। তাই মূল ধারণায় স্পষ্টতা রাখুন।
* ফিটনেসই প্রথম বাছাই: ওজন কমানোর প্রয়োজনে যা খুশি করতে পারা কোনও কাজের কথা নয়। ডায়েট এমন রাখতে হবে, যে খাবার আপনি খান। শরীরে সয় না, খাওয়া বারণ এমন খাবার যতই ওজন কমাক, এক সময়ের পর আর খেতে ইচ্ছেই করবে না। এতে অবসাদ বাড়বে এবং ওজনও। মনে রাখতে হবে, ফিটনেসই আসল। অন্য কোনও অসুখ থাকলে তার জন্য যা যা খাওয়া বারণ, সেসব খাবারও পাত থেকে বাদ দিতে হবে। একটু বেশি ওজন রেখেও ফিট থাকা ভালো। রোগা হতে গিয়ে অসুস্থ হওয়া কিন্তু কাঙ্ক্ষিত নয়।
* পেশির খাবার: জিম করা মনেই রোজ প্রচুর প্রোটিন খাওয়া— এমন কিন্তু একেবারেই নয়। আমাদের যাবতীয় যা খাবার তা প্রোটিন ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট নিয়েই তৈরি। শরীরেও এই প্রোটিন ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট সবই নির্দিষ্ট মাত্রায় শরীরে প্রয়োজন। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে একটা সময়ের পর কিডনির ক্ষতি হয়। তাছাড়া নিত্য এই অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরে ফ্যাট হিসেবেই জমা হয়। তাই ইনটেন্স ওয়ার্ক আউট করলেও প্রোটিন বার বা সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হয় না। একমাত্র কেউ কোনও খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকলে তখন তাঁর ডায়েটে প্রোটিনের ভাগ বাড়ে।
* ঘরের কাজ যথেষ্ট নয়: আমাদের এক বদ্ধমূল ধারণা, ঘরের কাজ— যেমন ঘর মোছা, বাসন মাজা, বিছানা করা, ঝাঁট দেওয়া, সিঁড়ি ভাঙা এসবেই বুঝি যথেষ্ট শরীরচর্চা হয়। এই কাজগুলিতে ঘাম ঝরে ঠিকই, শরীর সুস্থও থাকে। কিন্তু ওজন কমাতে চাইলেএর তেমন কোনও ভূমিকা নেই। বরং শারীরিক কসরত হয় যেমন— নাচ, সাঁতার, হাঁটাহাঁটি, ব্যয়াম কোনও একটিকে রাখতে হবে নিত্য রুটিনে।
* ফল খাওয়ার সময়: প্রথমেই বুঝতে হবে, ফল খাওয়ার কোনও সময় হয় না। ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনারের পর পর্যন্ত ফল খাওয়া যায়। বরং প্রতি মিলের আগে একটি করে ফল, বিশেষত আপেল বা কলা খেতে পারলে ভালো হয়। তাতে পেট কিছুটা ভরবে, খাবার বেশি খেয়ে ফেলার ভয়ও থাকবে না। সন্ধের পর ফল খাওয়া যায় না— এমন একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে। এর কোনও ভিত্তি নেই। কিছু ফল ডায়াবেটিস ও অ্যাসিডিটির কারণে অনেকের খাওয়া বারণ থাকে। তাঁরা সেই ফলগুলি এড়িয়ে বাকি সব ফল যখন ইচ্ছে খেতে পারেন।
* গরম জল ও ওজন: একটি ধারণা রয়েছে, গরম জল খেলেই রোগা হওয়া যায়। আদতে তা নয়। গরম জল আসলে শরীরের ফ্যাট ভাঙে। খাবার হজম করার ক্ষেত্রে তাই এই গরম জল খুব কার্যকর। গরম জল খেলে শরীরে বিপাকিক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। এতে ওজন বেড়ে যাওয়ার হাত থেকে কিছুটা ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু গরম জলের সঙ্গে ফ্যাট ভাঙার কোনও সম্পর্ক নেই।
* সুগার ফ্রি-র ভুল: চা বা কফিতে চিনির বদলে সুগার ফ্রি মিশিয়ে ভাবছেন, শরীরের খুব উপকার হচ্ছে। আদৌ তা নয়। বরং বাস্তবের চিত্রটি একেবারে বিপরীত। এই ধরনের কৃত্রিম চিনিতে মিষ্টি স্বাদ তৈরির জন্য অ্যাসপার্টেম নামক এক উপাদান মেশানো হয়। বেশিরভাগ প্যাকেটজাত জ্যুস, ডায়েট কোক ও জাঙ্ক ফুডে এই উপাদান থাকে। তা থেকে ওজন বৃদ্ধির সমস্যা বাড়ে । অ্যাসপার্টেম ছাড়াও এখানে স্যাকারিন থাকে। এই উপাদানটি ওজন বাড়িয়ে দেয়। তাই সুগার ফ্রি বাদ দিয়ে প্রয়োজনে গুড় বা নারকেলের চিনি কিংবা প্রাকৃতিক স্টেভিয়া ব্যবহার করতে পারেন।
লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়