দাম যা-ই হোক, আলু ছাড়া আমাদের চলেই না। আবার আলুর রয়েছে নানা স্বাস্থ্যগুণ।
আলু আমাদের খাবারে একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। শুধু তরকারিতে নয়, অন্য কিছু খাবারের সঙ্গেও আমরা আলু খেয়ে থাকি। আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে— এমন কিছু উপাদান আলু থেকে পাওয়া যায়। আবার আলুই আমাদের ক্ষতির কারণও হতে পারে। আলু নিয়ে এ জন্য আমাদের কাছে রয়েছে মিশ্র তথ্য। কারণ, আলু ওষুধের মতো কাজ যেমন করে, তেমনি ওষুধ খাওয়ার রাস্তাও করে দিতে পারে।
আলু প্রধানত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা হিসেবে আমরা চিনি। তবে আলু একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার, যার প্রচলন সাত হাজার বছর ধরে। মানবসভ্যতায় কৃষির প্রায় শুরু থেকেই হয়ে আসছে আলুর চাষ। আলুতে পটাশিয়াম বেশি থাকে, কিন্তু সোডিয়াম কম থাকে। আলু আমাদের নানাভাবে উপকার করে থাকে; যেমন আলুতে ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন ও জিঙ্ক থাকে। পাশাপাশি আরও থাকে ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি৯, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই। এছাড়া পুষ্টিগুণ হিসেবে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে। অল্প পরিমাণে হলেও আলুতে ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম ও কপার থাকে। আলুতে প্রচুর ফাইটোকেমিক্যাল থাকায় আমাদের শরীরে নানাভাবে উপকারে আসে।
রক্তচাপ কমায় আলু: আলুতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। রক্তচাপের অন্যতম কারণ হচ্ছে সোডিয়াম, যা আলুতে খুব সামান্য রয়েছে; ফলে আলুতে রক্তচাপ বাড়ার কোনও উপাদান নেই, কিন্তু আমরা আধুনিক খাদ্যব্যবস্থায় আলুর সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ মিশিয়ে মজাদার খাবার তৈরি করি, যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস, ম্যাসড পটেটো, পটেটো ওয়েজেজ ইত্যাদি; এসব খাবারে আলুর গুণ আর থাকে না; বরং ক্ষতির কারণ হয়ে যায়।
হার্টের ক্ষতি কমায়: হার্টের ক্ষতি করে এমন স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ আলুতে একেবারেই কম; বরং মনোআনস্যাচুরেড ফ্যাট ও পলিআনস্যাচুরেড ফ্যাট আছে, যা হার্টের জন্য উপকারী। কিন্তু আলুকে তেলে ভেজে খেলে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়।
হাড়ের সমস্যায়: আলুতে পেটের সমস্যা ছাড়া ও হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কাজ করে। আলুতে উপস্থিত ক্যালশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
পেটের সমস্যায়: আলু পেটের নানা সমস্যায় ভালো কাজ করে। কারণ, সিলিয়াক নামের পেটের অসুখে গ্লুটেন-জাতীয় খাবার খাওয়া যায় না, এ ছাড়া পেটব্যথা, ডায়ারিয়া, অ্যাসিডিটির নানা ধরনে আলু খাওয়া ভালো। আলুতে রেজিট্যান্ট স্টার্চ রয়েছে, যা বৃহদন্ত্রে প্রবেশ করে মন্দ ব্যাকটেরিয়া বের করে আনে। ফলে আইডিবি, কোলাইটিসের মতো ইত্যাদি জটিল রোগ উপশমে সহায়তা করে থাকে।
পেট জ্বালাপোড়ায়: অনেকের পেটের অসুখের কারণে পেটে একটা জ্বালা জ্বালা ভাব থাকে। এমন ক্ষেত্রে একটা ছোট আলু পিষে বা ব্লেন্ড করে এক কাপ জলে মিশিয়ে তার সঙ্গ একটু মধু ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে পেটের জ্বালা কমবে।
আলু খাওয়ার সঠিক নিয়ম: আলু খাওয়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে, আলু ভালো করে ধুয়ে খোসা সহ রান্না করতে হবে। আবার সবসময় তেলে ভেজে আলু খেলে তাতে কোনও উপকার মিলবে না।
অত্যন্ত উপাদেয় এই আলু যেভাবেই খাওয়া হোক, উপকার মিলবে। তবে খোসাসহ আর অতিরিক্ত তেল-মশলা পরিহার করেই রান্না করতে হবে আলু। এদিকে খাওয়ার সময় আলু যেন একেবারেই কাঁচা না থাকে। এতে ক্ষতি হতে পারে।
সুরজিৎমুখোপাধ্যায়