সম্পাদকীয়

বেনিয়ার সরকার

বহু জরুরি ওষুধের দাম একধাক্কায় ৫০ শতাংশ বাড়তে চলেছে। এই দুঃসংবাদ পাওয়া গিয়েছে সোমবার। আটটি ওষুধের ১১টি ফর্মুলেশনের সর্বোচ্চ দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির দাবিতে সিলমোহর দিয়েছে ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি (এনপিপিএ)। এই কেন্দ্রীয় সংস্থাই ওষুধের দামবৃদ্ধির অনুমোদন দিয়ে থাকে। ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির দাবি ছিল, ওষুধ তৈরির কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপাদানের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। ডলারের তুলনায় টাকার দামে পতনও ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। অতএব, তাদের খরচের দিকটা পুষিয়ে দিতে দামবৃদ্ধির দাবি সরকারকে মেনে নিতে হবে। এই ব্যাপারে সরকারের উপরে লাগাতার চাপ সৃষ্টি করেও আসছিল তারা। তার কাছেই নতিস্বীকার করেছে মোদি সরকারের ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এনপিপিএ। ৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দামবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুতকারকরা এই ছাড়পত্র পেয়ে যাওয়ার অর্থ, এবার রাতারাতি বহু ওষুধের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত স্বভাবতই আম আদমির কপালের ভাঁজ আরও চওড়া করে দিল। যেসব ওষুধ অগ্নিমূল্য হচ্ছে তার মধ্যে থাকছে যক্ষ্মা থেকে শুরু করে হাঁপানি, থ্যালাসেমিয়া পর্যন্ত বহু মারণ অসুখের দাওয়াই! যেমন—বেনজাইন পেনিসিলিন (১০ লাখ আইইউ ইনজেকশন), অ্যাট্রোপিন ইনজেকশন (০.৬ মি.গ্রা/এমএল), স্ট্রেপটোমাইসিন পাউডার ইনজেকশন (৭০০ এমজি এবং ১০০০ এমজি), স্যালবুটামল ট্যাবলেট, পিলোকরপাইন ড্রপ (২%), কেফাড্রক্সিল ট্যাবলেট (৫০০ এমজি), ডেসফেরিওক্সামাইন (ইনজেকশন) ও লিথিয়াম ট্যাবলেট (৩০০ এমজি)।
এর আগে ২০১৯ ও ২০২১ সালে ৯টি ফর্মুলার ওষুধের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছিল। গত এপ্রিলে, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাস আগেও একসঙ্গে ৮০০টি ওষুধের দামবৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছিল মোদি সরকার। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে নাগরিকের ঘাড়ে এই বিপুল ব্যয়ভার চাপিয়ে দেওয়া কোনও কল্যাণকামী সরকারের কাজ হতে পারে না। সরকারের এই জনবিরোধী ভূমিকার জোরালো প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন। একটি নির্বাচিত সরকার কি শুধু বণিক শ্রেণির স্বার্থই দেখবে? শুধু ওষুধ নয়, আরও নানা ক্ষেত্রে এই সরকারকে যতটা একতরফা ও ধারাবাহিকভাবে পুঁজিপতিদের পাশে দেখা যাচ্ছে তা বেনজির। এর মধ্যে ক্রনি পুঁজিবাদের দীর্ঘতর ছায়াটিই প্রকট‍ হচ্ছে। শাসক দলের এমপি, এমএলএ’রা এই অন্যায় কারবারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার অনুমতি যে পাবেন না, তা এক সহজ অনুমান। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এই ব্যাপারে প্রয়োজন মতো সোচ্চার হচ্ছে না কেন? এবার এই প্রশ্নটিও জোরালো হচ্ছে বইকি!
আমাদের দেশের নীচের দিকের অর্ধেক মানুষের যা আয়পত্তরের দশা তাতে তাঁদের নুন আনতে পানতা ফুরোয়। আবার সকলকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগও সরকার দেয় না। সরকারি হাসপাতালে কিছু চিকিৎসা পরিষেবা মেলে বটে তবে তা পর্যাপ্ত নয় এবং বেশিরভাগ ওষুধ রোগীর পরিবারকে বাইরে থেকেই কিনতে হয়। বলা বাহুল্য, সেসব অবশ্যই আগুন দামে। ওষুধসহ চিকিৎসা পরিষেবা এমন একটি জিনিস, যা জন্ম থেকে মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত সব বয়সি, সব শ্রেণির মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক। তবে এগুলির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি বাড়ে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে—প্রবীণ নাগরিকদের তো প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী। অথচ বয়স্ক নাগরিকদের আর্থিক সামর্থ্য সবচেয়ে কম। কেননা, ওই বয়সে তাঁদের রোজগারের ক্ষমতা চলে যায় এবং বেশিরভাগ মানুষ পর্যাপ্ত পেনশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যেমন ইপিএস-৯৫ স্কিমে পেনশনের নামে একটি পরিবারকে মাসান্তে যে টাকা দেওয়া হয়, তার চেয়ে নির্মম রসিকতা এই ভূভারতে নেই! বছরের পর বছর দাবি জানিয়েও এই ক্ষেত্রের লক্ষ লক্ষ পরিবার এই অনাচার দূর করতে পারেনি। সরকার যথারীতি বোবা-কালার মতোই আচরণ করে চলেছে। দারিদ্র্যসীমার নীচের পরিবারগুলির জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিও এই মাগ্গিগন্ডার বাজারে প্রহসন মাত্র। এমনই করুণ যে ভারতের পরিস্থিতি সেই দেশের সরকারের তরফে ওষুধ কোম্পানিগুলির আজগুবি আবদার লাগাতার মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানানোর ভাষা সত্যিই কম পড়ে। সংস্থাগুলির খরচ কমানোর আরও হাজারো খাত রয়েছে। তারা যদি নিজের থেকেই সেসব দিকে নজর না দেয় সরকারের উচিত সেগুলি নির্দেশ করা। নানা অজুহাতে ওষুধের মতো জীবনদায়ী জিনিসের দামবৃদ্ধির দাবি কখনোই মেনে নেওয়া উচিত নয়। সরকারও যদি ওষুধ কোম্পানিগুলির সঙ্গে অহরহ এমন সংগত করে চলে, তবে ধরে নিতে হবে যে গরিব-মধ্যবিত্তের জীবনের দাম এই সরকারের কাছে বণিকের তুলনায় তুচ্ছ! এই বেনিয়ার সরকার জনগণ চায় না।
1d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধায় চিন্তা ও উদ্বেগ। বেকারদের ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মপ্রাপ্তির প্রবল যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৩ টাকা৮৪.৯৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.০৬ টাকা১১১.৮৬ টাকা
ইউরো৮৯.৯১ টাকা৯৩.৩২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা