সম্পাদকীয়

ত্র্যহস্পর্শে জেরবার

সকলের জন্য শিক্ষা, শিক্ষান্তে কাজ, অথবা লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে—বাল্য বয়সে শেখা এসব স্বপ্ন দেখা মোদি জমানায় ভুলতে বসেছে যুব সমাজ। নতুন কাজ তো দূর অস্ত, এখন আজকে কাজ থাকলেও কালকের গ্যারান্টি নেই। কিছু বছর আগেও লোকে বিশ্বাস করত, সরকারি চাকরি মানে নিশ্চিন্তে জীবন উতরে যাওয়ার চাবি হাতে পাওয়া। একমাত্র চুরি করে ধরা না পড়লে সরকারি চাকরি যাওয়ার আশঙ্কা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু মোদির ভারত দেখাচ্ছে শিক্ষা নয়, সরকারি চাকরি পাওয়াটাকে লটারি পাওয়ার মতো করে ভাবুক যুবসমাজ। চাকরি করলেও তার স্থায়িত্বের কোনও গ্যারান্টি দেবে না সরকার। তার মানে দাঁড়াল, এই আমলে সরকারি চাকরি পাওয়াটা কঠিন, কিন্তু তা পেলেও চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। অথচ দশ বছর আগে বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এক লাফে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার থেকে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি। তারপর দু’দফায় মোট দশ বছরের শাসনকালে তাঁর সরকারের অবদান হল, কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে দশ লক্ষ শূন্যপদ তৈরি। পাশাপাশি বেকারত্বের হারে গত ৪৫ বছরের রেকর্ড করে ফেলা! প্রধানমন্ত্রী বুক ঠুকে বলতেই পারেন, দেশে এখন বেকারদের ৮০ শতাংশই যুবক-যুবতী। এঁদের মধ্যে শিক্ষিত বেকারের হার ২০০০ সালে ছিল ৩৫.২ শতাংশ, যা তাঁর সরকারের নৈপুণ্যে ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫.৭ শতাংশে। ঘটনা হল, ভারতে এখন নিরক্ষর মানুষের কাজের সুযোগ নাকি বেশি। অসংগঠিত ঠিকা কাজের রমরমা। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২ সালের তুলনায় বেকারের সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ। যা দেখে বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছে, এটাই মোদির ‘গ্যারান্টি’। প্রধানমন্ত্রী কিংবা শাসক গোষ্ঠীর কেষ্টবিষ্টুরা এই জ্বলন্ত ও ভয়াবহ সমস্যা নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য না করলেও সরকারের এক প্রথম সারির কর্তাই আসল কথাটা বলে দিয়েছেন, বেকারত্বের মতো সমস্যা সমাধানের চেয়ে রোগ নির্ণয় করা সহজ। ‘আচ্ছে দিন’-এর এর চেয়ে ভালো উদাহরণ আর কী হতে পারে!
তীব্র বেকারত্বের এই ভয়াবহ ছবির পাশাপাশি চলছে দেদার কর্মী সংকোচন। গত কয়েক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে ব্যাপক কর্মী সংকোচন করেছে কেন্দ্র। মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের নিরিখে, দেশের প্রথম সারির ১৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মধ্যে ১২টিতে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে কর্মী সংখ্যা কমানো হয়েছে। কোল ইন্ডিয়া, স্টেট ব্যাঙ্ক, ‘হ্যাল’ সহ ১২টি সংস্থায় মাত্র এক বছরে কর্মী সংখ্যা কমেছে ২৪ হাজারেরও বেশি। একই ছবি ধরা পড়েছে ব্যাঙ্ক থেকে খনি সর্বত্র। ধরা যাক, ব্যাঙ্কের কথা। প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিতে সত্তরের দশকে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এর ৪০-৪২ বছর পর মনমোহন সিংয়ের জমানায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা ছিল ২৭টি। কিন্তু গোটা রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রকেই বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার যে নীতি নিয়েছে মোদি সরকার তার জেরে এখন সরকারি ব্যাঙ্কের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২টি। একটির সঙ্গে আরেকটিকে যুক্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা কমিয়ে ৪ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে আগাম জানিয়ে রেখেছে মোদি সরকার। এই সংযুক্তিকরণের ফলে ব্যাঙ্ক ও তার শাখা সংখ্যা যেমন কমেছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে কর্মী সংখ্যাও। ২০১৪ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মিলিত কর্মী সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ। দশ বছরে তা দেড় লক্ষ কমে গিয়েছে! সবচেয়ে বেশি কমেছে করণিকের সংখ্যা। এটা মুদ্রার এক দিক। অন্যদিকে এই সময়কালে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে কর্মী সংখ্যা ৩ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ। বলাই বাহুল্য এইসব ব্যাঙ্কের সংখ্যাও বেড়েছে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, সরকারি ক্ষেত্রকে গলা টিপে হত্যা করে বেসরকারি ক্ষেত্রকে উৎসাহ দেওয়া।
বেকারত্ব, কর্মী সংকোচনের পাশাপাশি আর এক বড় সমস্যা শূন্যপদ। তথ্য বলছে, কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসে বর্তমানে দশ লক্ষ শূন্যপদ রয়েছে। শূন্যপদের নিরিখে প্রথম তিনটি স্থান দখল করে নিয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিন দপ্তর, যথাক্রমে রেল, প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সবচেয়ে বেশি রেলে, শূন্যপদের সংখ্যা ৩ লক্ষ। লক্ষণীয় বিষয় হল, রেলযাত্রীদের সুরক্ষা দেওয়া যাদের কাজ সেখানেই খালি পদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি! এই কর্মীর অভাব এবং মূলত পরিকাঠামোর অভাবের কারণে দেশে রেল দুর্ঘটনা এক নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনও বড় রেল দুর্ঘটনা হলেই শূন্যপদ পূরণের প্রতিশ্রুতির কথা শোনা যায় রেলমন্ত্রকের কর্তাদের মুখে। দশ বছরে এমন প্রতিশ্রুতির কথা শোনা গিয়েছে বারবার। তবু শুধু এই একটা মন্ত্রকেই তিন লক্ষ শূন্যপদ পড়ে রয়েছে। এটি উদাহরণ মাত্র। তাই বলতেই হয়, মোদি জমানার ‘অবদান’ হল, বেকারত্ব, শূন্যপদ ও কর্মী সংকোচন। এই ত্র্যহস্পর্শে মানুষের দুর্দশার যখন অন্ত নেই তখন ‘গ্যারান্টির’ ঘনঘটা সমানে চলছে। যা আসলে বাস্তব সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর কৌশল মাত্র।
14d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা