সম্পাদকীয়

প্রতিশ্রুতি ও কঠিন বাস্তব

এই আগুন নেভার নয়! কাঁচা আনাজ থেকে রান্না করা খাবার— আগুনে দামের হাত থেকে রেহাই নেই আম জনতার। কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কখনও আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কখনও প্রশাসনের অপদার্থতায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলা পণ্যসামগ্রীর দাম যেন বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো অনিবার্য, অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের এর থেকে বুঝি মুক্তি নেই! গ্রীষ্মের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষাকাল বিদায় নিয়েছে। যদিও নানাবিধ নিম্নচাপের জেরে এই শরতেও বৃষ্টির ভ্রুকুটি তাড়া করে বেড়াচ্ছে। যার জেরে আলু, পটোল, বেগুন, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়শের মতো আনাজপাতির দাম যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, স্মরণকালের মধ্যে তার নজির মেলা ভার। এই লাগামছাড়া দাম বৃদ্ধির নিট ফল হল, রান্না করা খাবারের থালা সাজাতে নাভিশ্বাস উঠছে অনেকের। খবরে প্রকাশ, গত এক বছরে নিরামিষ খাবারের থালির দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ। প্রতিমাসে খাবারের দাম বাড়া-কমা নিয়ে সমীক্ষা চালায় ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ক্রিসিল। তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এক থালা নিরামিষ খাবারের দাম ছিল গড়ে ২৮ টাকা ১০ পয়সা। ২০২৪-এর সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৩১ টাকা ৩০ পয়সা। এই নিরামিষ থালির মধ্যে ধরা হয়েছে রুটি, ভাত, আলু, টম্যাটো ও পেঁয়াজের তরকারি, ডাল, দই ও স্যালাড। এর কারণ হিসেবে সংস্থাটি জানিয়েছে, গত এক বছরে পেঁয়াজ, আলু ও টম্যাটোর দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৫৩, ৫০ ও ১৮ শতাংশ। রবি ফসল হিসেবে পেঁয়াজের উৎপাদন হ্রাস, পাঁচ মাসে অসময়ে বৃষ্টির কারণে আলু চাষে ক্ষতি এবং অতিবৃষ্টির কারণে টম্যাটোর উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে নিরামিষ থালির। তবে এই সময়ে মুরগির মাংসের দাম প্রায় ১৩ শতাংশ কমে যাওয়ায় আমিষ থালির দাম কমেছে প্রায় ২ শতাংশ। 
আনাজের দাম বৃদ্ধির গুণাগার দিতে হচ্ছে আম জনতাকে। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায়, আম জনতার এই সর্বনাশে পৌষ মাস দেখা দিয়েছে কৃষক সমাজের? এমন সরলীকরণ করলে অবশ্য অঙ্কে ডাহা ফেল। কারণ খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, খুচরো বাজার থেকে যে দামে পণ্য কিনছে ক্রেতা, চাষিরা গড়ে তার ৪০ শতাংশ দামও পাচ্ছে না! যেমন আলুতে ১০০ টাকার মধ্যে কৃষকের প্রাপ্তি ৩৬.৭ শতাংশ, পেঁয়াজে ৩৬.২ শতাংশ, টম্যাটোয় ৩৩.৫ শতাংশ। আবার কলায় প্রাপ্তি ৩০.৮ শতাংশ, আমে ৪২ শতাংশ ইত্যাদি। তার মানে, পণ্যের বাজার-দামের সিংহভাগ লুট করে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা, যারা কৃষক ও ক্রেতার মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছে। অথচ কৃষক যাতে ফসলের ন্যায্যমূল্য পায়, ক্রেতা যাতে স্থানীয় বাজার থেকে সঠিক মূল্যে পণ্য কিনতে পারে—তা নিশ্চিত করতে যোগসূত্রকারীর ভূমিকা পালন করার কথা প্রশাসনের। কেন্দ্র-রাজ্য দু’পক্ষই যথাযথভাবে এই দায়িত্ব পালন করলে দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারত। কিন্তু এই মধ্যস্বত্বভোগী দালালরাজ একটা প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা নেওয়ায় তার ফল ভুগতে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলকে। যদিও ভোট এলে ‘কৃষক দরদি’ সাজতে প্রতিশ্রুতির কোনও ফাঁক রাখে না মোদি সরকার। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির ঘোষণা ছিল, ক্ষমতায় এলে তিন বছরের মধ্যে কৃষকের আয় দ্বিগুণ হবে। ঘটনা হল, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে একজন কৃষকের মাথাপিছু আয় ছিল, ৯৬ হাজার ৭০৩ টাকা। ২০২২-২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে বছরে ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৩৭৮ টাকা। এই সময়কালে মূল্যবৃদ্ধির হার যোগ করলে আয় কি দ্বিগুণ হল? রিপোর্ট বলছে, মনমোহন সিংয়ের আমলে দশ বছরে কৃষকের আয় বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ৩ শতাংশ। মোদি জমানায় তা কমে হয়েছে ২.৮ শতাংশ (২০২১ সালে)। তার মানে, প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবে বিস্তর ফারাক। 
গোটা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও আনাজের দাম বৃদ্ধি গরিব-মধ্যবিত্তের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষত উৎসব ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলায় শেষমেশ এই দাম বৃদ্ধির হার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেউ জানে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পথে নেমেছে রাজ্য সরকার। একদিকে পণ্যের জোগান স্বাভাবিক রাখা, অন্যদিকে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা—এই দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই এখন রাজ্য সরকারের লক্ষ্য। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে এখন গরমের সব্জির উৎপাদন শেষের মুখে, চাষিদের জোগানেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। আবার লঙ্কা, টম্যাটো, ফুলকপি ও বাঁধাকপি, পেঁয়াজ সহ একাধিক পণ্য আসছে ভিন রাজ্য থেকে। ফলে দাম বেশি হচ্ছে। এরই সঙ্গে নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের বিষয়টি চিন্তা বাড়াচ্ছে। যদিও পাইকারির সঙ্গে খুচরো বাজারের সব্জির দামের ফারাক কমাতে নিয়মিত নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকারের তৈরি টাস্ক ফোর্স। যা আশার কথা। রাজ্য সরকারের এই সদিচ্ছা ও তৎপরতা সত্ত্বেও কাজ কতটা হবে, মানুষ কতটা রিলিফ পাবে—তা নিয়ে অবশ্য সংশয়ের অবকাশ আছে।
10d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধায় চিন্তা ও উদ্বেগ। বেকারদের ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মপ্রাপ্তির প্রবল যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৩ টাকা৮৪.৯৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.০৬ টাকা১১১.৮৬ টাকা
ইউরো৮৯.৯১ টাকা৯৩.৩২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা