সম্পাদকীয়

গোড়ায় গলদ

নিত্যদিনের জীবনধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দামি কী? যে কোনও পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর হবে একটাই, চিকিৎসা খরচ। এবং, এই নিয়ে বিতর্কের কোনও অবকাশ নেই। একদিকে ওষুধের দাম বছরে তিন-চার বার বাড়ছে, এবং কিছু নামী-দামি কোম্পানির ততোধিক জনপ্রিয় ওষুধ গুণমানের পরীক্ষায় ‘পাশ’ করতে পারছে না, বাজার ছেয়ে যাচ্ছে ‘জাল’ ওষুধে! অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ বাড়ছে বছরে গড়ে ২০ শতাংশ হারে। তারসঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম। ‘আচ্ছে দিনের’ স্বপ্ন দেখানো মোদি জমানায় মূল্যস্ফীতির এমন নজির অনেকটা তাল গাছের মতো, দৈনন্দিন সব খরচকে যা ছাপিয়ে গিয়েছে। অথচ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রকাশ, খাদ্যের অভাব, ভেজাল খাদ্য, অপুষ্টি, দূষণের মতো কারণে প্রতি বছর ‘স্বাস্থ্যে অবনতি’ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রায়শই দেখা যায়, আশি বছরের বৃদ্ধের সঙ্গে আট বছরের শৈশবও এখন কোনও না কোনও অসুখে আক্রান্ত। এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জেনে-বুঝে-দেখেও কার্যত ভাবলেশহীন কেন্দ্রীয় সরকার! যদিও শিক্ষার মতো স্বাস্থ্যও দেশের সব নাগরিকের সংবিধান স্বীকৃত অধিকার।  বেশিদিন আগের কথা নয়, চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৮০০টি ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এদেশে ২০২২ সালে জীবনদায়ী ওষুধের দাম বেড়েছে ১০.৮ শতাংশ। ২০২৩-এ ফের ১২.১২ শতাংশ। জ্বর গায়ে ব্যথা থেকে ডায়াবেটিস, ব্লাড ক্যান্সারের তো বিভিন্ন ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। খবরে প্রকাশ, ২০১১ সালে জাতীয় অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের একটি তালিকা তৈরি হয়। ২০১২ সালে তার ভিত্তিতে নতুন মূল্যনিয়ন্ত্রণ বিধি প্রস্তুত হয়, যা কার্যকর হয় ২০১৩ সালে। এই আইনে বলা হয়, প্রতি বছর অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ওষুধ ১০ শতাংশ হারে বাড়বে। কিন্তু ২০২৩ সালে এর উপর ১২ থেকে ১৮ শতাংশ জিএসটি চাপিয়ে দেয় কেন্দ্র। ফলে নাগাড়ে বেড়ে চলেছে ওষুধের দাম।
এই বারবার দামবৃদ্ধির অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে আরও এক অঙ্ক। গত লোকসভা ভোটের আগে  দেখা যায়, দেশের মোট ৩৫টি ওষুধ কোম্পানি ১১টি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী বন্ডে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে। প্রশ্নাতীতভাবেই এর সিংহভাগ পেয়েছে বিজেপি। এই সংস্থাগুলি মানুষের রোজকার ওষুধের নির্মাতা ও জোগানদার। এক অজানা কারণে এদের ওষুধের দাম এমনকী ৫০ শতাংশ পর্যন্তও বেড়ে যায়! নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে এমন ‘গোপন’ লেনদেনের অভিযোগেই দেশের অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি কর্ণাটকের এক থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। কিন্তু শুধুই কি ওষুধের দামবৃদ্ধি? দেখা গিয়েছে, দাতা সংস্থাগুলির কোনও কোনও ওষুধের গুণমান নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এদের মধ্যে কোভিডের টিকা প্রস্তুতকারী এক সংস্থাও রয়েছে। অভিযোগ, শাসকগোষ্ঠীকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে এরা  রেহাই পেতে চেয়েছে। ওষুধের গুণমান নিয়ে আরও এক কুকীর্তি সামনে এসেছে সম্প্রতি। ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোল সংস্থা জানিয়েছে, ৫০টিরও বেশি ওষুধ গুণমান নির্ধারণের পরীক্ষায় ‘পাশ’ করতে পারেনি। অথচ এইসব ওষুধ বাজারে রমরমিয়ে চলছে! গুণমান পরীক্ষায় ফেল মানে ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠা। চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, এই ধরনের ওষুধ থেকে রোগী সুস্থ হবেন না, দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ চলবে, তাতে চিকিৎসা খরচও বাড়বে। কিছু নামী কোম্পানির এমন ‘ফেল’ করা ওষুধের সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলছে জাল ওষুধের কারবার। হুবহু একইরকম দেখতে, কিন্তু খেলে কাজ হবে না। উল্টে বিপদ বাড়তে পারে। ছেলেখেলার এরচেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে। অথচ যে কোনও জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে মানুষের যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার বিষয়টিকে নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রেও মোদি সরকার ‘ডাহা ফেল’। ফলে আতান্তরে গরিব মধ্যবিত্ত।
সরকারি বদান্যতায় ওষুধের ব্যবসায় আর জি করের ‘সন্দীপ ঘোষ’দের মতো মানুষদের এই দাপাদাপির সঙ্গেই মোদি জমানায় বেপরোয়াভাবে বেড়ে চলেছে সাধারণের চিকিৎসাখরচও। একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য বিমা সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন বছরে চিকিৎসাখাতে খরচ ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। আবার অন্য এক সংস্থার মতে, খরচ বৃদ্ধির হার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। শুধু ওষুধ ইঞ্জেকশনই নয়, হাসপাতাল, নার্সিংহোমে ঢুকলে নানা কিসিমের টেস্ট, ডাক্তারদের ফিজ, ভর্তি হলে শয্যা খরচ, অস্ত্রোপচারের খরচ— সব মিলিয়ে কোনও কোনও পাড়ার পুজো বাজেটকেও তা হার মানাতে পারে। আম জনতার কথায়, প্রতিদিন প্রকাশ্য দিবালোকে চিকিৎসা নিয়ে ‘ডাকাতি’ চলছে। ‘লুট’ চলছে। চিকিৎসা এখন একটা অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা, যেখানে পরিষেবাটাই গৌণ। তাই মোদির ‘বিকশিত’ ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বহু মানুষকে ধারবাকি করেই খরচ মেটাতে হচ্ছে। গরিব মানুষ দেনার দায়ে ডুবে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে খরচের ধাক্কা সামলাতে আম জনতার নাভিশ্বাস উঠলেও সুরাহার কোনও ‘গ্যারান্টির’ কথা শোনা যাচ্ছে না দেশশাসকের মুখে!
17d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধায় চিন্তা ও উদ্বেগ। বেকারদের ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মপ্রাপ্তির প্রবল যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৩ টাকা৮৪.৯৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.০৬ টাকা১১১.৮৬ টাকা
ইউরো৮৯.৯১ টাকা৯৩.৩২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা