সম্পাদকীয়

এবার নাম হোক ‘বাংলা’

আরও একটা লড়াই জিতলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, দাবি ‘ছিনিয়ে নেওয়া’ গেল। ‘মোদের গরব মোদের আশা’ বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিল কেন্দ্র। দেবীপক্ষের সূচনালগ্নে বঙ্গবাসী ও বঙ্গভাষীর জন্য এই প্রাপ্তি আহ্লাদিত হওয়ার মতোই। বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে বহুকাল আগেই। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপনের নেপথ্যে রয়েছে অধুনা বাংলাদেশের এক রক্তঝরা ইতিহাস। এদেশে বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন একটি গবেষণাধর্মী রিপোর্ট, যেখানে বাংলা ভাষার আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের কথা বলা ছিল। গবেষণায় চর্যাগীতির আগে বাংলাভাষার অস্তিত্বের প্রামাণ্য দলিলের কথাও উঠে আসে। জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে বাংলা ব্যাকরণ, হরফ ও বাক্যগঠনের অস্তিত্বের কথাও যুক্তি হিসেবে দেওয়া হয়। দেশে হিন্দির পর সর্বোচ্চ কথিত ভাষা হিসেবে বাংলার ব্যবহার যা বিশ্বের নিরিখে সপ্তম স্থানে রয়েছে। কারণ, বিশ্বের ৩০ কোটি মানুষ এই বাংলা ভাষাতেই কথা বলে। এমন এক সুপ্রাচীন ঐতিহ্যশালী ভাষাকে তাই জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। তথ্যের খাতিরে জানিয়ে রাখা যাক, মনমোহন সিংয়ের আমলে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তামিল, সংস্কৃত, তেলুগু, কন্নড়, মালয়লাম ও ওড়িয়ার মতো ছটি ভাষা ধ্রুপদী স্বীকৃতি পেয়েছিল। মোদি জমানায় এই প্রথম বাংলা ছাড়াও ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পেল পালি, প্রাকৃত, মারাঠা ও অসমিয়া ভাষা। স্বীকৃতির মাপকাঠি হিসেবে দেড় থেকে দু’ হাজার বছরের ভাষার ইতিহাস ও নথি, প্রাচীন কবিতা ও গদ্য সাহিত্যের উপস্থিতির শর্ত দেওয়া ছিল। বলাবাহুল্য, প্রতিটি মাপকাঠিকে ছাপিয়ে গিয়েছে আ মরি বাংলা ভাষা। এই স্বীকৃতির অর্থ, সংশ্লিষ্ট ভাষা শিক্ষা ও গবেষণায় নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হওয়া। আশা করা যায়, ধ্রুপদী ভাষার প্রাচীন লেখাপত্র সংরক্ষণ, অনুবাদ, প্রকাশ ও ডিজিটাল সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমেও নিশ্চয়ই ধ্রুপদী ভাষাশিক্ষায় আগ্রহ বাড়বে। 
কিন্তু এই আনন্দের দিনে প্রশ্নটা আরও বড় আকারে সামনে চলে আসছে। এই রাজ্যে বাংলা ভাষা তার প্রাপ্য মর্যাদা দিনকে দিন হারিয়ে ফেলছে না তো? সামাজিক ক্ষেত্রে, তথাকথিত শিক্ষিত মহলেও কি বাংলা ভাষার ব্যবহারে দৈন্য ক্রমবর্ধমান নয়? সমাজের একটা বড় অংশ, বিশেষত একবিংশ শতকে তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ কি শুদ্ধ বাংলা বলতে, লিখতে, পড়তে অপারগ নয়? অনেক ঘোষণা সত্ত্বেও আজও সরকারি নির্দেশিকা, অফিস আদালতে কাজকর্ম, পণ্য ও পরিষেবার বিজ্ঞাপন, সাইনবোর্ডে কত শতাংশে মাতৃভাষা জ্বলজ্বল করে? আবার রাজনীতির প্রচার থেকে অনুষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তি, নানা অনুষ্ঠানের ঘোষণায় কি আজও নির্ভুল বাংলা ভাষার অনটন নজরে পড়ে না? অথচ আমাদের এই রাজ্যে বাংলাভাষার ব্যবহার নিয়ে কম-বেশি আন্দোলন কম হয়নি। এই বিষয়ে সরকারি উদ্যোগও মাঝেমধ্যে চোখে পড়েছে। কিন্তু তা যৎসামান্যই। বাংলা ভাষা ব্যবহারে কোথাও কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। বরং বাংলা-হিন্দি-ইংরেজির এক পাঁচমেশালি সংস্কৃতি যেন গ্রাস করে নিচ্ছে সবটা! তাই নতুন এই স্বীকৃতি লাভে গা-ভাসানোর পাশাপাশি আত্মসমালোচনাও ভীষণভাবে জরুরি। এই ধ্রুপদী স্বীকৃত ভাষাকে প্রচার ও প্রসারে কীভাবে আরও বেশি করে কাজে লাগানো যায় সেই অনুশীলন শুরু হোক আজ থেকেই। একমাত্র তাহলেই বাংলা ভাষা তার প্রকৃত মর্যাদা পাবে। 
এই প্রসঙ্গেই ফের উঠে এসেছে রাজ্যের নামবদলের বিষয়টি। ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী ডব্লু দিয়ে শুরু পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে মমতার সরকার বারবার দরবার করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে। রাজ্য চায়, ইংরেজি, হিন্দি ও বাংলা তিনটি ভাষাতেই রাজ্যের নাম হোক ‘বাংলা’। নাম নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় দু’বার প্রস্তাব পাশ হয়েছে। নাম পরিবর্তন নিয়ে কেন্দ্রের তরফে যা যা তথ্য চাওয়া হয়েছিল তার সবই লিখিত আকারে পেশ করেছে রাজ্য। তবু কোনও এক অজানা কারণে রাজ্যের প্রস্তাব বছরের পর বছর ঠান্ডা ঘরে ফেলে রেখেছে মোদি সরকার। তাই হয়তো দুর্গাপুজোর ঠিক মুখে কেন্দ্রের তরফে বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গটিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের রাজনৈতিক ‘কৌশল’ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাঁরা মনে করছেন, বাঙালি মননে জায়গা পেতেই পুজোর এই ‘উপহার’। আসলে হিন্দি বলয়ের পার্টি হিসেবে পরিচিত বিজেপি ও সেইদলের নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে দূরত্ব কমাতে চাইছে। কেন্দ্রের উদ্দেশ্য যাই হোক, এই স্বীকৃতি বাংলার ন্যায্য প্রাপ্তি। তাই এখন বাংলা ভাষার জাতীয় স্বীকৃতি মেলায় রাজ্যের নাম বদলের দাবিতেও ফের সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের ঘুম ভাঙবে কবে তা অবশ্য কেউ জানে না।
3Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মে উন্নতি। ব্যবসায় গতি বৃদ্ধি। ব্যবসা ক্ষেত্রে লগ্নিবৃদ্ধির প্রচেষ্টায় সাফল্য। সন্তান বিষয়ে কোনও সুখবর পেতে...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.৯৩ টাকা৮৬.৬৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.৭২ টাকা১০৮.৪৪ টাকা
ইউরো৮৬.৮১ টাকা৯০.১৭ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা