সম্পাদকীয়

হম্বিতম্বিই সার!

ভ্রাতৃভাব ভাবি মনে, দেখ দেশবাসিগণে,/ প্রেমপূর্ণ নয়ন মেলিয়া।/ কতরূপ স্নেহ করি, দেশের কুকুর ধরি,/ বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া।।’ লিখেছিলেন উনিশ শতকের কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। তাঁর এই সাহসী স্বদেশ চেতনার প্রশংসা প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘মাতৃসম মাতৃভাষা’র কথাও উত্থাপন করেন। তাঁর আক্ষেপ, ঈশ্বর গুপ্তের পরের প্রজন্মও এই জরুরি সত্য উপলব্ধি করেনি, বরং উল্টো দিকেই মুখ করে ছিল। তাঁর এই আক্ষেপের কথা এখন বারবার মনে আসে অনেকের। তা ফের এল আর জি কর কাণ্ডের তদন্তে কলকাতা পুলিসের নীরব ভূমিকার পাশে ভারিক্কি নামের সিবিআইয়ের লম্ফঝম্প দেখে। আর জি করে তরুণী ডাক্তারকে নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে গোটা রাজ্য তো বটেই, সারা দেশ, এমনকী বিশ্বজুড়ে বঙ্গসন্তানদের মধ্যে তোলপাড় চলে। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তদন্তে নামে কলকাতা পুলিস। মূল সন্দেহভাজনকে অতিদ্রুত গ্রেপ্তার করে এবং পুরো অপরাধের কিনারাও তাড়াতাড়ি করে ফেলার আশায় ছিল তারা। কিন্তু নাগরিক সমাজকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের উপর অনাস্থা দেখায়। মমতা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। পুলিস ও স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বুঝে ওই দপ্তর দুটিও তিনি নিজের হাতে রেখেছেন। এই তদন্তে দপ্তর দুটির ভূমিকাই সবচেয়ে বড়। তাই বিরোধীরা সরাসরি এই অভিযোগই তুলল যে, মুখ্যমন্ত্রী প্রকৃত দোষীদের বাঁচাবার চেষ্টা করছেন। কলকাতা পুলিসকে দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত কোনোভাবেই নিরপেক্ষ হবে না। চিহ্নিত হবে না আসল দোষীরা এবং তারা শাস্তি পাওয়া তো দূর। দাবি উঠল—অতএব, তদন্তের দায়িত্ব দিতে হবে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই’কে। এই দাবিতে তীব্র ‘গণআন্দোলন’ গড়ে উঠল—‘রাতদখল’, ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ‘উই ডিমান্ড জাস্টিস’ প্রভৃতি নানা নামে। উত্তাল হয়ে উঠল বাংলার নানা প্রান্ত। মৃতের পরিবারও প্রভাবিত হল তাতে। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট এবং কলকাতা পুলিসকে বলল, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সবরকমে সহযোগিতা সহায়তা করতে। স্পর্শকাতর বিষয়টিতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে হস্তক্ষেপ করল শীর্ষ আদালতও।
আদালতের নির্দেশ মতোই যাবতীয় তদন্ত চলা সত্ত্বেও আর জি কর ইস্যুতে আন্দোলনে ভাটা পড়েনি। মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে এবং রাজ্যের মুখ্যসচিবও বার বার সুবিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। এমনকী দোষীর সর্বোচ্চ সাজা দিতে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততম করার জন্য মমতার সরকার কিছুদিন আগে রাজ্য বিধানসভায় ‘অপরাজিতা’ নামে নতুন একটি বিলও পাস করিয়েছে। কিন্তু ভবি ভুলবার নয়। জুনিয়র ডাক্তারদের টানা কর্মবিরতি চলেছে দীর্ঘদিন। সঙ্গে ছিল সিনিয়র ডাক্তারদেরও সমর্থন। সম্প্রতি জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি উঠে গেলেও তাঁদের একাংশ ধর্মতলায় রাস্তার উপরেই শুরু করেছেন নতুন করে ‘অনশন’ আন্দোলন। দাবি একাধিক হলেও, বলা হচ্ছে মূল দাবি—অভয়া বা তিলোত্তমার ‘বিচার চাই’। তাঁদের মুহুর্মুহু স্লোগান চলছে, ‘অভয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ... ইত্যাদি।
অবশেষে সোমবার কী দেখলাম আমরা—আর জি কর ধর্ষণ-খুন মামলায় মাত্র ২৪ ঘণ্টায় লালবাজার যা করেছিল, ৫৫ দিন পর তদন্তের সেই অঙ্কেই চার্জশিট পেশ করল সিবিআই। শিয়ালদহ আদালতে মস্ত চার্জশিটে কেন্দ্রীয় এজেন্সি জানিয়ে দিল, খুন-ধর্ষণ করেছে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। ধর্ষণ-খুনের তদন্তে নতুন কোনও নাম উঠে আসেনি। আর তারই প্রাথমিক সিলমোহর পড়েছে চার্জশিটে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৬ নম্বর ধারায় চার্জশিট দেওয়ায় এটা স্পষ্ট যে, তরুণী গণধর্ষণের শিকার হননি। কেন এই ঘটনা ঘটাল সে? ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, মত্ত থাকাতেই এই নৃশংস অপরাধ ঘটিয়ে ফেলেছিল সঞ্জয়। একই তথ্য প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছিল কলকাতা পুলিসও। ‘আজিও নাকি কলিকাতায় এমন অনেক কৃতবিদ্য নরাধম আছে, যাহারা মাতৃভাষাকে ঘৃণা করে, যে তাহার অনুশীলন করে, তাহাকেও ঘৃণা করে, এবং আপনাকে মাতৃভাষা অনুশীলনে পরাঙ্মুখ ইংরেজিনবীশ বলিয়া পরিচয় দিয়া, আপনার গৌরব বৃদ্ধির চেষ্টা পায়। যখন এই মহাত্মারা সমাজে আদৃত, তখন এ সমাজ ঈশ্বর গুপ্তের সমকক্ষ হইবার অনেক বিলম্ব আছে।’ বঙ্কিমচন্দ্রের মৃত্যুর ১৩০ বছর পরেও বঙ্গসন্তান দাঁড়িয়ে আছে যেন একই জায়গায়। বাংলার কোনোকিছুই তার কাছে উঁচু দরের বা খাঁটি বলে মনে হয় না। আমাদের জন্য যা-কিছু ভালো সবই বহির্বঙ্গে, বিদেশি হলে তো কথাই নেই। যেখানে নিদেন পক্ষে বিদেশ ছুঁয়ে দেখার সুযোগ নেই, সেখানে অন্তত দিল্লি, বম্বের জিনিসই বাঙালির কাছে ‘বেটার’। হবে নাই-বা কেন? ১৯১১ সাল অব্দি কলকাতাই যে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল। কেবল বিলিতি জিনিসেই স্বর্গসুখ অনুভবের সেই হ্যাংওভার আজও নিশ্চয় কাটিয়ে উঠতে পারিনি আমরা। সুন্দরভাবে উল্টে নিয়েছি ঈশ্বরবাক্য—‘বিদেশের কুকুর ধরি/ দেশের ঠাকুর ফেলিয়া’।
9d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধায় চিন্তা ও উদ্বেগ। বেকারদের ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মপ্রাপ্তির প্রবল যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৩ টাকা৮৪.৯৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.০৬ টাকা১১১.৮৬ টাকা
ইউরো৮৯.৯১ টাকা৯৩.৩২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা