সম্পাদকীয়

দাম নিয়ন্ত্রণে পথে প্রশাসন

আর জি কর কাণ্ডের জেরে জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি চালানোয় মাসাধিক কাল ধরে সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা কার্যত লাটে উঠেছিল। সেই অচল অবস্থা কাটলেও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি এবং তার কারণে খাদ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বঙ্গবাসী। পুজোর মুখে এই অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কোমর বেঁধে নেমেছে সরকার। একদিকে খোলাবাজারে সব্জির অগ্নিমূল্য থেকে আম জনতাকে স্বস্তি দিতে চাষির ‘দুয়ারে’ পৌঁছে যাবে প্রশাসন। উদ্দেশ্য হল, তাঁদের উৎপাদিত পণ্য কিনে নিয়ে তা ন্যায্য মূল্যে সাধারণের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করা। এতে চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রীর সর্বোচ্চ মূল্য পাবেন। উৎপাদক ও ক্রেতার মধ্যে সরকার সরাসরি সেতুবন্ধনের কাজ করলে কালোবাজারির সম্ভাবনাও দূর হবে। সাধু উদ্যোগ। অন্যদিকে, এই ব্যবস্থার পরেও খোলাবাজারে সব্জির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি টাস্ক ফোর্স নিয়মিত পরিদর্শন চালাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা ডিভিসি মাত্রাতিরিক্ত জল ছাড়ায় দক্ষিণবঙ্গের দুই মেদিনীপুর, হুগলি ও হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলের নীচে রয়েছে। এতে যেমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে তেমনই জলে তলিয়ে গিয়েছে বহু প্রাণ, ঘরবাড়ি। সরকারের প্রাথমিক হিসাব হল, প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ এই ‘তৈরি করা’ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ এখনও পরিষ্কার নয়। কিন্তু বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলকাতার খোলাবাজারে শাক-সব্জি, আনাজপাতি আসে মূলত দুই চব্বিশ পরগনা ও নদীয়া থেকে। দুই চব্বিশ পরগনা জেলায় বন্যার সেভাবে ভ্রুকুটি নেই বলেই হয়তো পাইকারি বাজারে পণ্যসামগ্রীর দামও এখনও তেমন চড়েনি।  অথচ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বন্যার তত্ত্ব খাড়া করে খুচরো ব্যবসায়ীদের একাংশ জোগানের অভাবের অভিযোগ তুলে ইচ্ছেমতো আনাজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে! যেমন জ্যোতি আলু এক কেজি ৩০-৩৫ টাকা। চন্দ্রমুখী আলু ৪০-৪৫ টাকা। বেগুন ৮০-১২০ টাকা। পটল ৬০-৮০ টাকা। টম্যাটো ৬০-৮০ টাকায় বিকচ্ছে। প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, অসাধু ব্যবসায়ীদের এই কারবারে এখনই রাশ টানতে না পারলে পুজোর মুখে খাদ্যসামগ্রীর দাম লাগাম ছাড়াতে পারে। ইতিমধ্যেই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ফড়েবাজ খতমে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। 
পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই দু’ভাবে পথে নামছে প্রশাসন। বলা ভালো, নেমে পড়েছে। যেমন সোমবার নবান্নে টাস্ক ফোর্স ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব। কারণ দাম নিয়ন্ত্রণে রাখাই এই মুহূর্তে প্রশাসনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বস্তুত এই লক্ষ্যে রবিবারই গড়িয়াহাট, লেক ও যদুবাবুর বাজারে হানা দেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। পরিস্থিতি কড়াভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এনফোর্সমেন্ট বিভাগকেও সতর্ক করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি তরফে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখন থেকে রোজই বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালাবেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। এর পাশাপাশি চাষিদের থেকে সরাসরি পণ্যসামগ্রী কিনে তা মূলত সরকারের সুফল বাংলা স্টলের মাধ্যমে বিক্রি করার পরিকল্পনা হয়েছে। এই স্টলের পাশাপাশি সব্জি নিয়ে থাকবে ভ্রাম্যমাণ গাড়িও। সরকার ইতিমধ্যে জনস্বার্থে বিভিন্ন আনাজের দাম ঠিক করে দিয়েছে। যেমন, আলু ২৭ টাকা, টম্যাটো ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, আদা ৮৫ টাকা, পটল ৪৫ টাকা, কাঁচালঙ্কা ৯৫ টাকা কেজি ইত্যাদি। এরপরেও অবশ্য প্রশ্ন থেকে যায়। কলকাতা এবং সংলগ্ন শহরাঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েক হাজার বাজার রয়েছে। প্রশ্ন হল, এই সমস্ত বাজারের দিকে সমানভাবে নজর দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? কারণ অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, নজরদারির ফাঁকফোকর গলেই বহু বাজারে দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই নজরদারির কাজ নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে কাজে লাগানো যুক্তিযুক্ত। তবেই সরকারের এই ইতিবাচক উদ্যোগ সফল হবে। 
দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্রতিবছরই ভরা বর্ষায় জলমগ্ন হয়। কিন্তু পড়শি ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাতে ডিভিসির জল এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে বন্যা ডেকে আনে তাও ফি বছরের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা হয়েছে অনেক। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, দুই দিনাজপুর ও মালদহে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, মুর্শিদাবাদে গঙ্গা-পদ্মা ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প ইত্যাদি। একটা শিশুও বোঝে যে, শত শত কোটি টাকার এই প্রকল্পগুলি এককভাবে কোনও রাজ্য সরকারের পক্ষে রূপায়ণ করা সম্ভব নয়। ঘটনা হল, রাজ্যের এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পগুলি কেন্দ্রের অনুমোদন পেয়েছে বহু আগেই। কিন্তু বরাদ্দ আসেনি এক পয়সাও। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ঘাটালের জন্য ১২৩৯ কোটি এবং দিনাজপুর-মালদার জন্য ৪৯৭ কোটি টাকার প্রকল্প আজও কেন্দ্রের ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বর্ডার এরিয়া প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি! এসব দেখেশুনে মনে হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ কি ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য নয়? যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের দায়িত্ব কি রাজনীতির লড়াইয়ে আটকে যাবে? এভাবে বঞ্চনা করার অধিকার কি কেন্দ্রের আছে? প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব সঙ্গত ও ন্যায্য প্রশ্নের উত্তর চায় রাজ্যবাসী।
24d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধায় চিন্তা ও উদ্বেগ। বেকারদের ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মপ্রাপ্তির প্রবল যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৩ টাকা৮৪.৯৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.০৬ টাকা১১১.৮৬ টাকা
ইউরো৮৯.৯১ টাকা৯৩.৩২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা