সম্পাদকীয়

সবার ভালোথাকার উৎসব

‘ভারতবর্ষে হিন্দুদিগের দুর্গাপূজা সকল পূজা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এই পূজাকে হিন্দুমাত্রেই অতিশয় শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। ইহাকে হিন্দুদের জাতীয় উৎসব বলা যাইতে পারে।’ মনে করতেন স্বামী অভেদানন্দ। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং পূর্ববঙ্গ বা আজকের বাংলাদেশে জগন্মাতা শ্রীশ্রীদুর্গাদেবী নানা নামে পুজো পান। কাশ্মীরে তিনি ‘অম্বা’, দাক্ষিণাত্যে পূজিতা হন ‘অম্বিকা’ নামে। ‘হিঙ্গলা’ ও ‘রুদ্রাণী’ রূপ তাঁর গুজরাতে। কান্যকুব্জ অঞ্চলে তিনি ভক্তদের কাছে মাতা ‘কল্যাণী’। উত্তর ভারতের নানা স্থানে যিনি ‘নবরাত্র’ নামে পুজো গ্রহণ করেন, তিনিই মিথিলার ‘উমা’। আর এই দেবীই আমাদের বঙ্গদেশের সকলের যেন রক্তমাংসের মা—মাদুর্গা। আজকের রাজনৈতিক-ভৌগোলিক মানচিত্র যাকে ‘বহির্ভারত’ বলে চিহ্নিত করে, প্রাচ্যদেশে তার একটি বিরাট অংশ প্রাচীনকালে ‘বৃহৎ ভারত’ নামেই খ্যাত ছিল। তার মধ্যে নেপাল, ভুটান, তিব্বত, কম্বোজ, চম্পা, যবদ্বীপ, এমনকী চীন ও জাপানের কিছু অঞ্চলেও এই দেবী ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধর্মপ্রাণ নরনারীর আরাধ্য ছিলেন। তার ঐতিহাসিক নিদর্শনের দেখা মেলে আজও। 
ঋগ্বেদে ‘দুর্গা’ নামটি পাওয়া যায় না বটে কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় যে ‘দেবীসূক্ত’ পাঠ করা হয় তা ঋগ্বেদ থেকেই গৃহীত। সেখানে জগন্মাতা আদ্যাশক্তি হলেন অগ্নিরূপা। বেদের যুগে দুর্গার প্রতিমা ছিল না। হব্যবাহী অগ্নিশিখাই ছিল দেবী দুর্গার রূপ। পরবর্তীকালে প্রচলিত প্রতিমার বর্ণ গ্রহণ করা হয়েছে তাঁর সেই অগ্নিরূপ থেকেই। পুরাণোক্ত দক্ষ-প্রজাপতি বহু যজ্ঞ করেছিলেন। তার মধ্যে ‘পার্বতী-দক্ষ’ যজ্ঞের উল্লেখ রয়েছে যজুর্বেদীয়-শতপথ-ব্রাহ্মণে। ওই যজ্ঞবেদির নাম ‘দক্ষতনয়া’। যে অগ্নি সর্বভূতে অন্তর্নিহিত ও বরেণ্য এবং পিতার ন্যায় সকলকে রক্ষা করেন—দক্ষতনয়া বেদি ধারণ করে সেই অগ্নিকে। বিভিন্ন পুরাণেও এই দক্ষতনয়াকে মহাদেবের পত্নী ‘সতী’ রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। শৌণকের ‘বৃহদ্দেবতা’ গ্রন্থে একই দেবীর—দুর্গা, অদিতি, বাক্, সরস্বতী প্রভৃতি নাম পাওয়া যায়। দেবতাদের অনুরোধে, বাগ্দেবী সেখানে সিংহরূপ ধারণ করেন। পণ্ডিতদের অনুমান, দুর্গাদেবীর বাহন সিংহ হয়তো সেখান থেকেই। ঋগ্বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি অভ্রভেদী তুষারাবৃত হিমাদ্রিশৃঙ্গের উপরে হৈমবতী-উমার তপ্তকাঞ্চনাভ উজ্জ্বল গৌরীমূর্তি দর্শন করেন। বাগ্দেবীরূপিণী দুর্গার মুখনিঃসৃত এইরূপ বাণীও শোনেন তিনি—‘আমি রুদ্র, বসু, আদিত্য ও বিশ্বদেবতা রূপে বিচরণ করি। আমি মিত্র, বরুণ, ইন্দ্র, অগ্নি এবং দুই অশ্বিনীকে ধারণ করি। আমি সোম, যাগ, ত্বষ্টা, পূষা ও ভগদিগকে ধারণ করি। এছাড়া যেসব যজমান দেবতাদের উদ্দেশে সোমযাগ করেন তাঁদেরকে যাগফলরূপ ঐশ্বর্য প্রদানের জন্য আমি ধারণ করি। আমি সমগ্র বিশ্বের রাজ্ঞী ও ধনদাত্রী। আমি প্রত্যক্ষ ব্রহ্মজ্ঞানরূপিণী এবং যেসব দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় তাঁদের মধ্যে আমিই প্রধান। সমস্ত প্রাণীর হৃদয়-আসনে নানাভাবে অধিষ্ঠিত আমি। বহু দেশে তারা আমার পুজো করে। সমস্ত প্রাণী যে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে, চোখ ভরে দেখে, প্রাণ ভরে শোনে, বেঁচে থাকার জন্য শ্বাসক্রিয়া এবং আরও সকল ইন্দ্রিয়ের কাজ সম্পন্ন করে—এই যাবতীয় শক্তি আমিই জোগাই। যারা আমার এই অন্তর্যামীরূপ উপলব্ধি করে না তারা হীন এবং ক্ষীণ হয়। আমি স্বয়ং এই ব্রহ্মবস্তু। ইন্দ্রসহ সমস্ত দেবতা এবং মনুষ্য জাতি আমার সেবা করে থাকে। তার ফলে যাকে রক্ষা করব বলে আমি মনে করি, তাকে করে তুলি সর্বশ্রেষ্ঠ। এমনকী তাকে ব্রহ্মা, ঋষি ও সুমেধায় পরিণত করি। ত্রিপুরা বিজয়সমরে রুদ্রের ধনুতে জ্যা বিস্তার করেছিলাম আমিই। তার ফলেই হিংস্র অসুরদের নিধন সম্ভব হয়েছিল। জনকল্যাণে আমি শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করি। এজন্য সমগ্র পৃথিবীতে তো বটেই, এমনকী অন্তরীক্ষেও প্রবিষ্ট হয়ে আছি আমি।’
মহাভারতেরও বিভিন্ন স্থানে শ্রীশ্রীদুর্গার নাম, স্তব ও স্তোস্ত্রের উল্লেখ আছে। বিরাট পর্বে আছে অর্জুন কথিত দুর্গার স্তব। ভীষ্মপর্বে—যুদ্ধের আগে মাদুর্গার কাছে জয় প্রার্থনা করার জন্য অর্জুনকে উপদেশ দিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং। অন্যদিকে, বাল্মীকি রামায়ণে দুর্গাপুজোর উল্লেখ নেই। তবে কৃত্তিবাসী রামায়ণে শ্রীরামচন্দ্রের তরফে দেবীদুর্গার অকালবোধনের বর্ণনা পাওয়া যায়। অপরাজেয় রাবণকে বধ করার জন্য রাম দুর্গাপুজো করলেন বসন্তকালের বদলে শরতে। মহাজ্ঞানী, মহাবলশালী রাবণ রাজার সমস্ত দম্ভেরই পরিসমাপ্তি হয় ওই যুদ্ধে। দেবীর সমস্ত কৃপাবঞ্চিত হলেন রাবণ, আর তার ফলেই ঘটল ‘অতি দর্পে হতা লঙ্কা’। শত্রুকে পরাস্ত করে ক্রমে এগিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় বঙ্গদেশও দেবীদুর্গাকে আশ্রয় করেছে। প্রতিটি শরৎ তাঁরই আরাধনায় নিবেদিত এই দেশে। তাঁকে ঘিরেই আমাদের বৎসরান্তের সর্ববৃহৎ আনন্দ-উৎসব। আসুন, আমরা সবাই এই ভালোথাকার উৎসবে মেতে উঠি, যাবতীয় ভেদাভেদ হিংসা দ্বেষ ভুলে যাই। পুরো সমাজ, সমগ্র দেশ ও জগতের জন্য আনন্দঘন মুহূর্ত হয়ে উঠুক এই অনবদ্য উৎসবের দিনগুলি।
8d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধায় চিন্তা ও উদ্বেগ। বেকারদের ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মপ্রাপ্তির প্রবল যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৩ টাকা৮৪.৯৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.০৬ টাকা১১১.৮৬ টাকা
ইউরো৮৯.৯১ টাকা৯৩.৩২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা