সম্পাদকীয়

সঙ্কীর্ণতার শিকার বিজেপি

সম্প্রতি দু’দফায় বিধ্বংসী বন্যার কবলে পড়েছে বাংলা। প্রথম দফায় প্লাবিত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের ১২টি জেলা। দ্বিতীয় দফায় বানভাসি হয়েছে উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলার আরও কয়েক লক্ষ মানুষ। সব মিলিয়ে হাজার হাজার ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়েছে। তলিয়েও গিয়েছে কিছু বসতবাড়ি। সরকারি হিসেবে, সারা রাজ্যে দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৫০ লক্ষাধিক! সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, অন্তত ২৯ জনের মৃত্যুও হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে আকস্মিক বিপর্যয়ের দায় যত না প্রবল বর্ষণের, তার চেয়ে শতগুণ দায় দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের। তাদের সংস্থা ডিভিসির বিভিন্ন বাঁধ থেকে ছাড়া জলেই এই বিপত্তি। রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই একাধিক দফায় বিপুল পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে এবার। ডিভিসি কর্তৃপক্ষের এই অবিবেচক ও অমানবিক ভূমিকায় বিস্মিত রাজ্যবাসী। দ্রুত প‍্রতিবাদও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চিঠি লিখেছিলেন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই। কিন্তু তিনি সেই চিঠির জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। জবাব আসে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক থেকে। তাতে সুরাহার বদলে ছিল কেবলই নিজেদের পাপ ঢাকার সাফাই। বলা বাহুল্য, রাজ্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর কিছু কথাই ছিল তাতে। স্বভাবতই প্রতিবাদে ডিভিসির পরিচালন বোর্ড এবং দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেশন কমিটি থেকে প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাজ্য। ডিভিসির বাঁধগুলি থেকে জল কখন, কতটা ছাড়া হবে তা এই রেগুলেশন কমিটিই ঠিক করে। কিন্তু সেখানে রাজ্যের একমাত্র প্রতিনিধির ভেটো বা আপত্তি কখনোই পাত্তা পায় না। অর্থাৎ রাজ্যের প্রবল আপত্তি অগ্রাহ্য করেই ডিভিসি বারবার জল ছাড়ে। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে বন্যার দায়ও মোদি সরকার এড়াতে পারে না। বর্ষার জলে বন্যার একটি বড় কারণ নদীগুলির নাব্যতা নষ্ট হয়ে যাওয়া। সময়মতো নদী-সংস্কার এবং ড্রেজিং না-হওয়ার কারণেই স্বাভাবিক নাব্যতা হারায় নদীগুলি। আর এই দায়িত্বের পুরোটাই কেন্দ্রীয় সরকারের। কিন্তু দিল্লি নিতান্ত গাড্ডায় না-পড়া পর্যন্ত তা স্বীকার করে না।
এবারের এত বড় বন্যার ক্ষয়ক্ষতির জন্য মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গকে প্রাথমিকভাবে ৪৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে দিল্লি। কেন্দ্র আরও ঘোষণা করেছে, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল খুব শীঘ্রই তারা পাঠাবে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল (এনডিআরএফ) থেকে মিলবে আরও কিছু আর্থিক সাহায্য। প্রথম দফায় বাংলাসহ ১৪টি বন্যাদুর্গত রাজ্যকে মোট ৫৮৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই রাজ্যগুলির মধ্যে ৯টিতে হয়ে গিয়েছে দিল্লির পরিদর্শন এবং সর্বাধিক কেন্দ্রীয় সাহায্য পেয়েছে মহারাষ্ট্র (১৪৯২ কোটি), অন্ধ্রপ্রদেশ (১০৩৬ কোটি) ও অসম (৭১৬ কোটি)। লক্ষণীয় যে উপর্যুক্ত তিন রাজ্যই গেরুয়া সংস্কৃতি অনুসারে ‘ডাবল ইঞ্জিন যুক্ত’। খটকা রয়েছে অবশ্য গোড়াতেই—কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের রাজ্য পরিদর্শন নামক কর্মসূচিতে। একশো দিনের কাজ এবং আবাস-সহ বেশকিছু কেন্দ্রীয় যোজনা বা প্রকল্পে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে তিনবছর যাবৎ লাগাতার বঞ্চনা করা হচ্ছে। নবান্ন থেকে যতবার দাবি ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে মোদি সরকার ততবারই ধুয়ো তুলেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন ও রিপোর্টের। বিশেষ করে মনরেগা ও আবাস ইস্যুতে তারা কতবার যে টিম পাঠিয়েছে তা মনে রাখা কঠিন। তারপরও রাজ্যকে কোনওভাবেই বাগে না পেয়ে মৌনব্রত নিয়েছে মোদি সরকার। মাঝখান থেকে কেটে গিয়েছে তিন তিনটি নিষ্ফলা বছর। অতীতেও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ক্ষতিপূরণে দিল্লিকে অবিকল ভূমিকায় পাওয়া গিয়েছে।
কেন্দ্রের এই মতলবি রাজনীতির শিকার আসলে হয়েছে অসংখ্য গরিব মানুষ। বহু পরিবার নিজ গ্রামে বা এলাকায় কাজ না পেয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের জীবন বেছে নিয়েছে। অন্যদিকে, পাকাবাড়ি না পেয়ে বন্যার সময় একাধিক মানুষ মারা গিয়েছে কাঁচা দেওয়াল চাপা পড়ে। তাতে হুঁশ ফেরেনি দিল্লিওয়ালাদের। তারা ফের নতুন মতলবি অস্ত্রে শান দিচ্ছে। সাম্প্রতিক বন্যার কারণে জনজীবন এবং ফসল মিলিয়ে বাংলাজুড়ে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য নিঃসন্দেহে বহু হাজার কোটি টাকা। সেখানে কেন্দ্র প্রথম দফায় যে টাকা দিয়েছে তা ‘সান্ত্বনা’ মাত্র। তৎসহ কেন্দ্রীয় টিম পাঠানোর গপ্পোটিও সিঁদুরে মেঘ বইকি! কেননা, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার পরম্পরায় বাংলার মানুষের ঘর পোড়া গোরুরই দশা। আর এখানেই প্রশ্ন, এত বড় বিপর্যয়ে বাংলার মানুষ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাশে পেল না কেন? তাঁরা কি লোকসভার ভোটে রামধাক্কার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছেন? এর পরেও কি বুঝতে বাকি থাকে, কেন কেন্দ্রীয় শাসক দল ক্রমে জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে, এমনকী টাকা ছড়িয়েও দলীয় সদস্য জোগাড় করতে গলদ ঘর্ম তারা?
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সন্তানের রুক্ষ ব্যবহার ও মতিগতি নিয়ে মানসিক চিন্তা। কাজকর্ম অপেক্ষাকৃত শুভ। বিদ্যায় উন্নতি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৮ টাকা৮৫.০২ টাকা
পাউন্ড১০৭.১৭ টাকা১১০.৯৫ টাকা
ইউরো৮৯.৮৫ টাকা৯৩.২৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা