ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
জ্ঞওভারিয়ান সিস্ট কী?
ওভারির মধ্যে যে মাংসল বৃদ্ধি ঘটে, তাকেই সিস্ট বলে। কখনও সেই সিস্ট হয় মাংসল, আবার কখনও সেখানে থাকে তরল পদার্থ। প্রাথমিকভাবে সিস্টের কারণে তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা না হলেও পরবর্তীকালে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। শুধু সন্তান ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ডিম্বাণু উৎপাদন করাই নয়, একজন মহিলার মানসিক-শারীরিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে যে সমস্ত হর্মোন, সেগুলিও তৈরি হয় ওভারিতে। তাই সিস্টের কারণে ওভারি তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়।
ওভারিতে কত ধরনের সিস্ট হয়?
এক ধরনের সিস্ট তৈরি হয়, যারা নিরীহ। সিস্টের কারণে কোনও ক্ষতি হয় না। দ্বিতীয়ত, কিছু সিস্ট তৈরি হতে পারে, যেগুলি ম্যালিগন্যান্ট। আর কিছু সিস্টকে ‘বর্ডার লাইন’ বলা হয়। এগুলি এখনই ততটা বিপজ্জনক না হলেও ভবিষ্যতে তা থেকে ক্যান্সার ছড়াতে পারে। আরও একভাবে সিস্টকে ভাগ করা যায়। একটি, দু’টি বা তিনটি প্রমিনেন্ট সিস্ট থাকলে তাকে ওভারিয়ান সিস্ট বলে। যদি দেখা যায়, পুঁতির মালার মতো ছোট ছোট বহু সিস্ট ডিম্বাশয় ঘিরে রেখেছে, বলা হয় পলিসিস্টিক ওভারি। এক্ষেত্রে প্রতিটি সিস্ট এক সেমির কম হতে হবে এবং একসঙ্গে ১০ -১২টি থাকবে।
কারণ?
ওভারি যে এগ তৈরি করে, তার মধ্যে কিছুটা জল থাকে। কোনওভাবে সেই জল বেশি হয়ে গেলে সিস্টের আকার নিতে পারে। এ ধরনের সিস্টকে বলা হয় ফাংশনাল সিস্ট। এই সিস্ট নিজেই ঠিক হয়ে যায়। আর এক ধরনের সিস্ট হয়, যাদের অস্বাভাবিক সিস্ট বলা হয়ে থাকে। এরা মূলত টিউমার। এর নির্দিষ্ট করে কারণ জানা নেই। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁদের ওভুলেশন বেশি হয়, সিস্ট হওয়ার আশঙ্কাও তাঁদের বেশি। অর্থাৎ যেসব মহিলা অবিবাহিত, কিংবা বিয়ের পর সন্তান হয়নি বা যাঁরা ওভারিকে সক্রিয় রাখতে ওষুধপত্র খেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সিস্টের ঝুঁকি বেশি থাকে। এর সঙ্গে পারিবারিক ইতিহাসও সম্পর্কযুক্ত। মা কিংবা বোন-দিদির ওভারিয়ান সিস্টের ইতিহাস থাকলেও সেই মহিলার সিস্টের ঝুঁকি থেকে যায়।
লক্ষণ কী?
৯০ শতাংশ সিস্টে লক্ষণ থাকে না। সোনোগ্রাফি করে দেখা যায়। বড় হলে বোঝা যায়। পেট ফুলতে থাকে। সিস্ট অনেক সময় লাট্টুর মতো ঘুরে যায়। বা ভিতরের তরল পদার্থ ফেটে যেতে পারে। তরল অংশে রক্তও জমে থাকতে পারে। এইসব কারণে অসম্ভব ব্যথা হতে পারে পেটে। ম্যালিগন্যান্ট সিস্ট হলে দ্রুত বাড়বে। ওজন উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে থাকবে। পেটও দ্রুত ফুলতে থাকবে।
চিকিৎসা কী?
ওভারিয়ান সিস্টের চিকিৎসাকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ফাংশনাল সিস্ট হলে অপেক্ষা করতে হবে। তিনমাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে।
অনেক সময় সিস্ট গলাতে ওষুধ দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, অ্যাবনর্মাল সিস্ট ম্যালিগন্যান্ট না হওয়া সত্ত্বেও ৫ সেমির বড় হলে (বিদেশে এখন অবশ্য বলছে, যদি ৮ সেমির বড় হয়) অপারেশন করতে হবে। আর যদি পেটব্যথা হতে থাকে, সিস্টের আকার ৮ সেমির কম হলেও অপারেশন করা দরকার। তৃতীয়ত, ম্যালিগন্যান্ট সিস্ট হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে। কারণ, এই ম্যালিগন্যান্ট সিস্ট অতি দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আরও একটি বিষয়, কোনও মহিলার মেনোপজ হওয়ার পর যদি ওভারিয়ান সিস্ট হয়, তা হলে কিন্তু সেই সিস্ট থেকে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেশি থাকে। সুতরাং সেই সিস্ট যত ছোটই হোক না কেন, সঙ্গে সঙ্গে তা কেটে ফেলতে হবে। এখন অবশ্য ওভারিয়ান সিস্ট অপারেশনের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেট কাটার দরকার হয় না। ল্যাপারোস্কোপিক অপারেশনে রোগিণী সকালে ভর্তি হয়ে দুপুরে অপারেশন করিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে পারেন। অনেকটাই কম যন্ত্রণাদায়ক এই অপারেশন।
ওভারিয়ান সিস্ট বন্ধ্যাত্বের কারণ?
নানা কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। তবে যদি কোনও মহিলার পলিসিস্টিক ওভারি হয়, তা হলে তাঁর ওভারিতে ঠিকভাবে এগ তৈরি হতে পারে না। সেক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি আসতে সমস্যা হয় কিংবা বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। কিন্তু ওভারিতে এক বা দু’টি সিস্ট থাকলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে প্রেগন্যান্সি এসে গিয়েছে, অথচ ওভারিতে সিস্ট রয়েছে, তখন দেখতে হবে যে সিস্ট রয়েছে, সেটি প্রেগন্যান্সি চলাকালীন লাট্টুর মতো ঘুরে যেতে পারে কি না কিংবা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা আছে কি না। তা হলে কিন্তু পেটে অসম্ভব যন্ত্রণা হতে পারে। তখন প্রেগন্যান্সি থাকা অবস্থাতেই অপারেশন করে ওই সিস্ট রিমুভ করার ব্যবস্থা করতে হবে।