ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
আজকাল বহু ক্ষেত্রেই শিশুর জন্মের আগে জিনগত কোনও অসুখ আছে কি না তা নির্ধারণ করতে কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এই পরীক্ষার মধ্যে কী কী পড়ে?
মূলত তিন ধরনের জেনেটিক টেস্টিং এর আওতাভুক্ত। ক্রোমোজোম স্টাডি, ডিএনএ স্টাডি ও বায়োকেমিক্যাল জেনেটিক স্টাডি। সাধারণত মায়ের লালারস, রক্ত, চুল, ত্বক, অ্যামনিওটিক ফ্লুয়িড ও অন্যান্য কলা থেকে স্যাম্পেল নিয়ে এই ধরনের পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এই জেনেটিক অসুখের পরীক্ষাগুলোর মধ্যে পড়ে সিকল সেল অ্যানিমিয়া, টে স্যাকস ডিজিজ, ডুসেন মলিকিউলার ডিসট্রফি, হানটিংটন ডিজিজ ও নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিসের মতো নানা অসুখ।
প্রেগন্যান্সি সার্কেলের কোন কোন সময়ে এগুলো করাতে হয়?
সাধারণত গর্ভধারণের ১১-১৩ সপ্তাহের মাথায় প্রথম ট্রাইমেস্টার স্ক্রিনিং বা ট্রিপল টেস্ট করা হয়ে থাকে। ১৬ সপ্তাহের কাছাকাছি পৌঁছলে চারটি পরীক্ষা করানো হয়, তার মধ্যে নানা রক্ত পরীক্ষা ও ইউএসজি থাকে। যদি রিস্ক ফ্যাক্টর কিছু পাওয়া যায়, তখন তা নিশ্চিত করতে নন ইনভেসিভ ব্লাড এনআইপিটি বা ইনভেসিভ অ্যামনিওসেন্টেসিস বা সিভিএস টেস্ট করানোর কথা ভাবা হয়।
ডাউন সিনড্রোম ও ট্রাইসমি ১৮-এর জন্য প্রসূতির স্ক্রিনিং টেস্ট করা হয়ে থাকে।
প্রয়োজন বুঝলে গর্ভাবস্থার ১৫-২০ সপ্তাহের মধ্যে অ্যামনিওসেন্টেসিস করান অনেকে। প্রসূতির কোনও জটিলতা আগে থাকলে ১৫ সপ্তাহের আগেই এই অ্যামনিওসেন্টেসিস করানো হতে পারে। এই পরীক্ষা নন ইনভেসিভ হওয়ায় ব্যথা, সংক্রমণ, রক্তপাত ও পায়ের কোনও সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম থাকে।
এত পরীক্ষা তো অনেকে নাও করিয়ে উঠতে পারেন। সেক্ষেত্রে এমন কিছু বাছাই তালিকা আছে কি, যা করে নেওয়া না করলেই নয়?
হিমোগ্লোবিন ও হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস ব্লাড গ্রুপ, থাইরয়েড ফাংশন, ভিডিআরএল, সুগার, সেরোলজি প্রোফাইল ও ইউএসজি প্রেগন্যান্সি ডেটিং স্ক্যান কিন্তু অবশ্যকরণীয় পরীক্ষা।
পরীক্ষাগুলোর খরচ কেমন? মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত করতে পারলেও নিম্নবিত্তদের ক্ষেত্রে কী হবে? সরকারি হাসপাতালে কি এগুলো করাতে পারবেন তাঁরা?
অ্যামনিওসেন্টেসিসের খরচ কমবেশি সাত থেকে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে। সব জায়গায় যে হয়, এমনও নয়। তবে যেখানে হয় না, তাঁরা বাইরে থেকে এই পরীক্ষা করিয়ে আনেন। সেক্ষেত্রে খরচ বাড়ে। নিম্ন মধ্যবিত্তরা কিছু পরীক্ষা সরকারি ক্ষেত্র থেকে করতে পারেন। প্রাইভেট কোনও সেন্টার থেকে বাদবাকি পরীক্ষাগুলো করতে পাঁচ-থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
আসলে জেনে রাখা ভালো, জেনেটিক কাউন্সেলিংয়ের খরচ অনেকটাই। এর আওতাভুক্ত সব পরীক্ষা সরকারি জায়গায় হয় না। এমনকী, সব প্রাইভেট হাসপাতালও এই পরিষেবা দিতে পারে না। কিছু পরীক্ষা আছে, যার পরিকাঠামো আমাদের রাজ্যে নেই। তবে তৈরির চেষ্টা চলছে। সেক্ষেত্রে যে সেন্টারের প্যাকেজে রোগী অন্যান্য পরীক্ষা করাচ্ছেন, তারা ভিন রাজ্য থেকে সেই পরীক্ষা করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেন। তবে জিনগত ত্রুটি ধরতে বেসিক কিছু পরীক্ষা সরকারি ক্ষেত্রেও হয়। যেমন, কনজেনিটাল হাইপোথাইরোডিজম, ডাউন সিনড্রোম, হিমোগ্লোবিনোপ্যাথিস, গ্যালাকটোসেমিয়া ইত্যাদি।
এগুলো করে যদি দেখা যায় শিশু বিপন্মুক্ত, তাহলে কি নিশ্চিত হওয়া যায়? নাকি এগুলো করার পরেও বিপদ থেকেই যাবে?
যদি ২০ সপ্তাহের মাথায় অ্যানোম্যালি স্ক্যান ও ২২ সপ্তাহে ফেটাল ইকোকার্ডিওগ্রাম করা হয় ও রিপোর্ট ভালো থাকে। এছাড়া প্রথম ট্রাইমেস্টার স্ক্রিনিং টেস্ট স্বাভাবিক আসলে ধরে নেওয়াই যায়, গর্ভস্থ শিশু সুস্থ।
যদি শিশু বিপন্মুক্ত না হয়, তখন?
সেটা এভাবে বলা যায় না। পরিস্থিতি ও জটিলতা দেখে চিকিৎসার পথে এগতে হয়। চেষ্টা করা হয়, যাতে সেই অসুখ তাকে খুব বিপদে ফেলতে না পারে।
এই পরীক্ষাগুলোর মারফত কোনও ভাবে ভ্রূণের লিঙ্গ বির্ধারণ হয়ে যায় না তো?
না না, এই পরীক্ষাগুলো কোনওটাই পিসিপিএনডিটি আইনকে অমান্য করে কিছু করে না। আমাদের দেশে অবশ্যই জন্মের পূর্বে লিঙ্গ নির্ধারণ দণ্ডনীয় অপরাধ এবং তার সঙ্গে এইসব পরীক্ষার সম্পর্ক নেই।
পরীক্ষাগুলোর ফল ভালো আসার জন্য হবু মা-বাবাকে কি পরিবার পরিকল্পনার আগে নিজেদের জীবনশৈলীতে কোনও সতর্কতা বা সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়?
উচিত তো করা। অন্তত নিজেদের সুগার, থাইরয়েড এগুলো অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস, রুবেল্লা আইজিজি, সুগারের ক্ষেত্রে এইচবিএওয়ানসি, রক্তচাপ সবই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এইচবিএওয়ানসি-কে ৬-এর মধ্যে রাখা বাঞ্ছনীয়।
রক্তচাপজনিত সমস্যা থাকলে প্রেগন্যান্সিকে ডিস্টার্ব করবে না এমন ওষুধ দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে কোনও কোনও ওষুধ বদলে দেবেন চিকিৎসকরা। আর বিয়ের আগে অবশ্যই থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষাটা করিয়ে রাখা উচিত।
আমাদের রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই এই ধরনের পরীক্ষার বিষয়ে পরিকাঠামো কেমন আর কোথায় আরও যত্নবান হওয়া উচিত বলে আপনাদের মত?
সরকারি ক্ষেত্রে আগের চেয়ে পরিকাঠামো এখন অনেক উন্নত হয়েছে। তবে এই বিষয়গুলি এতই সুবিশাল ও নিত্য নতুন নতুন গবেষণাকে সঙ্গে নিয়ে চলে। তার মধ্যেই সরকারি নানা ক্ষেত্রে চেষ্টা চলছে। ভালো কাজও হচ্ছে। বেসরকারি ক্ষেত্রেও ভালো কাজ হচ্ছে। এই চেষ্টা ও কাজ জারি রাখতে হবে ও সবচেয়ে আগে প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা।
দুই ক্ষেত্রেই এগুলো নিয়ে কাজ করার অনেক জায়গা আছে। তবে শুধু চিকিৎসকরা এগিয়ে এলেই হবে না। মানুষের সচেতনতা, হবু মা-বাবার সিরিয়াসনেস কিন্তু শেষ কথা।