ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
বুস্টার ডোজ কী?
বুস্টার ডোজ কোনও আলাদা টিকা নয়। শরীরে আগে প্রয়োগ করা কোনও প্রাথমিক টিকার কার্যকারিতা উজ্জীবিত করতে যে বাড়তি ডোজ দেওয়া হয়, তাকেই বলে বুস্টার ডোজ। শরীরে অ্যান্টিজেন প্রবেশ করালে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে তা ভাইরাসকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়। এভাবেই কাজ করে ভ্যাকসিন। পড়াশোনার ক্ষেত্রে যেমন বারবার চর্চার দরকার হয়, তেমনই টিকা দেওয়ার পর তার কার্যক্ষমতা বজায় রাখাও প্রয়োজন। এই সক্রিয়তা বজায় রাখার কাজই করে বুস্টার।
কিছু টিকা রয়েছে, যা একবার নেওয়ার পর সারাজীবন ধরে শরীরে কাজ করে। আবার অনেক টিকা রয়েছে, যেগুলির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর বুস্টার ডোজ নিতে হয়। এটি সম্পূর্ণভাবেই নির্ভর করে শরীরে ইমিউনিটি তৈরির উপর।
করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার নিয়ে এত হইচই কেন?
কোভিড-১৯ খুব বেশিদিন তার দাঁত-নখ বের করেনি। ফলে তার সঙ্গে আমাদের পরিচয় মোটেই সুদীর্ঘ নয়। স্বাভাবিকভাবে এখনও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, করোনার দাপট ঠিক আরও কতদিন চলবে। কিংবা যেভাবে করোনার স্ট্রেইন বদলাচ্ছে, তাতে টিকার দু’টি ডোজ নেওয়ার পরও ভাইরাসের বিরুদ্ধে তা কতদিন পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখতে সফল হবে। এই ভাবনা থেকেই একাংশ বুস্টার ডোজ নিয়ে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছেন।
বুস্টার ডোজের কি আদৌও দরকার আছে?
টিকা নেওয়ার পর দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রক্তের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শ্বেতকণিকাকে সক্রিয় করে। প্রথমত, প্লাজমা বি সেল। এরা মূলত অ্যান্টিবডি তৈরির প্রতি মনোযোগ দেয়। কিন্তু এই সেলগুলির স্থায়িত্বকাল কম। তাই প্রথম ডোজ নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর রক্তে প্রচুর অ্যান্টিবডি থাকলেও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া না-হলে এদের সংখ্যা কমে যায়। আর একটি হল, টি-সেল। নির্দিষ্ট প্যাথোজেন চিহ্নিত করে তাদের নিষ্ক্রিয় করে দেওয়াই প্রধান কাজ তাদের। এদের মধ্যে কিছু থাকে মেমোরি টি-সেল। এরা শরীরে কয়েক দশক টিকে থাকে। নির্দিষ্ট ভাইরাস পেলে আক্রমণ করে। কিন্তু এ ধরনের মেমোরি টি-সেলের সংখ্যা কমই থাকে। ফলে বুস্টার ডোজ না দিলে এদের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয় না। বুস্টার প্রয়োগ করলে জীবাণুকে শেষ করার জন্য যতটুকু প্রতিরোধ প্রয়োজন, ততটাই করা সম্ভব হবে।
কতদিনের ব্যবধানে বুস্টার?
করোনার বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে টিকা অবশ্যই জরুরি। সেই সঙ্গে দরকার বুস্টার ডোজও। যাঁরা মোটামুটিভাবে নয়-দশমাস আগে টিকা নিয়েছেন, তাঁদের এখন বুস্টার দেওয়া দরকার। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বুস্টার ডোজ নিলে তবেই সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। তবে করোনার স্ট্রেইন বদলের সঙ্গে কীভাবে বুস্টার বদলাবে, কিংবা কতদিন অন্তর তা দিতে হবে, সেসব এখনও গবেষণা সাপেক্ষ। বিভিন্ন দেশের গবেষণা অনুযায়ী, অ্যান্টিবডির স্থায়িত্বকাল আট থেকে বারোমাস। কিন্তু বিদেশের সঙ্গে আমাদের দেশের পরিকাঠামোর পার্থক্য রয়েছে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের উপর ট্রায়ালের ফল আর অন্য কোনও দেশের মানুষের উপর ট্রায়ালের ফলে কিন্তু ফারাক থাকতে পারে।
বুস্টারের আগে কী প্রয়োজন?
কোনও অ্যান্টিবডিই চিরস্থায়ী নয়। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে তার কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। তবে কতটা গতিতে তা কমছে, তা পরীক্ষা নিরীক্ষা সাপেক্ষ। কিন্তু বুস্টার নিয়ে কথা বলার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এখনও দেশের বহু মানুষ প্রথম ডোজ পাননি। শিশুদের ভ্যাকসিন শুরু করতে যাচ্ছি আমরা। আগে সেগুলো ঠিকমতো হোক। তার পর বুস্টার নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা যেতে পারে। কারণ, এখনই বুস্টার চালু করে দেওয়া হলে, কিছু মানুষ ক্ষমতাবলে ও প্রভাব খাটিয়ে তা নিয়ে নেবেন। আর যাঁরা পারবেন না, তাঁরা টিকাকরণের বাইরেই থেকে যাবেন। সেটা কখনওই কাম্য নয়। তবে, এটাও ঠিক লজিস্টিক কারণ যাই হোক না কেন, বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিতে দেখলে অবশ্যই করোনার বুস্টার ডোজের প্রয়োজন রয়েছে।
কাদের ক্ষেত্রে আগে বুস্টার দরকার?
দেখা গিয়েছে, অনেকেই টিকা নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকী দু’টি ডোজ নেওয়ার পরও, কেউ কেউ পর পর দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, এমন নজিরও কম নয়। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, সম্প্রতি ভুবনেশ্বরে একটি গবেষণা সংস্থার সদস্যদের উপর চালানো সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দু’টি টিকা নেওয়ার পরও ২৩ শতাংশের শরীরে কোনও অ্যান্টিবডিই তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে যাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে না, তাঁদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথা ভাবা যেতেই পারে। কিন্তু তার আগে কাদের শরীরে অ্যান্টিবডি রয়েছে, কিংবা নেই তার পরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ দরকার, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। তবে এটা বলা যায়, যাঁরা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার কিংবা রোজ কাজের সুবাদে বহু মানুষের সংস্পর্শে আসেন, তাঁদের সবার আগে বুস্টার দেওয়া যেতে পারে। ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কারের মধ্যে যাঁদের কোমর্বিডিটি রয়েছে এবং যাঁরা বয়স্ক, তাঁদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
বুস্টার নিলে কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে?
বুস্টার ডোজে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা যথেষ্টই কম। কারণ, আমরা তো ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছি। সেটাও তো এক ধরনের বুস্টার। অর্থাৎ, এটা বলা যেতে পারে, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর শরীরে যদি কোনও সমস্যা না হয়ে থাকে, তা হলে বুস্টার ডোজ নিয়ে অযথা আতঙ্কের কিছু নেই।
অন্যের মোবাইল নম্বরে টিকা! কতটা ভয়ঙ্কর?
এ ধরনের বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, টিকার দু’টি ডোজ নেওয়া হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। তারপরেও হঠাৎ মোবাইলে মেসেজ আসছে, তিনি এইমাত্র টিকা নিলেন। দেখা যাচ্ছে, তাঁর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে কো-উইন পোর্টালে ঢুকে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করে অন্য কেউ টিকা নিয়ে নিচ্ছেন। নিজেদের ‘ঝুঁকিহীন’ করতে এই বেআইনি প্রবণতায় মেতেছেন কেউ কেউ। এভাবে টিকা নিতে গিয়ে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে।