সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
এবার যাত্রা হরিদ্বারে। শাকম্ভরী শক্তিপীঠ থেকে সাহারানপুরে এসে তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা বাস জার্নি করলেই হরিদ্বারে আসা যায়। হরিদ্বারে থাকার জায়গার কোনও অভাব নেই। হোটেল ও ধর্মশালায় পরিবৃত হরিদ্বার এক রম্যস্থান। ভারত সেবাশ্রম সংঘ, ভোলাগিরি ধর্মশালা, কালী কমলি ধর্মশালা সহ অজস্র লজের সমাবেশ এখানে। সেই প্রথম এসেছিলাম বাবা-মায়ের সঙ্গে এগারো বছর বয়সে। তারপর বিগত পঞ্চাশ বছরে কতবার যে এসেছি গিয়েছি তার ঠিক নেই। এখানে আমার একটাই আশ্রয়স্থল ভোলাগিরি ধর্মশালার কাছে মিশ্রভবন। একটু সময় পেলেই সেখানে গিয়ে শান্তিতে বাস করি আমি।
আমার কথা থাক। হরিদ্বারের কথা বলি। হরিদ্বার হল গঙ্গাদ্বার। সপ্তৈতা মোক্ষদায়িকার এক। এর প্রাচীন নাম মায়াপুর। একান্ন মহাপীঠের (মতান্তরে বাহান্ন) অন্তর্গত এক পীঠ। দক্ষরাজার যজ্ঞস্থল ব্রহ্মকুণ্ডে সতীর জঠর পড়েছিল। ভৈরব এখানে চক্রপাণি। তবে হরিদ্বারের মূল আকর্ষণই হল শিবালিক পর্বতমালার কোল ঘেঁষে দুরন্ত গতিতে বয়ে চলা গঙ্গার প্রবাহ। এর একদিকে মনসা অপরদিকে চণ্ডী পাহাড়। আর সন্ধ্যায় ব্রহ্মকুণ্ডের গঙ্গারতি তো সর্বজন চিত্তজয়ী।
হরিদ্বারে অসেননি এমন যাত্রীসংখ্যা খুবই কম। তবুও নবাগতদের জন্য বলি, এখানে এলে মায়াদেবী এবং বিল্বকেশ্বরের দর্শন অবশ্যই করা উচিত। হরিদ্বারের যাত্রীরা হয়তো জানা না থাকার কারণে এই দুই পবিত্র স্থান অনেকেই দর্শন করেন না। অথচ এই দুই স্থানই হাঁটা পথের মধ্যে পড়ে। ভোলাগিরি ধর্মশালার কাছাকাছি থাকলে মায়াদেবী তিন মিনিটের হাঁটাপথ। আর লালতারা পোলের নীচে দিয়ে গেলে বিল্বকেশ্বর মাত্র কুড়ি মিনিট। এ পথের জন্য রিকশ অথবা টাঙাও নেওয়া যেতে পারে। এখানে যে ছোট্ট গুহায় বসে ভোলাগিরি তপস্যা করতেন সেটি আজও সুরক্ষিত আছে।
এর পরে আছে মনসা ও চণ্ডী পাহাড়ের আকর্ষণ। এই মনসা পাহাড়ের মনসাদেবী হলেন হিমালয়ের নয় দেবীর এক দেবী। অপরদিকে নীল ধারার ওপারে আছে চণ্ডী পাহাড়। এই উভয় পর্বতে আরোহণের জন্য আছে রোপওয়ে। তবে আমার মতে, হেঁটে পাহাড়ে ওঠার আনন্দের কোনও বিকল্প হয় না। অবশ্য দুর্বল ও অশক্ত লোকের জন্য রোপওয়ের প্রয়োজন আছে।
এই দুটি পাহাড় দু’দিনে দেখে একদিন সকালের দিকে যাওয়া যেতে পারে কনখলে। দক্ষরাজার বাসভূমি ছিল এখানে। সতীর দেহত্যাগও এখানেই হয়েছিল। এখানেই আছে দক্ষেশ্বর শিবের মন্দির। আর আছে মা আনন্দময়ীর আশ্রম।
বিকেলে টাঙা অথবা অটোর সাহায্য নিয়ে পবনধাম হয়ে ভারতমাতা মন্দির দর্শন করে একেবারে সপ্তধারায়। ফেরার পথে ব্রহ্মকুণ্ডে গঙ্গারতি দেখে অনাবিল আনন্দ লাভ করা।
হাতে সময় বেশি থাকলে রাজাজি ন্যাশনাল পার্ক বা চিল্লা স্যাংচুয়ারি দেখা যেতেই পারে। তবে দেরাদুন, মুসৌরি ও কেমটি ফলস না দেখলে কিন্তু মন ভরবে না। দেরাদুনের সহস্রধারা ও মুসৌরির কেমটি জলপ্রপাত যেমন নয়নাভিরাম তেমনই অনবদ্য। হরিদ্বার থেকে প্রতিদিন ট্যুর বাস যায়। এবার আসি ঋষিকেশ ও লছমনঝুলার কথায়। হরিদ্বারে গিয়ে ঋষিকেশে যাননি এমন কেউ আছেন বলে মনে হয় না। হরিদ্বার থেকে ঘন ঘন বাস যাচ্ছে ঋষিকেশে। এছাড়া আছে অজস্র ট্রেকার। তাই বাসে অথবা ট্রেকারে এক সকালে সোজা ঋষিকেশ। ঋষিকেশের ত্রিবেণীঘাট মহিমান্বিত, সেজন্য যাত্রী সমাগম এখানেই বেশি। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি ঋষিকেশকে অনেকেই হৃষীকেশ বলে থাকেন। এটি কিন্তু ঠিক নয়। সুপ্রাচীনকালে এই অঞ্চল ছিল ঋষিদের তপোভূমি। এখানেই ছিল রৈভ্য ঋষির আশ্রম। রৈভ্য ঋষি কেশ ছিঁড়ে আহুতি দিয়েছিলেন বলেই জায়গাটার নাম ঋষিকেশ। বিশদ জানতে আমারই লেখা ‘হিমালয় তীর্থ ভ্রমণ’ বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
ঋষিকেশ থেকে লছমনঝুলা। ত্রিবেণীঘাট থেকে ফিরে প্রশস্ত রাজপথে এলেই ঘন ঘন ট্রেকার ও অটোর দেখা মিলবে। প্রথমেই রামঝুলায় নেমে ওপারে গিয়ে স্বর্গাশ্রম, গীতাভবন ও আরও অন্যান্য মঠ মন্দির দর্শন করে গঙ্গার তীর ধরে প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে দেখতে লছমনঝুলায় চলুন। দৃষ্টিনন্দন এই স্থানটি সবারই অত্যন্ত প্রিয়। এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য একসময় অতুলনীয় ছিল। ইদানীং ধর্ম ব্যবসায়ীদের দাপটে প্রকৃতি তার রূপ-যৌবন সবই হারিয়েছে। তবুও লছমনঝুলার আকর্ষণ কম নয়। অসংখ্য মন্দির, হোটেল ও দোকানপত্তরের সমাবেশ হয়েছে এখানে। ঋষিকেশ থেকে সরাসরি লছমনঝুলায় এসে পদব্রজে অথবা গাড়িতে রামঝুলায় আসেন অনেকে। এখানে বাবা কালী কমলির আশ্রমটিও দেখার মতো।
দর্শন শেষ হলে ঋষিকেশের বাসস্ট্যান্ডে এসে সোজা হরিদ্বার। এই ভ্রমণে সারাটা দিনই লেগে যায় প্রায়। ফেরার পথে ব্রহ্মকুণ্ডে নেমে গঙ্গারতি না দেখলে মন ভরবে কি? তাই সময় থাকতে এসে গঙ্গার আরতি দেখতেই হবে।