সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
ঝুপ ঝুপ করে অবিরাম ঝরে চলেছে তুষার। রাস্তা প্রায় বরফে ঢেকে গেছে। জেমস গ্রাহামের সামনে তখনও সর্বাঙ্গ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছেন মিস লি। তীব্র তুষার পাত ও ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা মিঃ গ্রাহামের পক্ষেও সহ্য করা ক্রমশ কষ্টকর হয়ে উঠছিল। তিনি অধৈর্য কন্ঠে মিস লিকে বললেন, আমি আর এক মুহূর্ত এখানে সময় নষ্ট করতে পারব না। রাত অনেক হল, আপনি এখন কোথায় থাকেন বলুন? আমি আপনাকে খানিকটা এগিয়ে দিয়েই না হয় বাড়ি ফিরব!
মিস লি করুণ হেসে বললেন, আমার বাড়ি? আপনি সেখানে তো এখন কোনওভাবেই যেতে পারবেন না।
মিস লির এই কথায় গ্রাহামের শরীর জুড়ে হিমশীতল এক তরঙ্গ বয়ে গেল। তিনি বললেন, তার মানে?
লি বললেন, আমি এখন আর আপনাদের এই জগতের বাসিন্দা নই। ছমাস আগে আপনার বন্ধু সার্প ঠান্ডা মাথায় আমাকে খুন করেছে।
লির কথা শুনে চমকে উঠলেন গ্রাহাম। তবু নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বললেন, এই মাঝরাতে আপনি আমার সঙ্গে মজা করছেন।
লি বললেন, আপনার লণ্ঠনটা একবার দয়া করে আমার মুখের কাছে তুলবেন। মিঃ গ্রাহাম আপনার কোনও ভয় নেই। আমি আপনার কোনও ক্ষতি করব না। আমি শুধু আমার হত্যাকারীর চরম শাস্তি চাই। আপনাকে আমি সব কথা জানাব। আপনি শুধু দয়া করে ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে তদন্ত করার অনুরোধ করবেন।
লি-র কথা মতো লণ্ঠনটা মুখের সামনে নিয়ে গিয়ে চমকে উঠলেন গ্রাহাম। দেখলেন মুখের আবরণীটা সরিয়ে দিয়েছেন মিস লি। ভয়ংকর, ভয়াবহ এক দৃশ্য। মাথার পিছন দিক থেকে তখনও রক্ত ঝরছে, চুলগুলো রক্তে ভেজা। ভারী কোনও অস্ত্রের আঘাতে ডান কানের পাশটা একদম থেঁতলে গিয়েছে।
শিউরে উঠলেন মিঃ গ্রাহাম। বললেন, সার্প কেন আপনাকে খুন করবে?
খুব ক্লান্ত কণ্ঠে লি বললেন, আপনার বন্ধু ওয়াকারের নির্দেশে। অবাক গ্রাহাম বললেন, কেন! ওয়াকার আপনাকে মারল কেন?
লি বললেন, সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। এই ঠান্ডায় আপনার খুবই কষ্ট হচ্ছে, তবু দয়া করে শুনে যান।
মিস লি বলতে শুরু করলেন। ওয়াকারের আশ্রয়ে আসার পর প্রথম তিন মাস আমার খুব সুখেই কেটেছিল। এরপরই শুরু হল অত্যাচার। প্রতিরাতেই ওয়াকার আমাকে বাধ্য করতেন তাঁর শয্যাসঙ্গিনী হতে। ফলস্বরূপ একদিন আমার শরীরে মাতৃত্বের চিহ্ন ফুটে উঠল। একটা সময় পাড়াপ্রতিবেশীদের নজরে এল ব্যাপারটা। কুৎসা, নিন্দামন্দ করতে শুরু করলেন তাঁরা। ওয়াকারকে চরিত্রহীন বলতেও তাঁরা দ্বিধা করলেন না। মানসম্মান ধুলোয় লুটিয়ে যাচ্ছে দেখে সার্পের শরণাপন্ন হলেন ওয়াকার। ঠিক হল আমাকে এই পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া হবে। একদিন রাতে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে ওয়াকার আমাকে বললেন, লি এই অবস্থায় তোমার এখানে থাকা ঠিক নয়। আমার বন্ধু সার্পকে তো তুমি খুব ভালোভাবেই চেনো। শহরের বাইরে আমার বন্ধুর একটা বাড়ি আছে। কাল বিকেলে সার্প এসে তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবে। সন্তান প্রসবের পর তুমি আবার আমার কাছে ফিরে আসবে। আমি ওয়াকারের কথায় সম্মতি জানিয়েছিলাম, কারণ আমার জন্য তাঁর মানসম্ভ্রম নষ্ট হোক, তা আমি চাইনি। জানেন মিঃ গ্রাহাম আমি সত্যিই ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম। সেদিন বুঝিনি তবে আজ বুঝতে পারছি জীবনের মারাত্মক ভুলটা করেছিলাম ওয়াকারের কাছে আশ্রয় চেয়ে। সেই ভুলের চরম মূল্য আমাকে জীবন হারিয়ে দিতে হল। একটা নয় দু -দুটো খুন করেছে ওয়াকার ও সার্প। আমার গর্ভের সন্তানটি তো কোনও অন্যায় করেনি তবু ওকেও মরতে হল আমার জন্য। মিঃ গ্রাহাম দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।
নির্বাক হয়ে গ্রাহাম এতক্ষণ কথা শুনছিলেন , মিস লি চুপ করা মাত্রই তিনি জানতে চাইলেন, তারপর কী হল?
করুণ হেসে লি বললেন, সেদিন বিকেল বেলায় সার্প তার গাড়ি নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসা মাত্রই ওয়াকার আমার দুটো হাত ধরে গাড়িতে তুলে দিয়ে বলেছিল, ডালিং, মাত্র ক’টা দিনের ব্যাপার, সব মিটে গেলে তুমি আমাদের সন্তানকে নিয়ে আবার ফিরে আসবে আমার কাছে। আমি তোমাকে তখন বিয়ে করব। মিঃ গ্রাহাম আমার মতো নির্বোধ মেয়ে আপনি জীবনে বোধহয় আর একটাও দেখেননি। সেই সন্ধ্যায় আমি শেষবারের মতো প্রতারিত হলাম।
গ্রাহাম নিজের ওভারকোট থেকে তুষার কনা ঝেড়ে নিয়ে জানতে চাইলেন, সার্প আপনাকে কোথায়, কীভাবে খুন করল?
লি বললেন, রাস্তার ওই বাঁকের মুখটায় আপনাকে একবার কষ্ট করে যেতে হবে। সেদিন ওইখানে গাড়িটা আসার পর সার্প বলেছিল, আজ গোটা দিন জুড়ে সারা শহর টহল মারতে হয়েছে। ঘোড়াগুলো একটুও বিশ্রাম পায়নি। এই ফাঁকা জায়গাটায় খানিকক্ষণ আমরা দাঁড়াব। মিস লি আপনি নীচে নেমে আসুন। একটু পরেই আমরা আবার রওনা হব। মনটা বড়ই বিষণ্ণ হয়েছিল। বারবার ওয়াকারের কথা মনে পড়ছিল। সার্পের কথা মতো আমি গাড়ি থেকে নেমে এসেছিলাম। সার্প তখন আমার সন্তান, আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা কথা বলে যাচ্ছিল। আমার ওই বকবকানি একটুও ভালো লাগছিল না। কিছুক্ষণ একা থাকতে ইচ্ছা করছিল। তাই আমি একটু পিছিয়ে গিয়ে রাস্তার দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়েছিলাম। সার্প এই সুযোগটার জন্যই অপেক্ষা করে ছিল। একটা ভারী লোহার রড দিয়ে আমার ডান কানের পিছনে সপাটে আঘাত করেছিল। আমি রাস্তায় লুটিয়ে পড়ার পরও সার্প কিন্তু ওই রড দিয়ে আমার শরীরে ক্রমাগত আঘাত করে গিয়েছে। তারপর আমার প্রাণহীন দেহটা টেনে নামিয়ে নিয়ে গেছে ওই জলাটার পাশে। ওখানেই আমি এখন শুয়ে আছি। তবে মিঃ গ্রাহাম, সার্পের মোজা ও টাইতে রক্ত লেগে গিয়েছিল। মোজা ও টাইটা খুলে ওই গর্তেই ফেলে দিয়েছিল সার্প। মিঃ গ্রাহাম প্লিজ, আমাকে সাহায্য করুন।
গ্রাহাম বললেন, আমি চেষ্টা করব আপনাকে সাহায্য করতে।
মৃদু হেসে লি নিমেষে বাতাসে মিলিয়ে গেলেন।
(ক্রমশ)