উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
আবার অন্য একটি বৃত্তান্তে রয়েছে, দৈত্যরাজ বলি ছিলেন বিষ্ণুর পরম ভক্ত। একবার বিষ্ণু বৈকুণ্ঠ ছেড়ে বলির রাজ্য রক্ষা করতে চলে এসেছিলেন। বিষ্ণু-ঘরণী লক্ষ্মীদেবী স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য এক অতি সাধারণ মেয়ের ছদ্মবেশে বলিরাজের কাছে আসেন। লক্ষ্মী বলিকে বলেন, তাঁর স্বামী নিরুদ্দেশ। যতদিন না স্বামী ফিরে আসেন, ততদিন যেন তিনি তাঁকে আশ্রয় দেন। বলিরাজ তখন দয়া করে লক্ষ্মীকে আশ্রয় দিতে রাজি হন। সেই সময় ছিল শ্রাবণী পূর্ণিমা। সেই সমারোহে লক্ষ্মী বলিরাজের হাতে একটি রাখি বেঁধে দেন। এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে দেবী তাঁর আত্মপরিচয় দিয়ে সব কথা খুলে বলেন। এতে বলিরাজা মুগ্ধ হয়ে বিষ্ণুকে বৈকুণ্ঠে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। অনেকে মনে করেন সেই থেকেই শ্রাবণী পূর্ণিমা দিনটিতে রাখিবন্ধনের প্রচলন ঘটে।
গোপীকান্ত গোবিন্দের ঝুলনযাত্রার সঙ্গেও রাখি উৎসবের পৌরাণিক সাযুজ্য রয়েছে। ঝুলন পূর্ণিমার ঔজ্জ্বল্যে ব্রজাঙ্গনারা শ্রীকৃষ্ণের হাতে সুকোমল ফুলের রাখি বেঁধে দেয় প্রীতি ও ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে। গোপবালকদের সঙ্গে গিরিধারী গোপাল প্রায়ই বনপথে গোচারণ করেন। কোনও অশরীরী যাতে গোষ্ঠবিহারীর অনিষ্টাচরণ করতে না পারে সেই জন্য প্রাণপ্রিয় পুত্রের হিতার্থে মা যশোদা কানাইয়ের হাতে মঙ্গলসূত্র পরিয়ে দিতেন প্রতি বছর হিন্দোল যাত্রায়। অনেকে বলেন, রাখি বা রক্ষার প্রচলন সেই থেকেই।
এবার আসি একটি ঐতিহাসিক বিবরণে। এই রক্ষাবন্ধনের পর্বে সিকন্দরের ধর্মপত্নী রোক্সানা রাখি পাঠিয়েছিলেন সম্রাট পুরুর কাছে। যুদ্ধক্ষেত্রে পুরু যখন সম্রাট অ্যালেকজান্ডারকে মারতে উদ্যত হন, ঠিক সেই সময়ই নিজের হাতের দিকে দৃষ্টি যায় তাঁর। তিনি দেখেন রোক্সানার পাঠানো রাখি। সম্প্রীতির বন্ধন এই রাখি দেখে এবং রোক্সানার কথা চিন্তা করে পুরু অস্ত্র নামিয়ে নিজেকে সংযত করলেন। সে যাত্রা একগুচ্ছ রাখির সুবাদেই সুরক্ষিত হল সিকান্দারের জীবন।
এই রাখিবন্ধনের জনাচার নিরন্তর শুধু ভাই-বোনের অবিচ্ছেদ্যতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর উৎসে সম্ভবত বিজড়িত হয়ে আছে মধ্যযুগে সংগঠিত কোনও একটি ঘটনা। রাজপুত করুণাবতী দিল্লির বাদশাহ হুমায়ুনকে ভাই পাতিয়েছিলেন। সেই সমাদরের স্বীকৃতিকে অর্থবাহী করে তুলতে সম্রাটকে প্রতি বছর রাখি পাঠাতেন তিনি। একবার রাজকুমারী নিজ রাজ্যরক্ষার্থে ঘোরতর যুদ্ধে বাহাদুর শােহর কাছে পরাজিত হন। ক্ষোভে-দুঃখে পিছু হটে তিনি একাকিনী নিরালম্ব অবস্থায় ফিরে আসেন রাজবাড়ির অন্দরমহলে। সেদিন ছিল রক্ষাবন্ধন উৎসব। এই অসম্ভব বিষাদের মধ্যেও দরদি বোন দিল্লির শাহেনশার কাছে রাখি পাঠাতে ভুলে যাননি কিন্তু। প্রীতির বন্ধনের সেই রাখি পাওয়া মাত্রই রাজচক্রবর্তী হুমায়ুন বোনের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে চকিতে অস্ত্রসজ্জিত হয়ে ছুটে গিয়ে শত্রুপক্ষকে ধরাশায়ী করেন।
এই রাখিবন্ধন উৎসব স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তার ক্ষেত্রে এক মহনীয় রূপ নিয়েছে। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গবিভাগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে সামনে রেখে সম্প্রদায় নির্বিশেষে জনগণ পরস্পরের হাতে রাখিবন্ধনের মাধ্যমে স্বদেশানুরাগে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। এভাবেই রাখি উৎসব যুগে যুগে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের প্রতীক রূপে উদযাপিত হয়ে আসছে। এই ধরনের উৎসব পালনের মধ্য দিয়েই ভাই-বোনের চিরন্তন সম্পর্ক উজ্বল হয়ে থাকবে।