উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
লকডাউনে তো শ্যুটিং বহুদিন বন্ধ ছিল। সময় কাটালেন কী ভাবে?
আমার বাড়ি কাটোয়াতে। সেখানেই বাবা-মা, আত্মীয়দের নিয়ে সময় কাটিয়েছি।
এর মধ্যে নতুন কিছু শিখলেন?
ঠিক শিখিনি, তবে লকডাউনে নতুন উপলব্ধি হয়েছে। আমার যে এত ধৈর্য আছে সেটা লকডাউন না হলে অজানাই থেকে যেত।
অভিনয় বন্ধ থাকায় কোনও সমস্যা হয়েছে কি?
একদমই না। জি বাংলাতে একটা শো হয়েছিল, ‘তারকার অন্দরমহল’। স্ক্রিপ্ট চ্যানেল থেকেই পাঠিয়ে দিয়েছিল। বাকি কাজ আমাকে করতে হয়েছে। অর্থাৎ শো পরিচালনা থেকে তার ছবি তোলা, রেকর্ড করা সবই আমার দায়িত্ব। সেখানে আমি, মা, বাবা সবাই অভিনয় করেছি। জি বাংলাতে দেখিয়েওছিল অনুষ্ঠানটা। ফলে এইসব কাজে সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু কলকাতার শ্যুিটং, বয়ফ্রেন্ড এদের তো মিস করেছি বটেই।
একটু পিছনে ফেরা যাক। অভিনয়ে এলেন কীভাবে?
আমি ২০১৪ সালে মডেলিং ও ২০১৫ সালে থিয়েটারে অভিনয় শুরু করি। ওখানে কাজ করতে করতেই অভিনয়ের প্রতি একটা টান জন্মায়। এই একই সময় নাগাদ ত্রিনয়নীর জন্য নতুন মুখ খোঁজা হচ্ছিল। সেই খবরটা রঙ্গিলা গ্রুপের কৌশিক করের কাছে শুনে অডিশন দিতে যাই, এবং প্রথমেই বাতিল। তিনদিন পরে আবার ওরা আমাকে একটা স্ক্রিপ্ট পাঠায়। অভিনয় করে তার ভিডিও পাঠালে ওরা আমাকে লুক টেস্টের জন্য ডাকে। কাটোয়া থেকে স্টুডিওয় পৌঁছতে গোটা দিন কাবার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই কষ্টের পরিণাম পেয়েছি। লুক টেস্টের পরেই ত্রিনয়নীর প্রধান চরিত্র করার সুযোগ দেওয়া হয় আমাকে।
প্রথম দিন শ্যুিটংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আমি বরাবরই ক্যামেরা, ছবি, পোজ দেওয়া ইত্যাদি ভালোবাসি। তাই ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে ভীষণ ভালো লেগেছিল। ভয় করেনি একটুও। তবে ওই খালি পায়ে মেঠো পথে দৌড়নোটা আমার পক্ষে বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। আসলে ২০১৮ সালে একটা বাইক অ্যাক্সিডেন্টে আমার বাঁ পায়ে খুব চোট পেয়েছিলাম। হাঁটতে একটু সমস্যা হতো। সেই অবস্থায় তিন মাস খালি পায়ে শ্যুটিং বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবু হাল ছাড়িনি।
চরিত্রটা কেমন লাগছে?
ত্রিনয়নী একটা অফবিট চরিত্র। আমার সঙ্গে একটা অদ্ভুত মিল খুঁজে পেয়েছিলাম প্রথম থেকে। কারণটা বলি, আমার গায়ের রং ময়লা। ছোটবেলা থেকেই এই নিয়ে লোকের অনেক কথা শুনেছি। মনে মনে একটা বর্ণবৈষম্য তৈরি হয়েছিল। নিজেকে ঠিকমতো মেলে ধরতে পারিনি কোনওদিন। ত্রিনয়নীও নিজের ভালোলাগা, ইচ্ছা, কিছুই অন্যের সামনে মেলে ধরতে পারে না। আর এখানেই আমি ত্রিনয়নীর সঙ্গে মিশে গিয়েছি।
যখন অভিনয়কে পেশা করার কথা চিন্তা করলেন, তখন বাড়িতে কোন সমস্যা হয়নি?
আমার মা বাবা দু’জনেই আমার ইচ্ছার গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাই সমস্যা হয়নি।
আপনারা ক’জন ভাই বোন?
আমি একমাত্র সন্তান। আমাদের বাড়ির সদস্যা বলতে বাবা মা আর আমি থাকি।
পড়ােশানা কোথায় করেছেন?
আমি কাটোয়ার মেয়ে। কাটোয়ার ডি.ডি.সি. গার্লস হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করি। তারপর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে থার্ড ইয়ার পর্যন্ত পড়েছি। ত্রিনয়নীতে কাজ শুরু হওয়ার পর পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি। সিরিয়ালে কাজ করতে করতে পড়াশোনার মতো কঠিন কাজ শেষ করে উঠতে পারিনি।
ছেলেবেলার কথা একটু বলুন?
বাবা-মায়ের আদর শাসন দুই-ই ছিল। ছোটবেলায় আমি খুব শান্ত ছিলাম। যত বড় হচ্ছি, দুষ্টুমি তত বাড়ছে।
আর প্রেম?
গত এক বছর ধরে একটা হেলদি এবং স্টেডি রিলেশনশিপে আছি। আমিই ওকে প্রথম প্রপোজ করি, দু’মাস পর ও আমাকে হ্যাঁ বলে। ২০২৩ সালে বিয়ে করার ইচ্ছা আছে।
রান্না করতে পারেন?
টুকটাক রান্না জানি। আমি মিষ্টির পোকা। তাই গোলাপজামুন, কেক, কাস্টার্ড, পুডিং এগুলো আগে শিখেছি।
আপনি খরুচে নাকি হিসেবি?
আমি সেভিংসয়ে বিশ্বাসী। যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকুই খরচ করি। তাই বলে আমায় কিপটে বলা যাবে না, বরং বলুন সাশ্রয়ী।
বাড়ি গাড়ি কেনার শখ নেই?
অবশ্যই আছে। আগে বাড়ি করব। তার নীচের ফ্লোরে ডান্সের ইনস্টিটিউট থাকবে। ওপরতলায় বাবা, মা, শ্বশুর, শাশুড়ি সবাই একসঙ্গে থাকব।
অভিনেত্রী হওয়ার পিছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
আমার নিজের। প্রচণ্ড পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসের কারণেই আজ এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। তবে বাবা মায়ের সমর্থন ছাড়া কোনও দিনই কিছু করতে পারতাম না। আমার ওপর বাবা মায়ের সম্পূর্ণ ভরসা ছিল। তাই আমি যখন অভিনয়ে এসেছি, তখন তাতে পুরোপুরি মনযোগ দিতে পেরেছি। আর সেটা না হলে এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না।
লোকে যখন চিনতে পারে তখন কেমন লাগে? পরিচিত হওয়ার পর নিজের লাইফ স্টাইল কতটা বদল করেছেন?
খুব ভালো লাগে। তবে আমি বরাবরই চেনা মুখ। নাচের জন্য গোটা কাটোয়া আমায় চিনত। অভিনয়ে এসে পরিধিটা আর একটু বেড়ে গিয়েছে, এই আর কি। ফলে আমার কোনও পরিবর্তন হয়নি।
পশুপাখি ভালোবাসেন?
ভীষণ ভালোবাসি। আমার একটা খরগোশ ছিল, গত জানুয়ারিতে মারা গিয়েছে।
বর্তমান সমাজে মেয়েদের অবস্থান কেমন বলে আপনার মনে হয়?
খুবই খারাপ। আমরা যতই বলি, মেয়েরা পুরুষের সমান, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তা বলে না। আর ক্রমশ মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। এ কেমন অগ্রগতি?
আজকাল সিরিয়ালগুলোয় মহিলাদের বড্ড বেশি করে ভিলেনের চরিত্রে দেখানো হচ্ছে। সত্যিই কি সমাজে মহিলারা এতটাই জটিল?
সমাজে এ ধরনের মহিলা অবশ্যই আছেন। কিন্তু মেগা সিরিয়ালে সেগুলো একটু বেশিই হাইলাইট
করা হয়।
ভূত আর ভগবানে বিশ্বাস আছে?
ভূতের সিনেমাও দেখি, আবার ভূতকে ভয়ও পাই। ভগবানের ব্যাপারটা নিজের কাছেই স্পষ্ট নয়।
সিনেমায় অভিনয় করতে চান? স্বপ্নের কোনও চরিত্র আছে?
অবশ্যই সিনেমায় অভিনয় করতে চাই। সুচিত্রা সেনের বায়োপিক করতে পারলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব।
অবসর সময় কী ভাবে কাটান?
গান করি।