উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
হেডিং পড়ে হযবরল’র ছিল বেড়াল, হয়ে গেল রুমাল’-এর মতো মজাদার মনে হলেও বিষয়টা ঠিক তেমন সহজ নয়। আসলে আমাদের বদলে যাওয়া মন বদলে দিচ্ছে আমাদের আচার আচরণের ধরন।
ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের মা কাকিমাদের চার পাঁচটা দামি শাড়ি থাকত। ওগুলোই তাঁরা বিয়েবাড়ি বা কোনও অনুষ্ঠানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরতেন। বড়জোর বাড়ির কারও বিয়ে থাকলে তাঁদের একটা দামি শাড়ি কিনে দেওয়া হতো। এরপর মেয়েরা যখন চাকরি করতে শুরু করলেন, তখন তাঁরা পুজোর সময় বা কোনও উপলক্ষে নিজের ইচ্ছেমতো দামি শাড়ি কিনতে শুরু করলেন। এই মুহূর্তে শুধু অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কারণেই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে নিত্যনতুন শাড়ি পোশাকে নিজেকে মেলে ধরার নেশা পেয়ে বসেছে আমাদের। সবসময় নতুন চাই, প্রতিনিয়ত বদল চাই। দামি কাঞ্জিভরম দু’ বার পরে ছবি পোস্ট হয়ে যাওয়া মানে শাড়িটা অবসোলিট। বিয়ের লাল বেনারসিটা আলমারিতে জায়গা জুড়ে রয়েছে, আর পরা যায় না। আনারকলি কামিজটার ডিজাইনটা আউটডেটেড, কী যে করা যায়। বাংলাদেশি ঢাকাইটা একটু ফেটে গিয়েছে, ওটা একেবারে বাতিল করতে মন চাইছে না, কিছু করা যায় কি? সমস্যার সমাধান রিসাইক্লিং — বললেন ডিজাইনার। তাঁর পরামর্শই তুলে ধরলাম আপনাদের কাছে।
শাড়ি যখন লেহেঙ্গা
দামি ডিজাইনার লেহেঙ্গা না কিনে পুরনো শাড়ি দিয়ে তৈরি করাতে পারেন এক্সক্লুসিভ লেহেঙ্গা।
• বেনারসি হোক বা কাঞ্জিভরম, তার আঁচল জরির কাজের হয়। এই অংশটা মাপ মতো কেটে নিয়ে লেহেঙ্গার চোলি বা ব্লাউজ করা যেতে পারে। পাড়ের দিকটা নীচ দিয়ে খুব ঘেরওয়ালা হবে লেহেঙ্গা। দোপাট্টা কনট্রাস্ট ম্যাচিং হলে ভালো হয়।
• আবার দুটো দামি শাড়ি কেটে জুড়েও লেহেঙ্গা হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সিম্পল শাড়ি দিয়ে লেহেঙ্গা তৈরি করিয়ে জমকালো কাজের বেনারসি কেটে দোপাট্টা করান। এই দোপাট্টা অন্য পোশাকের সঙ্গেও ব্যবহার করা যায়।
• কোনও ডিজাইনার নেট শাড়ি থাকলে তা-ও লেহেঙ্গা হতে পারে। তবে তার চোলি আর দোপাট্টা মানানসই হতে হবে।
• বাংলাদেশি ঢাকাই শাড়িতে লাইনিং দিয়ে লেহেঙ্গা তৈরি করা যেতে পারে।
শাড়ি যখন স্কার্ট
স্কার্ট কখনও ফ্যাশন থেকে আউট হয়ে যায় না। হয়তো লেন্থ বা ঘের নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা হয়, কিন্তু চাহিদা থেকেই যায় এই আরামদায়ক পোশাকটির।
• যদি গর্জিয়াস ফ্লোর লেন্থ স্কার্ট করাতে চান, তাহলে বেনারসি কাঞ্জিভরম দিয়েও হতে পারে। তবে সেটা পার্টিওয়্যার হয়ে যাবে।
• আবার এক রঙের সিল্ক বা তসর দিয়ে স্কার্ট করিয়ে জরির শাড়ি কেটে টপ আর দোপাট্টা করানো যায়। তবে এটা ঘাগরা চোলি টাইপ হবে।
• ক্যাজুয়াল স্কার্ট করাতে চাইলে কটন, লিনেন, নেট, শিফন, জর্জেট শাড়ি থেকে করান। লংলেন্থ বা নি-লেন্থ স্কার্ট ভালো লাগবে।
• টপও কনট্রাস্ট কম্বিনেশন করে করালে মানাবে।
• কটন শাড়ি দিয়ে র্যাপ অ্যারাউন্ড স্কার্ট করলে ভালো হবে। কলমকারি বা বাগরু প্রিন্ট শাড়িকে এইভাবে কাজে লাগাতে পারেন।
শাড়ি যখন প্যালাজো
শাড়িকে ওয়েস্টার্ন লুক দিতে চাইলে তৈরি করা যেতে পারে প্যালাজো। তবে এর জন্য শাড়ি হতে হবে সিম্পল।
• আপনার আলমারিতে জমে থাকা ক্রেপ, জর্জেট বা লিনেনের গতি করতে প্যালাজো তৈরি করান। এক রঙের শাড়ি হলে খুব ঘের দেওয়া প্যালাজো ভালো লাগবে।
• যদি প্রিন্টেড শাড়ি হয়, তাহলে মাঝারি ঘেরের প্যালাজো করাবেন। সঙ্গে এক রঙের টপ পরলে ভালো লাগবে।
• শাড়িতে যদি পাড় থাকে, তাহলে প্যালাজোর পায়ের নীচের দিকে আর কোমরে ডিজাইন করে লাগানো যায়। সঙ্গে ওই পাড়ের অংশ দিয়েই ক্রপ টপ করলে খুব স্মার্ট দেখাবে।
শাড়ি যখন আনারকলি
খুব ঘেরওয়ালা আনারকলি কামিজ পরলে অনেককেই খুব ভালো দেখায়। বিশেষ করে একটু স্লিম ফিগার, যাঁদের তাঁরা এই ধরনের কামিজ পরতে পারেন।
• কোনও অনুষ্ঠানে পরার জন্য পুরনো বেনারসি বা গর্জিয়াস সিল্ক শাড়ি দিয়ে তৈরি করাতে পারেন আনারকলি কামিজ। পাড় নীচের দিকে দিয়ে আঁচলের কারুকাজ করা অংশ বুকের কাছে বসিয়ে ডিজাইন করতে হবে। সঙ্গে স্কিন কালার বা বেজ কালার লেগিংস মানাবে।
• আনারকলি কামিজ না করিয়ে আনারকলি ড্রেসও করাতে পারেন। এটা যে কোনও ডিজাইনার শাড়ি থেকেও হতে পারে। জুট , টিস্যু, তসর সিল্ক যে কোনও মেটিরিয়ালের শাড়ি থেকেও হতে পারে।
শাড়ি যখন গাউন
শাড়িকে এক্কেবারে বদলে ওয়েস্টার্ন লুক দিতে চাইলে গাউন বা ওয়ান পিস লং ড্রেস করান।
• শাড়িকে ওয়েস্টার্ন লুক দিতে চাইলে শাড়ি বাছাই করতে হবে দেখেশুনে । একেবারে ট্র্যাডিশনাল বেনারসি বা সাউথ সিল্ক দিয়ে গাউন করালে তেমন ভালো লাগবে না।
• লিনেন, টিস্যু, নেট, অরগ্যাঞ্জা, জরি-নেট, এক রঙের ভারী সিল্ক শাড়ি দিয়ে ড্রেস করালে ইউনিক হবে।
• ফ্লোরাল প্রিন্ট বা এমব্রয়ডারি বা সূক্ষ্ম জরির কাজ থাকলেও মন্দ লাগবে না। ইন্দো ওয়েস্টার্ন লুক আসবে।
শাড়ি যখন দোপাট্টা
কোনও দামি শাড়ি ছিঁড়ে গেলে বা দাগ লেগে নষ্ট হয়ে গেলে মন খারাপ হয়। পরাও যায় না, ফেলাও যায় না। এটা অনায়াসে দোপাট্টা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শুধু মাপ মতো কেটে সেলাই করে নিতে হবে ধারগুলো।
• তবে ডিজাইনারকে দিলে তিনি একটু অন্যরকম একটা কিছু করে দেবেন, যাতে দোপাট্টাটাই হয়ে উঠবে দর্শনীয়।
• ফেটে যাওয়া বাংলাদেশি ঢাকাই থেকে মাপ মতো কেটে নিয়ে চারদিকে রেশম বর্ডার বসিয়ে অসাধারণ একটি পার্টি ওয়্যার দোপাট্টা হতে পারে।
• বেনারসির বা কাঞ্জিভরমের জরি আঁচলকে কাজে লাগিয়ে বিয়েবাড়িতে পরার মতো জমকালো ওড়না হতে পারে।
• নেট বা শিফন টাইপের শাড়ি কেটেও ওড়না হতে পারে। তবে অফ বিট চাইলে তা তৈরি করতে দিতে হবে ডিজাইনারকে।
শাড়ি যখন অ্যাকসেসরি
দেখে ভাবছেন তো, এটা কী করে সম্ভব? ডিজাইনারদের মনের মাধুরী যে অসম্ভবকে সম্ভব করে।
• শাড়িকে ইন্দোওয়েস্টার্ন লুক দিতে ইয়াং জেনারেশন বেল্ট ব্যবহার করছেন। সিল্ক শাড়ি অনেক সময় ফেটে যায়। কিন্তু জরি পাড় অটুট থাকে। এই পাড় দিয়েই হতে পারে বেল্ট। শুধু শাড়ি কেন, যে কোনও পোশাকের সঙ্গেই মিক্স ম্যাচ করে পরা যায়।
• জরি পাড় কেটে জুয়েলারি তৈরি করছেন ডিজাইনাররা।
• এখন মাস্ক তো খুব জরুরি আইটেম। নরম কাপড় দিয়ে বেশ কয়েকটা থ্রি লেয়ারড মাস্ক করিয়ে নেওয়া যায়।
• এখন বাইরে বেরনোর সময় চুল ঢেকে রাখা দরকার। নরম পুরনো শাড়ি কেটে তৈরি করতে পারেন ব্যান্ডানা।