উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
নিয়মিত যত্ন না নিলে চুল জেল্লাহীন বিবর্ণ হয়ে যায়। স্যলঁ বা বিউটি পার্লারে মাসে অন্তত একবার গিয়ে হেয়ার স্পা বা দরকার মতো হেয়ার ট্রিটমেন্ট করান অনেকেই। বিশেষ করে যাঁরা হেয়ার কালার করান তাঁদের তো আরও বেশি যত্নের প্রয়োজন। মাস তিনেক পার্লারে না যাওয়ার ফলে হেয়ার কাটও করা হয়নি। ফলে চুল বেড়েছেও ইচ্ছেমতো। তার ওপর বাড়ির কাজ, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, যাঁরা চাকরি করেন তাঁদের ওয়ার্ক ফ্রম হোম, বাড়ির বয়স্কদের দেখভাল করতে করতে হিমশিম অবস্থা। চুলের পরিচর্যা করার সময় কোথায়? তার ওপর বর্ষাও হাজির। এই সময় চুল ও স্ক্যাল্পের অনেক রকম সমস্যা হয়। তাই যত ব্যস্ততাই থাক এবার একটু চুলের দিকে নজর দিতেই হবে।
• তিন মাস তো চুলের কোনও যত্ন নেওয়া হয়নি এখন কী করণীয়?
•• রুক্ষ বিবর্ণ চুলের সব থেকে ভালো ওষুধ নারকেল তেল। হালকা গরম করে নিন। আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো চাপে স্ক্যাল্প ও চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত মাসাজ করুন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে করে একটা কটন স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে নেবেন। তাহলে বালিশে তেলের ছোপ পড়বে না। পরের দিন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। রোজ না পারলে একদিন অন্তর করলে চুলের স্বাস্থ্য ফিরবে। জেল্লা বাড়বে।
• এখন কি চুলের হাল পাল্টাতে পার্লারে যাওয়া সেফ ?
•• আমি বলব যেটুকু না করলেই নয়, সেইটুকুর জন্য স্যলঁ বা পার্লারে যান। যেমন ধরুন হেয়ার কাট বা হেয়ার কালার করাতে তো যেতেই হবে। কিন্তু যাঁরা হেনা করেন, তাঁরা তো নিজেই বাড়িতে করে নিতে পারেন, তাই না? আর হেয়ার স্পা-ও তো বাড়িতে করে নেওয়া যায়। যতটা কম ক্লোজ কনট্যাক্ট হয় ততই মঙ্গল। হেয়ার স্পা করতে গেলে কিন্তু অনেকটা সময় আপনার বিউটিশিয়ানের সঙ্গে ক্লোজ কনট্যাক্ট হবে, হেয়ার কাট করাতে ততটা হবে না। এখন পার্লারে যা-ই করান না কেন অবশ্যই নজর রাখবেন, যিনি আপনার কাজ করবেন, তিনি আপনাকে ছোঁয়ার আগে হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুচ্ছেন কিনা, সঠিক পরিমাণে স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন কিনা, ফেস মাস্ক ও ফেস শিল্ড পরেছেন কিনা। আপনি নিজেও অবশ্যই মাস্ক পরবেন। বাড়ি ফিরে শ্যাম্পু সাবান দিয়ে স্নান করে নেবেন।
• বাড়িতে কি হেয়ার স্পা করা সম্ভব?
•• সম্ভব। হয়তো নিজে করলে আপনার আরাম কম হবে, কিন্তু স্ক্যাল্প বা হেয়ার কেয়ার কিছু কম হবে না। এক্ষেত্রেও বলব, নারকেল তেল ব্যবহার করুন। দু’চামচ নারকেল তেলে পাঁচ ছ’টা মেথি, এক চিমটি কালো জিরে দিয়ে ফুটিয়ে নিন। হালকা গরম অবস্থায় স্ক্যাল্পে আঙুলের ডগা দিয়ে মাসাজ করুন। চুল খুব ঘন বা লম্বা হলে চুলকে তিন-চার ভাগে ভাগ করে নেবেন। এরপর গরম জলে তোয়ালে ভিজিয়ে ভালো করে নিংড়ে নিয়ে মাথায় বেঁধে রাখুন আধ ঘণ্টা। হালকা সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন কেমন ঝলমল করছে চুল ।
• আপনি নারকেল তেলের কথা বলছেন। কিন্তু যাঁদের খুশকি আছে বা স্ক্যাল্প খুব তৈলাক্ত, তাঁরা কী করবেন?
•• এটাও সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। খুশকি হলে বা স্ক্যাল্প অয়েলি হলে নারকেল তেল ব্যবহার করলে কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। বরং নারকেলের ভেষজ গুণ হেয়ার ফলিকলকে পুষ্টি জোগাবে, চুলকে চকচক করবে। এই প্রসঙ্গে বলি, বাজার চলতি অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু বেশি ব্যবহার করা ভালো নয়। এতে আপনার স্ক্যাল্পের চরিত্রই বদলে যাবে। এটা ঠিক নয়। খুব নাছোড় খুশকি হলে বড় জোর সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করা যায়।
• এই বর্ষার প্রধান সমস্যাই তো খুশকি। পার্লারে গিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্ট যদি এখন না করানো যায়, তাহলে ঘরোয়া সমাধান কী?
•• অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খুশকি থেকে মুক্তির সহজ উপায়। এক চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার নিয়ে তাতে এক চামচ জল মেশান। স্নানের এক ঘণ্টা আগে স্ক্যাল্পে মাসাজ করুন। সালফেট ফ্রি হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা সপ্তায় দু’দিন করলেই হবে। তবে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন রোজ। পাতিলেবুর রসও খুশকি তাড়ানোর কাজে লাগাতে পারেন। একই ভাবে জল মিশিয়ে লাগিয়ে রাখবেন এক ঘণ্টা। তারপর শ্যাম্পু করবেন। খুশকি থেকে অনেক সময় ইনফেকশন হয়ে যায় স্ক্যাল্পে। ছোটো ছোটো ফুসকুড়ি হতে পারে চুলের গোড়ায়। এক্ষেত্রে বিউটিশিয়ান নয়, ডারমাটোলজিস্টকে দেখাবেন।
• বাড়িতে পরিচর্যা করে চুলের চাকচিক্য ফেরানোর আর কোনও উপায় আছে কী?
•• এখন তো বাড়ি থেকে খুব বেশি বেরতে হচ্ছে না। তাই বাড়ির সকলের পাশাপাশি নিজের ডায়েটে নজর দিন। রোজের খাবারে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক সব্জি, ফল, মাছ থাকে। কল বের করা ছোলা মুগ, আমন্ড, টক দই, স্যালাড চুল ও স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ভালো করে। এই সময় প্রতিদিন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আর ভিটামিন সি ট্যাবলেট একটা করে খাবেন। শরীরের ভেতরের পুষ্টি আপনার ত্বকের মতো চুলেও আনবে চেকনাই।
• বর্ষায় চুল শুকনো তো একটা সমস্যা। ড্রায়ার ব্যবহার করা যায়?
•• স্নান করেই যদি বেরতে হয়, তাহলে তো ড্রায়ার দিয়ে শুকোতেই হবে। বাড়িতে থাকলে পাখার হাওয়ায় শুকিয়ে নিন। এই ধরনের জিনিস যতটা কম ব্যবহার করা যায় ততই ভালো। ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকনোর আগে হেয়ার সিরাম লাগাতে ভুলবেন না। এটা চুলকে অনেকটা সুরক্ষা দেয়।
• হেয়ার কালার কি চুলের ক্ষতি করে ?
•• এখন বাজারে অনেক নামী কোম্পানির প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি হেয়ার কালার পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো চুলের খুব ক্ষতি করে না। তবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কালার করাবেন। কালার গার্ড শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন যাতে অনেকদিন রং অটুট থাকে। শুধু স্টাইল করার জন্য বার বার কালার বদল করাবেন না। শুধু চুলের নয়, শরীরেরও ক্ষতি হবে। আর এই সংক্রমণের সময়ে যাঁদের চুল পেকে গিয়েছে, তাঁরাই কালার করান। স্টাইল করার জন্য কালার করানোর সময় এখন নয়। আগে সুস্থ থাকুন, সেফ থাকুন। বাড়িতেই যত্ন নিন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান। দেখবেন আপনার চুলের স্বাভাবিক চাকচিক্য মুগ্ধ করবে প্রিয়জনকে।