পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
তবে কয়েক মাস পরে, কী আশ্চর্য্য! সত্যই একখানা যোগবাশিষ্ট কলিকাতা হইতে নিয়া আসিলেন।
ধারণার অতীত যে, আমার মত একজন কর্মীর জন্য তিনি এতটা করিবেন। যোগবাশিষ্টের মত বই যেকোন দোকানে পাওয়া যায় না; কাউকে দিয়া নিশ্চয়ই খোঁজ করাইতে হইয়াছিল। তারপর পুনরায় গয়া আসার
সময় বইটা সাথে করিয়া নিয়া আসা। বৈরাগ্যমূলক পুস্তক না হইলে
এতটা ঝঞ্ঝাট তিনি নিশ্চয়ই উঠাইতেছেন না। বৈরাগ্যের উপর সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করিবার কত আগ্রহ ছিল তাঁহার! সঙ্ঘসন্তানদের ইহা
বিশেষ অনুধ্যানের বিষয়।
সঙ্ঘ ও বৈরাগ্যের সাধনা
অনুধ্যানের, অনুসন্ধানের ও বিশ্লেষণের বিষয় আরও আছে। কারণ, বৈরাগ্যের সাধনা যে কৃচিৎ দৃষ্ট হয়! একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জনৈক বিশিষ্ট কর্মীকে বলিতে শুনিয়াছি, সে জাতিস্মরের খোঁজে বাহির হইয়াছে। শুনিয়া হাসি পাইল। পূর্বজন্মের কথা জানার কত ঔৎসুক্য। আধ্যাত্মিকতার ভিত্তি যে বৈরাগ্য তা লাভের আগ্রহ কোথায়? ভারতীয় আর একটি যোগী পাশ্চাত্য জগতে নাম ফলাইবার মতলবে তৎপ্রবর্ত্তিত সাধনাপদ্ধতিতে বৈরাগ্যের প্রয়োজনীয়তা নাই, এই কথাই বলিয়া বেড়াইতেছেন। অপর একটি প্রতিষ্ঠান ‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়’—কথাটাই নানাভাবে বলিয়া উচ্চ আধ্যাত্মিকতার কথাই প্রচার করিতেছেন। অপর একটি সাধু আমেরিকায় দাঁড়াইয়া বৈরাগ্য সাধনার নাম মাত্র না করিয়া বিভিন্ন দেশে কতকগুলি আত্মজ্ঞানকেন্দ্র খুলিয়া বেড়াইতেছেন। Robin Kimmerling নামে
একটি ইংরেজ যুবক লন্ডনের একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বলিতে গিয়া
বলিল যে ইংরেজদের ভারতের উপর নির্ভর না করিয়া (অর্থাৎ বৈরাগ্যের সাধনাকে পাশ কাটাইয়া) ভিতর হইতেই আত্মদর্শী পুরুষ বাহির
করিবার চেষ্টা চলিতেছে।
ওকালতি পাশ করা আর একজন সাধু পাশ্চাত্য জগতে একটু
একটু ‘নাম’ করিতেছিলেন মাত্র। তাঁহার ওকালতী বুদ্ধি ও বক্তৃত্বশক্তির উপর নির্ভর করিয়াই একটি ব্যবসায়ী কীর্ত্তনীয়া বৈরাগ্যের দিকে পা পর্য্যন্ত না বাড়াইয়া কেবল কীর্ত্তনের দ্বারাই ইংল্যাণ্ড, আমেরিকা, ওয়েষ্ট ইণ্ডিজ প্রভৃতি দেশে নির্বিচারে কেন্দ্র খুলিয়া ও শিষ্য করিয়া বেড়াইতেছেন।
বক্তব্য এই যে, এই সব প্রতিষ্ঠানের এমন সাধনা নাই, বা সাধনা
একটু আধটু থাকিলেও এই কথা মুক্ত কণ্ঠে বলিবার সাহস নাই যে
‘ভুবি বৈরাগ্যম্ অভয়ম্ কেবল্’।
এই সব প্রতিষ্ঠানের কর্ত্তাদের ভিতর যাঁহারা ঋজু প্রকৃতির ও কতকটা নির্ভরযোগ্য, তাঁহাদের কার্য্যকলাপ কতকটা অধৈর্য্যপ্রবণ রাজমিস্ত্রীর মতো—ভিত্তি গড়িবার কাজে নজর না দিয়া উপর তালার কাজ বাড়ান। বৈরাগ্য শিক্ষাদানের সহিষ্ণুতা নাই, অথচ তত্ত্বকথা প্রচারে খুব ব্যগ্রতা। এ যুগে ধর্মক্ষেত্রে এ একটা অসহায় পরিস্থিতি যে ধর্ম যাঁহারা শিক্ষা দিতে চান তাঁহারাও যেন বৈরাগ্যশিক্ষা বিষয়ে ততটা যত্নশীল নহেন। আচার্য্যদেবের শাসন ও শিক্ষার গতি অন্যরূপ। ধর্মজীবনের ভিত্তি যে বৈরাগ্য
তা তিনি শিক্ষা দিতেন এবং সেই সাথে অব্যক্ত বা অলৌকিক শক্তির সাথে সহজ যোগাযোগ থাকার দরুণ সেই শক্তির উপর নির্ভরও তিনি করিতে পারিতেন ষোল আনা।