হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
এবার আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ বছর। তবু শ্রমিকের অধিকার সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘিত হচ্ছে অসংগঠিত ক্ষেত্রে। করোনার প্রথম দিকে দেশজুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে সেটাই এর সবচেয়ে বড় ও টাটকা উদাহরণ। পরিতাপের বিষয় হল, দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যাওয়ার পরেও সমাজের এই অতি দুর্বল শ্রেণিটি সুবিচার পায়নি। ‘শ্রমিক’ শব্দটির সংজ্ঞা আমাদের দেশে পূর্ণতা পায়নি আজও। গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি আংশিক অর্থই বহন করে। পরিবারের মা, বোন, স্ত্রী প্রভৃতি সদস্যের গৃহকর্মকে ‘শ্রম’ জ্ঞান করা হয় না। ফসলের খেতে, কলকারখানায় কিংবা অফিসের কাজটাকেই শুধু শ্রমদান বলে ভাবা হয়। সেদিক থেকে যুগ যুগ ধরে সবচেয়ে বঞ্চনার শিকার শ্রেণির নাম গৃহকর্মে নিযুক্ত মহিলারা। আধুনিক বিশ্ব মানুষকে আর বোঝা ভাবে না। মানুষই হল আসল সম্পদ—মানবসম্পদ। সেই অর্থে প্রতিটি মানুষের বিশেষ মর্যাদা প্রাপ্য। কিন্তু জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এই যে মহিলারা তাঁদের সম্পর্কে সমাজের ধারণাটি দুর্ভাগ্যজনক। সামাজিক সুরক্ষার ধারণায় তাঁদের অধিকাংশই ব্রাত্য রয়ে যান। শিক্ষিত নারীদেরও এই বন্ধনীর বাইরে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়। সেদিক থেকে প্রথম একাধিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কন্যাশ্রী’ দিয়েই সূচনা। মেয়েদের শিক্ষার অধিকার যে ছেলেদেরই সমান—কন্যাশ্রী কর্মসূচিটি দীপ্ত কণ্ঠে সেটাই ঘোষণা করেছে। সারা পৃথিবী জেনে গিয়েছে, মমতার এই ভূমিকা বাংলার মেয়েদের জীবন বদলে দেওয়ার জন্য একটি সোনার কাঠিতে পরিণত হয়েছে। অতঃপর, মাস কয়েক আগে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে বাড়ির যে-কোনও একজন মহিলাকে ‘পরিবার প্রধান’-এর স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি। পারিবারিক স্বাস্থ্যবিমার ওই কার্ডে মা বা স্ত্রীর অধীন সকলে। এই স্বীকৃতির গুরুত্ব, কোনও সন্দেহ নেই, ঐতিহাসিক!
তৃতীয়বার সরকার গঠনের আগে মমতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাড়ির মহিলাদের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করবেন। এই স্কিমে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাসে মাসে নগদ টাকা (৫০০/১০০০ টাকা) জমা দেবে সরকার। এখন রাজ্যজুড়ে চলছে এটারই আন্তরিক রূপায়ণ। এজন্য বেনিফিসিয়ারিদের দূরে কোথাও যেতে হচ্ছে না। ‘দুয়ারে সরকার’ মাধ্যমে বাড়ির কাছেই তাঁদের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বাড়ির নিকটবর্তী ব্যাঙ্কেই খোলা হচ্ছে তাঁদের অ্যাকাউন্ট। মঙ্গলবার পর্যন্ত হিসেব, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য ৬০ লক্ষাধিক আবেদন গৃহীত হয়েছে। এখনও উৎসাহী নারীদের ভিড় প্রতিটি ক্যাম্পে। কিছুদিন আগে ‘কৃষকবন্ধু’ স্কিমেও দারুণ সাড়া পড়েছিল। ‘দুয়ারে রেশন’ চালু হবে ভাইফোঁটার পরে। সব মিলিয়ে সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে, বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভূমিকা পালন করছেন ভারতীয় প্রশাসনে তার কোনও দৃষ্টান্ত নেই। মোদি সরকারের উচিত, বাংলার এই জনমুখী প্রকল্পগুলির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। অন্য রাজ্যগুলিও এগিয়ে যাক এই নীতি নিয়ে। সামাজিক অসাম্য দ্রুত কমাবার পক্ষে এই নীতি বিশেষ সহায়ক হবে। অদূর ভবিষ্যতে এক সুরক্ষিত সমাজের অধিকারী হতে পারব আমরা।