হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
গণতন্ত্র হল একটি সংস্কৃতির নাম। নিরন্তর অনুশীলনের ভিতর দিয়ে গণতন্ত্র সাবালক ও সাফল্যের পথে এগয়। এই উপলব্ধির ভিতরেই রয়েছে আর-একটি সত্য—ভারতীয় গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা অনেক, রয়েছে অনেক ঘাটতি, ত্রুটি-বিচ্যুতি। নাগরিকদের মধ্যে গণতন্ত্রের স্বাদ আরও বেশি পরিমাণে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তার জন্যে প্রয়োজন ইতিবাচক সংস্কার। অধিক গণতন্ত্রের পথে ওই কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের হাতিয়ার হল মুক্ত মন। যেখানে প্রাধান্য পাওয়া উচিত মর্যাদাপূর্ণ রাজধর্মের অনুশীলন। প্রাচীন রাজারা আর নেই। রাষ্ট্রক্ষমতার অধীশ্বর যিনি, কিংবা যে দল/জোট রাষ্ট্রপরিচালনায় নিযুক্ত তাঁর দায়িত্ব সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করা। এক্ষেত্রে সেটাকেই রাজধর্ম পালনের সমার্থক গণ্য করতে হবে। পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ করা যায়, ভারত রাষ্ট্র তার সংবিধানের অঙ্গীকার রক্ষায় আজও আন্তরিক নয়। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ সীমাহীন বৈষম্য। বৈষম্য আর্থিক, সামাজিক ও আঞ্চলিক। বিতর্ক বিসংবাদের ভিতর দিয়ে বৈষম্যগুলি ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় আছে দেশ। কিন্তু, এই তিনের অসাম্য কবে প্রকৃতপক্ষে দূর হবে তা কারও জানা নেই। তার মধ্যে উঁকি দেয় ধর্মীয় কারণে বৈষম্যের অভিযোগ। ধর্মভিত্তিক বৈষম্যের অভিযোগ মোদি জমানায় গেরুয়াবলয়ে যতটা তীব্র হয়েছে তার পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই। বিজেপি-বিরোধী দলগুলি লাগাতার যার প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে। মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী নাগরিকসমাজও এই সঙ্ঘ-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। এরা সকলেই এখন মোদির পার্টি ও সরকারের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে।
রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ও রক্ষাকে তারা আর রাজনৈতিক লড়াইয়ের গণ্ডিতে আটকে রাখতে চাইছে না। নিখাদ রাজনৈতিক লড়াইকে যথেষ্ট নিরাপদ মনে হচ্ছে না তাদের। রাষ্ট্রক্ষমতা আর শাসকের রাজনীতির মধ্যেকার ব্যবধানটা মুছে যাচ্ছে দ্রুত। সিবিআই, আয়কর, ইডি, সিএজি প্রভৃতি জাতীয় সাংবিধানিক সংস্থাগুলিকে তারা বিরোধীদের সবক শেখানোর উদ্দেশ্যে লাগাতার ব্যবহার করছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত আরও একাধিক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহারের সাক্ষ্যও প্রকট হয়েছে মোদি জমানায়। ইতিপূর্বে যে অভিযোগ ওঠেনি যুক্ত হল এবার সেটাও—ইউপিএসসির মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকেও তারা ব্যবহার করল সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে। ৮ আগস্ট ছিল সশস্ত্র পুলিস বাহিনীতে (সিআরপিএফ) নিয়োগের পরীক্ষা। প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে ‘পশ্চিমবঙ্গের ভোটহিংসা’ বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে! এমনকী, যুক্তি আহ্বান করা হয়েছে ‘কৃষকদের প্রতিবাদ রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত’ মন্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষেও! লক্ষণীয় যে, দুটি ক্ষেত্রেই মোদির পার্টি লোকচক্ষে এক পরাজিত শক্তি। কোনও সন্দেহ নেই, এই জ্বালা জুড়নোর চেষ্টাতেই বাহিনীর গেরুয়াকরণে লক্ষ্যস্থির করেছে সরকার! এর থেকে ভয়ঙ্কর আর কী হতে পারে? ব্যাপারটা সাদামাঠা হলে গোধরা কাণ্ড, নোটবন্দি, গঙ্গায় লাশের মিছিল, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ প্রভৃতি প্রসঙ্গেও প্রশ্ন রেখে দেখতে পারত সংস্থাটি। সবাই বুঝতে পারছে, মোদির এই আপাতত বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপগুলিই গণতন্ত্রকে ক্রমে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। আসলে, দেশের অখণ্ডতা এবং সংবিধানের মর্যাদা রক্ষার সামনে মোদি জমানাই হল সর্ববৃহৎ চ্যালেঞ্জ।