হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
ভারতের আজকের শাসকদের সমস্যা এখানেই। তাঁরা শুরুই করেছেন শব্দের এই মাহাত্ম্য বিস্মৃত হয়ে। সাতবছর অতিক্রান্ত, নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশবাসী ভোলেনি, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার জন্য তিনি কথার জাল বিস্তার করেছিলেন। ২০১৪ লোকসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি তথা গেরুয়া শিবিরের মুখ হিসেবে তিনি দু-বেলা দুরমুশ করেছেন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং মনমোহন সিংকে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন হলেও টানা দশবছরের ইউপিএ সরকারের প্রাণভোমরা ছিলেন সোনিয়া, রাহুল ছিলেন মনমোহনের সম্ভাব্য উত্তরসূরি। অতএব কাউকেই রেয়াত করেননি ভারতীয় রাজনীতির সর্বকালের সেরা ‘সেলসম্যান’ মোদি। দলের মাস্কের আড়ালে তিনি নিজেকে বেচতে একের এক লোকপ্রিয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পুনরাবৃত্তির ত্রুটি মেনেও উল্লেখ করতে হচ্ছে বছরে দু-কোটি চাকরি এবং কালো টাকা উদ্ধার করার পর সব নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা ক্রেডিট করার সেই আষাঢ়ে কাহিনি! কথা রাখার ন্যূনতম উদ্যোগ লক্ষণ যখন অনুপস্থিত তেমনই একসময়, ২০১৬-তে মোদি নাগরিকদের উপর নামিয়ে আনলেন নোটবন্দির নির্মম আঘাত। জিএসটি, আয়কর, তেল ও গ্যাসের উপর অন্যায় সেস আরোপ প্রভৃতি মিলিয়ে ট্যাক্স টেররিজমও মোদি জমানার এক অনন্য ‘উপহার’। তারপরেও ২০১৯-এ পুরনো কুর্সিতে ড্যাং ড্যাং করে ফিরে এসে মোদি জল মেপে নিলেন।
প্রতিপাদিত হল যে ভারতবাসী আসলে সর্বংসহা, দুর্বলস্মৃতি, বিশেষ করে যন্ত্রণা ভুলে যেতে তাদের জুড়ি নেই! তাই তিনি কখনও হুঙ্কার ছাড়েন তাঁর নেতৃত্বে ভারত বিশ্বনেতার আসন অলঙ্কৃত করবে, দেশ অচিরেই উন্নীত হবে পাঁচ ট্রিলিয়ন (মার্কিন) ডলার অর্থনীতিতে! ভাঁড়ে মা ভবানী, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেচে দেওয়ার অতিরিক্ত যিনি ভাবতে পারেন না, সেই তিনিই স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চ থেকে পরপর তিনবার আরও এক বাগাড়ম্বর করেছেন। ২০১৯, ২০২০, ২০২১ পরপর তিনবছর প্রধানমন্ত্রী ১০০ লক্ষ কোটি টাকার পরিকাঠামো নির্মাণের প্রতিশ্রুতি বিলিয়েছেন। তাঁর কথার সারবত্তা থাকলে তিনবছরে মোট ৩০০ লক্ষ কোটির প্রতিশ্রুতি মিলল! একটি প্রতিশ্রুতি পূরণ হলে কিংবা পূরণের মতো বিশ্বাসযোগ্য অগ্রগতি হলেই পরবর্তী প্রতিশ্রুতি প্রদান যুক্তিসিদ্ধ ও বিশ্বস্ত হয়। কিন্তু কোথায় কী! এই সরকার কোষাগার ঘাটতি নিয়ে বরাবর নাজেহাল। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার ব্যর্থতা আর্থিক পরিস্থিতিকে আরও করুণ করে ছেড়েছে। তাই পরিষ্কার যে স্বাধীনতা দিবসের এইসব ঘোষণা বাস্তবায়নের আশু সম্ভাবনা কিছু নেই। এই নির্মম সত্যটি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ভালো কারও জানার কথা নয়। তাই বলতেই হচ্ছে ২০১৩ থেকে বিরামহীন কুণ্ঠাহীনভাবে তিনি যা বলে চলেছেন তা কথার কথা মাত্র। অনৃত ভাষণের শব্দ আর যাই ব্রহ্মতুল্য নয়, কোনও শূন্যগর্ভ সত্তা নন ব্রহ্ম স্বয়ং। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনকে এইভাবে কলুষিত করার মূল্য নরেন্দ্র মোদিকে একদিন দিতেই হবে।