হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
নরেন্দ্র মোদি জমানায় আমাদের অবস্থাটা ওরকম। বাঘের ভয়ও আছে, সাপেরও। আর আমরা সব দেখেও মাথা গুঁজে পড়ে আছি। ঘুরে দঁাড়িয়ে প্রতিবাদ জানানোর অবস্থাটুকুও নেই। এক অদ্ভুত সম্মোহনে যেন বঁাধা পড়েছি। একটাই মন্ত্র আউড়ে যাচ্ছি, হীরকের রাজা ভগবান। গত পাঁচ বছরে ভারতের উপর কী ঝাপ্টাই না গিয়েছে! আর্থিক বৃদ্ধির হার তলানিতে, রেকর্ড বেকারত্ব, তেলের অবাঞ্ছিত দাম বৃদ্ধি, ধনী আর গরিব ছাড়া সমাজে আর কোনও শ্রেণি নেই... তারপরও আমরা হাসিমুখে সহ্য করছি। লড়াই করা এখন আর বোধহয় আমাদের ধাতে সয় না। একবার করে মাটিতে আছড়ে পড়ছি, তারপর কাতরাতে কাতরাতেই স্বপ্ন দেখছি—এবার নিশ্চয়ই মোদিজি ভালো কিছু করবেন। আচ্ছে দিন নিশ্চয়ই আসবে। কংগ্রেস এতদিন সরকারে থেকে সব মাটি করে দিয়েছে। একটু তো সময় দিতে হবে! সংস্কার করছেন তিনি। তাই তো নোট বাতিল! লাইনে দাঁড়িয়ে লোকে অসুস্থ হয়েছে, মারা গিয়েছে... তাতে কী? কত ছোট ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তারা কেউ পাগল হয়েছে, কেউ আত্মঘাতী। সংস্কারের জন্য এতটুকু স্যাক্রিফাইস তো করতেই হয়! আগের কোন প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানকে ঘরে ঢুকে মেরে এসেছে? ইন্দিরা গান্ধীর ব্যাপার আলাদা। তা ছাড়া কাউকে দেখান দেখি! উনি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেন, নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখান। তাই সময় তো দিতে হবে! এখন আবার নতুন ঝঞ্ঝাট—তালিবান ফিরে এসেছে। তাতে কী? ভক্তরা বাজারে নেমে পড়েছে... ‘মোদি থাকতে ভয় কী?’ এটাই যে এখন বিজেপির নতুন স্লোগান। এটাই নয়া গেরুয়া কর্মসূচি। আমরাও ভাবছি, নিশ্চয়ই মোদিজি তালিবানকে উচিত শিক্ষা দেবেন।
এবার বোধহয় আমাদের চোখ দু’টো খোলার সময় এসেছে। তালিবান নিয়ে চতুর্দিকে চর্চা। সবাই ভাবছে, কেমন ঝড় না জানি আসতে চলেছে। কিন্তু একটা কথা বলুন তো, সন্ত্রাসবাদী হামলা কি ১৯৮৯ সালের আগে হয়নি? নাকি ২০০১ সালের পর থেমে গিয়েছিল? দু’টোর একটাও নয়। সন্ত্রাসবাদ হঠাৎ করে জন্মায় না। এর জন্ম দেন রাষ্ট্রনেতারা। নিজ নিজ প্রয়োজনে। তারপর তাকে লালন পালন করা হয়... দিনের পর দিন। এভাবেই কখনও জন্ম নেয় ওসামা বিন লাদেন, কখনও তালিবান, কখনও আবার আইসিস। কাশ্মীর তাদের লক্ষ্য নয়, একথা তালিবান বারবার জানিয়েছে। তারা বলেছে, ওটা ভারত-পাকিস্তানের নিজেদের ব্যাপার। তার মানে, তালিবান আচমকা ভারতের উপর হামলা চালাবে... এটা দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়! তবে হ্যাঁ, বাড়বাড়ন্ত হবে পাকিস্তানের। তালিবানের নেপথ্যে পাকিস্তান বা তাদের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের মদত যে রয়েছে, সেটা কিন্তু ধীরে ধীরে ফাঁস হচ্ছে। শক্তি বৃদ্ধি হচ্ছে জঙ্গিদের। কিন্তু ভারত যে কূটনৈতিক দিক থেকে একঘরে হয়ে যাচ্ছে! সে ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদিজি কী করছেন? ওই চিরচরিত... লবডঙ্কা। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, শূন্য কলসি বাজে বেশি। বিজেপি জানে, যেখানে কাজ মগজাস্ত্রের, সেখানে দাদামশাইকে অবসর দিলে ভালো হয়। কিন্তু তা তো করা যাবে না! তাহলে উপায় কী? কেন, প্রোপাগান্ডা! মোদি থাকতে ভয় কী? বাজারে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে... বিজেপি এটাকেই এবার কাজে লাগাবে। একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। কিন্তু যুদ্ধ নয়। পাল্টা লড়াই ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু লড়াই নয়। কামান না দাগলে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলা যায় না—এটাই নরেন্দ্র মোদির সারসত্য। আর অদ্ভুতভাবে, মানুষ এটা বিশ্বাসও করে?
আসলে যা দেখা যাচ্ছে, তা নয়। বরং তার উল্টোটা। সোজা কথায় আপাত বিপরীতধর্মী। এর একটা খুব সুন্দর ইংরেজি রয়েছে—প্যারাডক্সিক্যাল। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য এই শব্দটি দারুণ ব্যবহার করেছিলেন শশী থারুর। বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসা, প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি এবং দিনের শেষে দেশবাসী হাতে কী পেল? লবডঙ্কা। বইয়ের পরতে পরতে এই ব্যাখ্যাটাই রেখেছিলেন শশী থারুর। এবং লেখনিতে ছিল তাঁর হতাশা... মানুষ কেন প্রতিরোধ করছে না! সেই হতাশা কিন্তু আজও রয়েছে। দেশবাসী আজও ফাইট ব্যাক করছে না। বুঝছে না, এই লড়াই আমাদের বেঁচে থাকার।
কিন্তু প্রতিরোধ হবে কীভাবে? গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের একমাত্র স্থান সংসদ ভবন। সেখানে আমরাই বিজেপিকে পাঠিয়েছি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ডালি সাজিয়ে। দুর্বল কংগ্রেস... বিরোধিতা মানে কিছু হই হট্টগোল। বা ওয়াক আউট। তার মাঝেও পাশ হয়ে যাচ্ছে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিল। বিরোধী দলগুলি চাইছে না... তা বয়েই গেল! রিমোট কন্ট্রোল যে মোদিজির হাতে! তিনি যেমন চাইবেন, তেমনটাই হবে। বিজেপির এমপিদের তিনি হুইপ জারি করবেন, অধিবেশনে উপস্থিত থাকতেই হবে। কিন্তু তিনি
নিজে থাকবেন না। হাজিরা দেবেন না অমিত শাহও। তাঁরা সব নিয়মের, সব হুইপের বাইরে। সমাজের ধাপে ধাপে সংরক্ষণের বোঝা বাড়বে। আর মোদিজি তখন ওলিম্পিকসে পদকজয়ীদের সঙ্গে সেলফি তুলবেন, তাঁদের কাউকে আইসক্রিম, কাউকে চুর্মা খাওয়াবেন। সমালোচনা? ভুলেও না। ওলিম্পিক গেমসের পদকজয়ীরা যে দেশের গর্ব! তাঁদের সময় তো দিতে হবে নাকি! অধিবেশন এমনিই চলবে, বিল আপনা থেকেই পাশ হবে। আর মানুষ অসহায়ভাবে দেখবে। আমরাই যে এঁদের সংসদে পাঠিয়েছি।
তাই তো এরা বলার সাহস পায়, তেলের দাম
বেশি মনে হলে আফগানিস্তানে চলে যাও। ওখানে পেট্রল-ডিজেল সস্তা। এই স্পর্ধা তাঁদের জুগিয়েছি আমরা। তারা পদে পদে বুঝিয়ে দেয়, চুপ! দেশ চলছে। আর এভাবেই চলবে। এটাই ভারতের নিয়তি। এঁরা একবার বলবেন, রাজ্যভাগে সরকারের সায় নেই। আবার এঁরাই তারপর ভোটব্যাঙ্কের কথা
ভেবে বিচ্ছিন্নতাবাদের আগুনে ধুনো দেবেন।
সময় এলে হাসিমুখে বলবেন, মাসিমা ভোটটা কিন্তু পদ্মেই দেবেন! কিন্তু সেই বিজেপি নেতা কি জানেন, মাসিমা অনেক আশায় উজ্জ্বলা গ্যাস নিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, এবার একটু সুরাহা হল। কিন্তু
একটা সিলিন্ডারেই তাঁর সব মোহ ঘুচে গিয়েছিল। প্রতি মাসে বাড়ছে গ্যাসের দাম। সাড়ে আটশো টাকা ছাড়িয়েছে। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর ঘর। গ্যাস
যে সেখানে বিলাসিতা! কিন্তু মাসিমা আজ
আবার গ্যাস নেওয়ার কথা ভাবছেন। কেন জানেন? বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ঘরে ঘরে মাসে ৫০০ টাকা করে দিচ্ছেন... লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। এই ৫০০ টাকার সঙ্গে কিছু টাকা জুড়ে গ্যাসটা নেওয়া যাবে।
আমরা সাধারণ মানুষ। মিটিং-মিছিল, বিক্ষোভ-আন্দোলনে নামলে আমাদের ঘর চলবে না। কিন্তু গণতন্ত্র আমাদের ফাইট ব্যাক করার সুযোগ দিয়েছে... নির্বাচন। মাসিমা তাঁর প্রতিবাদটা ওই যন্ত্রেই জানাবেন। এই নতুন ভারত তাঁর চাই না। মহাত্মা গান্ধী এই ভারত চাননি। যেখানে ধর্মের নামে, জাতপাতের নামে ভোটের নগ্ন রাজনীতি চলে। শাসক দলের কিছু চশমখোর হিন্দুত্বের নামে মানুষকে শাসায়। মোদিজি আপনি তো নিজেকে স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত বলে দাবি করেন! সেই মহাপুরুষের কাছে হিন্দুত্বের সংজ্ঞা কী ছিল জানেন? যার যা ধর্ম, যার যা বিশ্বাস, তাকে তার মতো করেই গ্রহণ করা।
আগুনের মধ্যে বসে আছি আমরা। রিমোট কন্ট্রোলে চাপ বাড়ছে। আর তার জেরে গনগনে হয়ে উঠছে আঁচ। ধীরে ধীরে। সইয়ে সইয়ে। কিন্তু সময় এসে গিয়েছে। শরীর এখন পুড়ছে। এখনই ঝাঁপ দিতে হবে। কারণ আগুনের বাইরেই অপেক্ষা করে রয়েছে আচ্ছে দিন। এখনই সময় উল্টো স্লোগানের... ‘মোদি থাকতেই যে ভয়!’