হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
প্রশ্ন একটাই ২০ বছর ধরে আধুনিক জীবনের পাঠ ও উৎসাহ দিয়ে হঠাৎ আমেরিকার এই রণে ভঙ্গ দেওয়া কেন? ৩১ আগস্টের চুক্তি করার আগে হোয়াইট হাউসের কি ভাবা উচিত ছিল না, কত বড় বিপর্যয় হতে চলেছে। এত দ্রুত এ কাজটা করলে তার পরিণাম কী হতে পারে তা কেউ ভেবে দেখলেন না। সিআইএ-কে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম সেরা গোয়েন্দা বাহিনী। আর মার্কিন বিদেশ দপ্তর পৃথিবীর অলিগলিতে কী ঘটছে সবকিছু সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাহলে মার্কিন গোয়েন্দারা এই ঝড়ের বেগে পালা বদলের কণামাত্র আঁচও কি আগাম পাননি। নাহলে কী করে পশ্চিমী গণমাধ্যম আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহেও বুক ফুলিয়ে বলে যে এখনও তিন থেকে চার মাস বাকি কাবুল দখলের। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, মাত্র ৯৫ হাজার তালিবান জঙ্গি কোনওমতেই তিন লক্ষ সশস্ত্র আমেরিকার মদতপুষ্ট আফগান সেনার সঙ্গে মোকাবিলায় পারবে না। সিআইএ-কি তাহলে ভুল খবর দিয়েছিল। নাকি যেমন করে ১০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র আখেরে তালিবান জঙ্গিদের হাতেই চলে গিয়েছে। তেমনি সিআইএ-র গোয়েন্দারা ও তাদের লোকাল সোর্স আড়াল থেকে জঙ্গিদের হয়েই কাজ করেছে। সোজা কথায় বিক্রি হয়ে গিয়েছে। হোয়াইট হাউস টেরও পায়নি। কিংবা সব জেনেও না জানার নাটক করেছে তেলের স্বার্থে। কিন্তু যাই ঘটে থাকুক বলতেই হবে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর এত বড় কূটনৈতিক ও বিদেশনীতির বিপর্যয়ের মুখোমুখি মার্কিন প্রশাসন হয়নি। আর হয়নি বলেই পশ্চিমী দুনিয়া এখনও একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যে জলে গিয়েছে তা বলতেও এত অস্বস্তি কীসের। শুধু অস্ত্র নয় যুদ্ধ বিমান, সেনা পরিকাঠামো তৈরির জন্য গড়ে তোলা বড় বড় বাড়ি, প্রশিক্ষণ শিবির, সেনা কার্যালয় নাকি আদৌ ব্যবহার করাই হয়নি। দেখা যাচ্ছে, অন্তত ১৬টি মার্কিন যুদ্ধ বিমান এখন তালিবানের কব্জায়। সঙ্গে অসংখ্য রকেট লঞ্চার আর ট্রাক বোঝাই আধুনিক কালশনিকভ বন্দুক। পরিত্যক্ত সেনা শিবিরগুলিতে ঢুকে জঙ্গিরা মাঝে মাঝে একটু জিরিয়েও নিচ্ছে বিনা বাধায়। তাহলে কি দু’দশক ধরে ঘুরিয়ে জঙ্গিদেরই হাত শক্ত করেছে আমেরিকা। সেক্ষেত্রে এই সন্ত্রাস বিধ্বস্ত দেশটার নতুন এই সঙ্কটের দায় কি বাইডেন প্রশাসন এড়াতে পারে? আর অল্প ক’দিন পরেই (১১ সেপ্টেম্বর) মার্কিন মুলুকে লাদেন বাহিনীর ভয়ঙ্করতম হামলার কুড়ি বছর পালিত হবে, সেখানে প্রেসিডেন্ট বুশের সেই ভাষণ কী বাজিয়ে আর একবার শুনবে উত্তরসূরি বাইডেন প্রশাসন? ‘গর্ত থেকে খুঁজে এনে মারব’। আমেরিকা অবিলম্বে এর বিহিত না করলে লাদেনের ভূত যে তাড়া করবে হোয়াইট হাউসকে।
লাদেনকে আমেরিকা নিকেশ করেছে দশ বছর আগে পাকিস্তানে ঢুকে। ২ মে ২০১১। তখন বলা হয়েছিল ওদের কোমর ভেঙে গিয়েছে, আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। মোল্লা ওমরের মৃত্যু সংবাদ কতবার ছাপানো হয়েছে, তার হিসেব কে রাখে। এখনও বলা হয়, ওসব ভুয়ো খবর মোল্লা আজও জীবিত! আসলে এতকিছুর পরও এই একুশ সালে তালিবানের এই চমকে দেওয়া উত্থান শুধু আমেরিকাই নয়, ভারত সহ বিশ্বের এক বিরাট অংশের শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে অশনিসঙ্কেত। জঙ্গিদের জয়োল্লাস কখনও সুস্থ মানুষের পক্ষে সুখকর বার্তা বয়ে আনতে পারে না। এক্ষেত্রেও তাই।
আমেরিকাকে একটাই প্রশ্ন তালিবানের সৃষ্টি কর্তা কে? আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ১০২ বছরের। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বছরেই ব্রিটিশ শাসকদের হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল দেশটি। সেদিক দিয়ে ওরা আমাদের চেয়ে ২৮ বছরের সিনিয়র। কিন্ত কোনওদিনই সেভাবে থিতু হতে পারেনি। আর তাই বারে বারে শাসক বদলেছে, আর সেইসঙ্গে বদলেছে পতাকার রংও। কেউ বলে ১৮ বার আবার কেউ বলে ৩০ বার বদলে গিয়েছে দেশের জাতীয় পতাকা। মধ্যিখানে ১৯৭৯ থেকে ৮৯ প্রায় দশ বছর দেশটা ছিল রাশিয়ার কব্জায়। তখন থেকে আমেরিকা আফগান সন্ত্রাসবাদীদের সাহায্য করেছিল, ঠিক যেমন আজ চীন আর রাশিয়া জঙ্গিদের সমর্থনে উদ্বাহু হয়েছে তেমনি। আর ১৯৯০ থেকে তালিবানের দৌরাত্ম্য ক্রমশ বাড়তে থাকে। তাই অনেকেই বলে থাকেন আমেরিকার মদতে সৃষ্ট তালিবান ২০০১ সালে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন হয়েই টুইন টাওয়ারে হামলা করে যোগ্য জবাবই দিয়েছিল। পেন্টাগনকে বুঝিয়ে দিয়েছিল আগুন নিয়ে খেলার পরিণাম। তারও দু’বছর আগে ১৯৯৯ সালে বাজপেয়িজির আমলে ভারতের যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে কান্দাহারে নিয়ে গিয়েছিল পাক মদতপুষ্ট আফগান জঙ্গিরা। খোদ বিদেশমন্ত্রীকে বিমানে করে গিয়ে তিন জঙ্গিকে মুক্তি দিতে হয়েছিল। সেই তালিকায় ছিলেন মাসুদ আজহার, মুস্তাক আহমেদ জারগার ও আহমেদ ওমর সইদের মতো কট্টর সন্ত্রাসবাদীরা।
কিন্তু ওই যে বললাম ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে। পরীক্ষা নেয়। একটা গোটা দেশ যদি এত কম সময়ে তালিবানরা দখল করতে পারে তাহলে পাকিস্তান দখল করতেও কি খুব বেশি সময় লাগবে? এটাই আজ ভারতের কাছে কোটি টাকার প্রশ্ন। পাকিস্তানের কথা এইজন্য বলছি কারণ আফগানিস্তানের হাতে পরমাণু অস্ত্র নেই। ইসলামাবাদের আছে। পাকিস্তান যদি আজ নয় কাল তালিবানের হাতে চলে যায় তাহলে আরও বিপদ অনিবার্য। অনেকটা সময় বিদেশে কাটানো ধোপদুরস্ত ইমরান খানকেও যেভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে তালিবানের জয়গান করতে দেখা যাচ্ছে তাতে ভয় ও আশঙ্কা, দুই জাগা স্বাভাবিক। পাকিস্তান তালিবানের হাতে গেলে তা আমেরিকা ও ভারতের পক্ষে মোটেই সুখকর অভিজ্ঞতা হবে না। বলাই বাহুল্য পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির পরিস্থিতিতে চীন ও রাশিয়া যে কোনও কারণেই হোক এখন পাকিস্তানকে এবং ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদের পিছন থেকে সবরকম মদত দিয়ে যাবে। তার সবচেয়ে বড় কারণ যে কোনও মূল্যে তারা এখন আমেরিকাকে কোণঠাসা দেখতে চায়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রশক্তি তালিবানের হাতে যাওয়া রুখতে তাই সর্বশক্তি দিয়ে রুখতে হবে। বিশ্বজনমত যেমন গড়ে তুলতে হবে তেমনি ভারতীয় গোয়েন্দা এজেন্সিকেও পূর্ণ দমে কাজে লাগাতে হবে। সেক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারের চাপ আরও বহুগুণ বাড়বে। এমনিতেই কাশ্মীর আমাদের চিরস্থায়ী একটি সমস্যা। তালিবানরা পাকিস্তানের দখল পেলে সেখানে জঙ্গি উপদ্রব কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তাই ২০০১-এ যেভাবে তৎকালীন বুশ প্রশাসন তালিবানদের কোমর ভাঙতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এবারও তাই করতে হবে। নাহলে সন্ত্রাসবাদ আর একবার মানব সভ্যতাকে বিপন্ন করবে। চুক্তির দোহাই দিয়ে পার পাবে না ওয়াশিংটনও।