হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
লালকেল্লার দুর্গপ্রাকার থেকে স্বাধীনতা দিবসের অভিভাষণটি জওহরলাল নেহরুর জমানা থেকেই বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। আমি এটাকে বলি জাতির পরিস্থিতি বিষয়ক ভাষণ (স্টেট অফ দ্য
নেশন স্পিচ)। নেহরুর এই একটি ঐতিহ্যকে নরেন্দ্র মোদি অসম্মান বা খারিজ করেননি। তবে
নরেন্দ্র মোদির ক্ষেত্রে ১৫ আগস্টের ভাষণগুলি তার তাৎপর্য হারিয়েছে। কারণ এগুলি নির্বাচনী জনসভায় প্রদত্ত তাঁর ভাষণের থেকে খুব একটা আলাদা
হয় না। তফাত বলতে, বিরোধীদের উদ্দেশে তাঁর নিক্ষিপ্ত বিদ্রুপগুলি (যেমন—দিদি-ও-দিদি) এই ভাষণে অনুপস্থিত।
নরেন্দ্র মোদির অষ্টম ভাষণটির সাংরাংশের উপর নজর রাখব। এটা ছিল মূলত তাঁর সরকারের ‘সাফল্য’ বিষয়ে রোমন্থন। পরিতাপের বিষয় এই যে, সংবাদ মাধ্যমের অধিকাংশই প্রধানমন্ত্রীর এইসমস্ত দাবির সত্যাসত্য যাচাই (যেটা যুক্তরাষ্ট্রে হয়ে থাকে) করতে আগ্রহী নয়। প্রফেসর রাজীব গৌড়ার নেতৃত্বে তরুণদের একটি দল এই যাচাইয়ের কাজটি করেছে। তাঁদের পর্যবেক্ষণের কিয়দংশ আপনাদের সঙ্গে আমি শেয়ার করতে চাই।
মহামারী প্রাণিত করেছে
ভারতীয়রা করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইতে আমাদের সামনে কতকগুলি চ্যালেঞ্জ ছিল, তার প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি ঘটেছে। এই পর্বের সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা আত্মনির্ভর হয়েছি ... ভারতে চলছে বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযান।
মৃত্যুর সরকারি হিসেব (৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ৬২২ জন) অনুসারে, করোনায় এটাই পৃথিবীর তৃতীয় বৃহৎ প্রাণহানির ঘটনা। কিন্তু অনেকগুলি
স্বাধীন সমীক্ষা থেকে সরকারি সংখ্যাটি ফাঁস হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সর্বসম্মত অভিমত হল, মৃতের সংখ্যাটি বাস্তবে অন্তত দশগুণ বেশি! সেই হিসেবে, মৃতের সংখ্যায় সব দেশের মধ্যে ভারতই শীর্ষে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আমরা ভীষণভাবে বিভিন্ন দেশের সাহায্য প্রার্থনা করেছি এবং
৪০টির বেশি দেশের সাহায্য আমরা নিয়েওছি। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, ভেন্টিলেটর, টেস্টিং কিট প্রভৃতি দিয়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে। ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে দেখুন: ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’র গর্বটাকে এই সরকার স্রেফ কবর দিয়েছে। ভ্যাকসিন রপ্তানি বন্ধ করেছে। তার ফলে কিছু
দেশ ভ্যাকসিন পায়নি, ড্রাই হয়ে গিয়েছে, বিপন্ন বোধ করেছে। অন্যদিকে, নিজের দেশের জন্য রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভিক্ষাপাত্র নিয়ে দাঁড়িয়েছে। সবার আগে বলতে হবে যে, ভ্যাকসিন বা টিকার ব্যাপারে আত্মনির্ভরতার দাবি করার কোনও যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি মোদির ভারত। ধন্যবাদ যে, সরকার স্পুটনিক ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে এবং অন্য কয়েকটি বিশ্বমানের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকের সঙ্গে যোগাযোগ
করেছে তাদেরগুলি পাওয়ার জন্য। ভ্যাকসিন জোগানে স্বল্পতার কারণে টিকাকরণ কর্মসূচি যথারীতি ব্যাহত হচ্ছে। এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে জানাতে পারি যে, একটি ডোজ টিকা পেয়েছেন ৪৪ কোটি ১ লক্ষ ২ হাজার ১৬৯ জন ভারতীয় নাগরিক। আর দুটি ডোজ পেয়েছেন ১২ কোটি ৬৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ২৬৪ জন। ডিসেম্বর, ২০২১-এর ভিতরে পূর্ণবয়স্ক সমস্ত নাগরিকের (৯৫-১০০ কোটি) টিকাকরণ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যটি শেষমেশ পরিত্যক্ত হয়েছে।
ভারত ৮০ কোটির বেশি মানুষকে খাদ্যশস্য দিয়েছে। পৃথিবীজুড়ে আলোচনা হচ্ছে এটি।
গড়ে পাঁচজনের একটি পরিবার ধরলে সারা ভারতে পরিবারের মোট সংখ্যা প্রায় ২৭ কোটি।
যদি ৮০ কোটি নাগরিক মাথাপিছু ৫ কেজি হারে খাদ্যশস্য পেয়ে থাকেন তবে ফুড কর্পোরেশনের (এফসিআই) মজুত হ্রাসের উপরে তার প্রভাব পড়বে। চাল ও গমের মজুত বার্ষিক হ্রাসের পরিমাণ ২০১২-১৩ সালের ৬ কোটি ৬০ লক্ষ টন থেকে ৬ কোটি ২০ লক্ষ টন হয়েছিল ২০১৮-১৯ সালে
এবং ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টন হয়েছিল ২০১৯-২০ সালে। ২০২০-২১ মহামারীর বছরে এটা বেড়ে হয়েছিল ৮ কোটি ৭০ লক্ষ টন। এর অর্থ হল, সমস্ত ইচ্ছুক উপভোক্তা বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পাননি। আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষায় প্রকাশ যে, মাত্র ২৭ শতাংশ পরিবার ৫ কেজি খাদ্যশস্য বণ্টন কর্মসূচির (গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা) পূর্ণ সুযোগ পেয়েছে। ১০৭টি দেশের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স) ভারতের স্থান ৯৪—মনে রাখতে হবে।
‘সবার জন্য শৌচাগার’ কর্মসূচির লক্ষ্য পূরণের মতো আমাদের অন্যসকল কর্মসূচিরও ১০০ শতাংশ রূপায়ণ চাই।
‘সবার জন্য শৌচাগার’ হল একটি অসার দাবি। ‘নির্মিত’ হাজার হাজার শৌচাগারের অস্তিত্ব নেই অথবা সেগুলি গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ অনুসারে, পাঁচ রাজ্যের গ্রামীণ জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশি বাড়িতে কোনও শৌচাগার নেই! জাতীয় পরিসংখ্যান সংগঠনের (এনএসও) ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, গ্রামীণ জনসংখ্যার ২৮.৭ শতাংশের শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ নেই এবং ৩২ শতাংশ খোলা মাঠেই মলত্যাগে অভ্যস্ত!
আগামী বছরগুলিতে আমাদের দেশে কতকগুলি নতুন অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি হবে।
কিছু সরকারি হাসপাতালে পিএসএ অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। কিন্তু তার জন্য দরপত্র আহ্বান করা
হয় আটমাস পরে। গত ১৮ এপ্রিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক
থেকে ট্যুইট করে জানানো হয়, প্রস্তাবিত
১৬৩টি অক্সিজেন প্লান্টের মধ্যে মাত্র ৩৩টি বসানো হয়েছে। প্রস্তাবিত সংখ্যার মধ্যে কয়েকটি অবশ্য পরবর্তীকালে যোগ করা হয়। স্ক্রল নামে একটি
মিডিয়া সংস্থার অনুসন্ধানে প্রকাশ যে, মাত্র পাঁচটি অক্সিজেন প্লান্ট চালু রয়েছে।
আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য আমরা ১০০ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভেবেছিলেন, কারও মনে
নেই যে তিনি ওই একই স্থান থেকে আরও দু’বার একই ঘোষণা করেছিলেন: ১৫ আগস্ট, ২০১৯ এবং ১৫ আগস্ট, ২০২০। আগামী ১৫ আগস্ট,
২০২২ তারিখেও তিনি একই কাণ্ড করতে পারেন। আমরা অবশ্যই খুশি যে, পরিকাঠামো লগ্নির পরিকল্পনা, অদৃশ্যভাবে, বছরে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা হারে এগচ্ছে!
আরও আছে, কিন্তু এ বড় একঘেয়ে কারবার। অতএব আর নয়।
ঘটনাগুলি ঘ্যানঘেনে এবং বিরক্তিকর। ঝুটা জিনিস হল একসাইটিং। সত্যাসত্য যাচাই ব্যাপারটা বিপজ্জনক, নকল বিক্রিবাটা বেশ রোমাঞ্চকর। কীসে আপনার দেশ মহান হবে এবং উজ্জ্বল হবে আপনার দিন—সেটা আপনিই বেছে নিতে পারেন।
লেখক সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত