হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
তালিব শব্দের অর্থ ছাত্র। তালিবান মানে ছাত্র সমাজ। অর্থাৎ যুবশক্তি ছিল তালিবানদের শক্তির উৎস। আফগান সৈন্যের সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ, অন্যদিকে তালিবানদের শক্তি ছিল মাত্র ৭৫ হাজার। তবুও আফগান সরকারের এই পরাজয় বিস্ময়কর। প্রথম তালিবান সরকারকে হটিয়ে গত বিশ বছর আমেরিকার নেতৃত্বে আফগান সরকার পরিচালিত হয়েছে। প্রথম দিকের কয়েক বছর ছাড়া আফগান সরকার ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বার্থান্বেষী, পরনির্ভরশীল। আমেরিকার একটি পুতুল সরকার। দু’দশকে লাভ বলতে মুক্ত বাতাস। মানুষকে বিশেষ করে নারীসমাজকে শৃঙ্খলামুক্ত করে প্রকৃত স্বাধীন করে তোলা। এই সময়কালে আফগানবাসিন্দারা বিশ্বের অন্যান্য নাগরিকদের মতোই পথেঘাটে, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজে যাওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বহু আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং আধুনিক জীবনের উপযুক্ত দ্রব্য সামগ্রী, শপিং মল, সিনেমা হল প্রভৃতি। মেয়েরাও উপযুক্ত পোশাকে ফুটবল, ক্রিকেট সহ অন্যান্য খেলায় মেতে উঠেছিল, অংশ নিয়েছিল ওলিম্পিকস সহ বহু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। নবীন হলেও ক্রিকেটে আফগানিস্তান এখন একটা বিশ্ব শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ১৫ আগস্ট দ্বিতীয় তালিবান সরকার গঠিত হওয়ার ফলে এ সবকিছুই প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়াল বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ তালিবানদের পক্ষে ইতিমধ্যেই ফতোয়া জারি হয়েছে ১০ বছরের ঊর্ধ্বে কোনও বালিকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে না, মেয়েদের সর্বাঙ্গ ঢাকা হিজাব পরতে হবে, পা খোলা চপ্পল পরা চলবে না, কোনওভাবেই মেয়েদের পায়ের
পাতা যেন দেখা না যায়, পুরুষসঙ্গী ছাড়া তারা বাড়ির বাইরে বেরতে পারবে না ইত্যাদি। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত মেয়েদের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে,
১৫ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত বিধবাসহ অবিবাহিত মেয়েদের একটি তালিকা করা হয়েছে, তালিবান সেনাদের বিয়ে করতে যাদের বাধ্য করা হবে। এর প্রকৃত অর্থ সেনা ছাউনিতে যৌনদাসী হয়ে থাকা। অর্থাৎ নারী এখন থেকে আবার হবে পুরুষের ভোগ্য এবং প্রজননযন্ত্র মাত্র। ওই ফতোয়াতেই পুরুষদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে পুরুষেরা
দাড়ি কাটতে পারবে না, প্যান্ট-শার্ট সহ পশ্চিমী পোশাক পরতে পারবে না, পশ্চিমী গান বা বাদ্যযন্ত্রসহ সঙ্গীত
করতে বা শুনতে পারবে না এবং নারী, পুরুষ সবাইকেই কঠোরভাবে শরিয়ত আইন মেনে চলতে হবে। এক কথায়, মানবাধিকারের সমাধি রচিত হল।
পাকিস্তানের লাভ-ক্ষতি
সরল পাটিগণিত অনুসারে, পাকিস্তান ভাবছে তার অনেক লাভ। সবচেয়ে বড় লাভ চিরশত্রু ভারতকে বিশ্ব রাজনীতিতে কোণঠাসা করা, আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত করা এবং স্বপ্ন দেখছে তালিবানদের দিয়ে কাশ্মীর দখল করার। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্ক তো সরল পাটিগণিতের পথে চলে না। হ্যাঁ, আপাতত কিছু লাভ ঘরে তুলবে পাকিস্তান, কিন্তু শীঘ্রই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরবে, যা পাকিস্তান কল্পনাও করতে পারছে না। চীনের দেওয়া অর্থ, অস্ত্র এমনকী তালিবানদের প্রশিক্ষণ সবই পাক বাহিনীর মাধ্যমে হয়েছে। এটা আজ আর গোপন কিছু নয়। কিন্তু, এর মাশুল গুনতে হবে পাকিস্তানকেই। কারণ তার বড় উদাহরণ ওসামা বিন লাদেন। আফগানিস্তানে রাশিয়ার প্রভাবকে প্রতিরোধ করতে আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদতে তৈরি হয়েছিল আল কায়দা এবং লাদেন। তার ফল আজ সকলেরই জানা। ইতিমধ্যেই আফগান-তালিবানরা পাকিস্তানে সৃষ্ট এবং সংগঠিত তালিবান যেসব গোষ্ঠীকে পাকিস্তান নিষিদ্ধ করেছিল সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। যতদূর খবর, ইতিমধ্যেই তারা পাক রাজপথে প্রকাশ্যে মিছিল করেছে। তাছাড়া তালিবানরা ভোলেনি পাকিস্তানের সম্মতিতেই পাকিস্তানে ঢুকে লাদেনকে আমেরিকা হত্যা করেছে। তারা ভোলেনি পাক-আফগানিস্তান সীমান্তে পাক ঘাঁটি থেকে উড়ে আসা মার্কিন বিমান কয়েকজন নেতা সহ হাজার হাজার তালিবানকে হত্যা করেছে। তাছাড়া তালিবানদের মধ্যে একটা বড় অংশ হল পাখতুন। পাকিস্তানের একটি প্রদেশে এদের যথেষ্ট প্রভাব আছে। তালিবানদের সাহায্যে এরাই যে একদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করবে না তাই-বা কে বলতে পারে! এটাও অনস্বীকার্য যে পাকিস্তানের শাসনভার প্রকৃতপক্ষে পাক সরকারের উপর নির্ভর করে না। এর মুখ্য নিয়ন্ত্রক পাক সেনা বাহিনী এবং মোল্লাতন্ত্র যারা আবার নারী স্বাধীনতা এবং বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষার বিরোধী। তাদেরও পছন্দ তালিবানি ধাঁচের কঠোর শরিয়ত আইন। তাই আজও পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে অপরাধী সন্দেহে পাথর ছুড়ে হত্যা এবং অঙ্গচ্ছেদ প্রায়ই ঘটে চলেছে। সুতরাং, তালিবান জঙ্গিদের মদত একদিন পাকিস্তানেই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে। একথা আগাম এবং নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
লেখক সুরেন্দ্রনাথ কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক।
মতামত ব্যক্তিগত