হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
যাঁরা নরেন্দ্র মোদিকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন, তাঁরা জানেন তরুণদের মধ্যে খেলাধুলো ও খেলাধুলোর সংস্কৃতির প্রতি উৎসাহ জোগাতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কতটা আবেগপ্রবণ। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি ‘খেলা মহাকুম্ভ’-এর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই উদ্যোগ তৃণমূল পর্যায়ের ক্রীড়া ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী গুজরাতকে এমন এক রাজ্যে উন্নীত করেছিল, যা শুধুমাত্র ঐতিহাসিকভাবে ক্রীড়া শ্রেষ্ঠত্বের পরিচিতিই এনে দেয়নি, এমন এক পদ্ধতি ছিল যার মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদি খেলাধুলো ও খেলোয়াড়দের সমর্থনও জুগিয়েছিলেন। এই যুক্তি দিয়েই আমি বলতে পারি, তিনিই ভারতের প্রথম ও সর্বোত্তম ‘ক্রীড়াবিদদের প্রধানমন্ত্রী’!
কিছুদিন আগে, ২০১৩ সালের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেই ভিডিওতে দেখা গেছে নরেন্দ্র মোদি পুনে কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সেখানে তিনি দুঃখপ্রকাশ করে বলেছিলেন, ভারত একটি বিশাল এবং প্রতিভাবান জনসংখ্যার দেশ। এখানে ক্রীড়া শ্রেষ্ঠত্বের ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু আমরা ওলিম্পিকসের পর ওলিম্পিকসে শুধুমাত্র পদক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। তিনি বলেছিলেন, আমাদের মতো একটি দেশে ওলিম্পিকসে সাফল্য থেকে বঞ্চিত থাকার কোনও কারণ নেই। কিন্তু তাঁর মতে, সমস্যাটি খেলোয়াড়দের নয়। বরং খেলাধুলোর প্রতি সমর্থন ও যথাযথ মর্যাদালাভের সঠিক সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে আমাদের অক্ষমতা রয়েছে। পুরুষ ও মহিলা হকি দলের রেকর্ড বলে দিচ্ছে যে, পরাজয়ের পরেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে বার্তালাপ তাদের মনোবল বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ২০১৯ সালে ফিরে আসি, যখন নীরজ চোপড়া গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছিলেন, যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।
যখন খেলাধুলোর কথা আসে তখনই বোঝা যায় প্রধানমন্ত্রী মূল সমস্যা বুঝতে পেরেছেন। অনেকের খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ রয়েছে, কিন্তু যখন সাহায্য এবং অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ আসে তখন এর মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকে। ওলিম্পিক বিজয়ীদের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি জানান, “খেলাধুলোয় সাম্প্রতিক সাফল্য দেখে আমি আত্মবিশ্বাসী যে এর প্রতি অভিভাবকদের মনোভাব পরিবর্তন হবে।” এই মন্তব্যটিতে সত্য এবং আশা উভয়ই ছিল। যখন বাবা-মায়েরা ভারতে পদকের সংখ্যা বাড়তে দেখেন, তখন আশা করেন যে তাঁরা অবশ্যই তাঁদের সন্তানদের খেলাধুলো করার জন্য আরও সুযোগ করে দেবেন। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, যখন তাঁরা দেখবেন সরকারের সমস্ত শাখা, কর্পোরেট ক্ষেত্র আমাদের খেলোয়াড়দের সাহায্য জোগাচ্ছেন, তখন তাঁরা বুঝতে পারবেন খেলাধুলো একটি আকর্ষণীয় বিষয় এবং এখানে একটি সম্মানজনক জীবন গড়ে ওঠে।
ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রের সাফল্যকে আরও উন্নত করার বিভিন্ন উপায়ের মধ্যে একটি হল ‘এক দেশ এক খেলা’। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের রাজ্যগুলিকে উৎসাহিত করা; যাতে তারা তাদের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের পরিকাঠামোর সুযোগ সুবিধা, আবহাওয়ার পরিস্থিতি, খেলাধুলোর প্রতি স্বভাবসিদ্ধ আগ্রহ এবং উপস্থিত প্রতিভার উপর ভিত্তি করে একটি বিশেষ খেলা বা কয়েকটি খেলাধুলোয় (অন্য খেলাকে উপেক্ষা না-করেই) অগ্রাধিকার দিতে পারে। এটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট খেলাধুলোর প্রতি মনোযোগের দৃষ্টিভঙ্গিই নিয়ে আসবে না, বরং রাজ্যে বর্তমান সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের সুযোগ এনে দেবে।
একইসঙ্গে, আমাদের অবশ্যই দেশে ‘এক খেলা এক কর্পোরেট’-এর ধারণাকেও অবলম্বন করতে হবে। বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য সংস্থাগুলি উদীয়মান প্রতিভা অন্বেষণ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন, ক্রীড়ানুরাগীদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি, বিপণন এমনকী খেলোয়াড়দের আর্থিক উন্নতিতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ক্রিকেটের সঙ্গে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির যুক্ত থাকার সাফল্য সেকথাই প্রমাণ করে। পাশাপাশি আর্থিক সাহায্যের ধরন এখন এফএমসিজি ব্র্যান্ড থেকে নতুন ফিনটেক ইউনিকর্নে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি খেলোয়াড়, বাণিজ্যিক সংস্থা এবং খেলাধুলো জগতে সাফল্য এনে দিতে পারে।
দেশে খেলাধুলো এবং প্রতিভা অন্বেষণের বিষয়ে প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তৃণমূল পর্যায়ে ক্রীড়াসংস্কৃতি গড়ে তোলা। এজন্য স্থানীয়, রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধুলোর বিষয়ে সময়সূচি সম্প্রসারণ করা অপরিহার্য। প্রতিটি খেলাধুলোকে নিয়ে দেশে ‘আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার’ আয়োজন করা প্রয়োজন। এতে বিভিন্ন স্তরে সারাবছর ধরে তরুণ ক্রীড়াবিদদের দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরির পাশাপাশি দেশে খেলাধুলোর পরিবেশ ও পরিকাঠামো উন্নত করার সুযোগ থাকবে। আমি এও বিশ্বাস করি যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা ওলিম্পিকসে উৎকর্ষতার জন্য একটি মরূদ্যানে রূপান্তরিত হতে পারে।
এই পদক্ষেপগুলি খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ এবং অংশগ্রহণের মধ্যে ব্যবধানকে পূরণ করে সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভারতীয় খেলাধুলোকে সাহায্য করার অর্থই হল এর গুণমান এবং বিশ্বমানের উপর জোর দেওয়া। এতদিন আমলাতান্ত্রিক এবং কষ্টসাধ্য এক পথ ছিল। মোদি সরকারের আমলে এটি পরিবর্তিত হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী নিজেও সরাসরি খেলোয়াড়দের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া নিতে পছন্দ করেন। টোকিও ২০২০-তে অংশ নেওয়া ভারতীয় দলের সঙ্গে দেখা করার সময় তিনি তাঁদের ক্রীড়া পরিকাঠামো শক্তিশালী করার উপায় সম্পর্কে মতামত জানাতে বলেন। মীরাবাই হোক বা মেরি কম, তাঁরা তাঁদের আঘাতের সময় যাতে সর্বোত্তম চিকিৎসার সুবিধা পান প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে তা সুনিশ্চিত করেছেন।
ভারতীয় খেলাধুলোকে প্রভাবিত করতে পারে এমন অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে একটি হল আধুনিক প্রযুক্তির উত্থান। নরেন্দ্র মোদি, তার ‘এগজাম ওয়ারিয়র’ শীর্ষক বইয়ে এবং ‘পরীক্ষা পে চর্চা’র সময় টাউন হলের অনুষ্ঠানে এই বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি খেলাধুলোর মাঠ এবং খেলাধুলোর জায়গার উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। মোদি আধুনিক প্রযুক্তির উত্থানকে কখনওই এড়িয়ে যাননি। তিনি খেলাধুলোর মানবিক উপাদান দলগত কাজের মধ্যে একটি সুস্থ ভারসাম্য চেয়েছেন, যাতে এর মধ্যে ঐকবদ্ধতা বজায় থাকে। এছাড়াও জাতীয় শিক্ষানীতিতে এমন এক প্রক্রিয়া রয়েছে, যা ক্রীড়াশিক্ষাকে একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে পরিণত করবে। আগামী দিনে মণিপুরে ভারতের প্রথম ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে, যা ক্রীড়াবিদদের জন্য এক আশীর্বাদ স্বরূপ। বিশেষ করে এটি উত্তর-পূর্বের সমৃদ্ধ ক্রীড়া জগতের উত্তরাধিকার গড়ে তুলতে কাজে লাগবে।
টোকিও ২০২০ ছিল ভারতের কাছে অনেক কিছুর প্রত্যাশার ওলিম্পিকস। আমরা অ্যাথলেটিকসে প্রথম স্বর্ণপদক জিতেছি। হকি দল বিস্ময়কর কাজ করে দেখিয়েছে। ডিসকাস থ্রো, গলফ, তলোয়ার খেলা ইত্যাদির মতো অন্যান্য খেলাতেও সাফল্য এসেছে। ‘লক্ষ্য ওলিম্পিকস মঞ্চ প্রকল্প’, ‘খেল ইন্ডিয়া’ এবং ‘ফিট ইন্ডিয়া’ প্রচারাভিযান এই বিরাট সাফল্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে। নতুন ভারত তাদের অভ্যন্তরে আগুন জ্বেলেছে, ক্রীড়া শ্রেষ্ঠত্বের সন্ধানে সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ সমর্থন আমাদের খেলাধুলোকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলেছে।