হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
করোনার শুরু থেকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে এই সরকার। অথচ করোনা প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে ভারতীয় গবেষকরা উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তা সত্ত্বেও ঘটনা হল, মোদি সরকারের ব্যর্থতার ট্র্যাডিশন এখনও চলছে। কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার অভাবে মানব জীবনের বড়সড় ক্ষতির জন্য দায়ী তারা। দ্বিতীয় দফায় সময়মতো লকডাউন না করে পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে দফায় দফায় নির্বাচনে মেতে উঠে মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পরোক্ষে সাহায্য করেছে মোদি সরকার। এই সরকারের বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ হল, করোনায় আক্রান্ত বহু মানুষ যখন অক্সিজেনের অভাবে মরতে বসেছেন তখন কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে দিল্লির নর্থ ব্লক। অক্সিজেন নিয়ে দেশজুড়ে হাহাকারের মধ্যেও রাজনীতি করতে ভোলেনি কেন্দ্রের শাসকদল। করোনাকালে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের সঙ্গত অভিযোগ তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধী নেতৃত্ব। অভিযোগ হল, জনসংখ্যা অনুযায়ী ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে না কেন্দ্র। বরং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে বেশি সংখ্যায় ভ্যাকসিনের ডোজ সরবরাহ করা হচ্ছে। অর্থাৎ পক্ষপাতিত্বের
অভিযোগ। একই অভিযোগ রয়েছে, করোনার ওষুধ বণ্টন নিয়েও। এরাজ্যের সরকার ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য যাবতীয় পরিকাঠামো
তৈরি করে রাখা সত্ত্বেও তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গ ১০ কোটির মধ্যে সাড়ে তিন কোটির কিছু বেশিকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কারণ জোগানের অভাব, সৌজন্য কেন্দ্রীয় সরকার!
এবার সামনে এল আরও গুরুতর তথ্য। একজন সমাজকর্মীর তথ্য জানার অধিকার আইনে প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্র জানিয়েছে, কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজটি নিতে হবে ৮৪ থেকে ১১২ দিনের মধ্যে। কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এই ব্যবধান কম, ২৮ থেকে ৪২ দিন। কেন্দ্রই জানাচ্ছে, ১৭ আগস্ট পর্যন্ত এই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ পাননি প্রায় ৩ কোটি ৪১ লক্ষ মানুষ। আর কোভ্যাকসিন পাননি প্রায় ৪৭ লক্ষ মানুষ। কিন্তু কেন? এর অন্যতম কারণ হল, তাঁরা তা পাননি কেন্দ্র সময়মতো রাজ্যগুলিকে ভ্যাকসিন দিতে পারেনি বলে। ফলে ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে অনেককে। মুষ্টিমেয় কিছু ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ না নেওয়ার অন্য কারণ রয়েছে। রয়েছে প্রথম ডোজ নেওয়ার পর করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি। তবে সে সংখ্যাটি হয়তো খুব বেশি নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সময়ের মধ্যে দু’টি ডোজ না নিলে শরীরে পূর্ণমাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হবে না। অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধে করোনার ভ্যাকসিন যে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে, কেন্দ্রের হঠকারিতায় দ্বিতীয় ডোজ না মেলায় সেই মূল উদ্দেশ্যটা পণ্ড হতে পারে। সর্বোপরি যাঁরা সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও দ্বিতীয় ডোজ পাননি তাঁরা রীতিমতো আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। সেইসব মানুষকে আবার প্রথম ডোজ নিতে হবে কি না তাও স্পষ্ট করেনি সরকার। ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছে। ফলে তাঁদের টিকা ভবিষ্যৎ কার্যত অন্ধকারে। কেন্দ্রের অপদার্থতার খেসারত দিতে হচ্ছে কোটি কোটি মানুষকে যাঁদের দ্বিতীয় ডোজ ছুট হয়ে গিয়েছে। সরকারকে এবার বুঝতে হবে এভাবে চলতে থাকলে টিকাকরণের সামগ্রিক উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই অবিলম্বে দু’টি ডোজের টিকাকরণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবে করার নিশ্চয়তা দিতে হবে কেন্দ্রকে। সেইসঙ্গে মানুষের মনে জেগে ওঠা যাবতীয় সংশয় দূর করাটাও অত্যন্ত জরুরি।