হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
দেখেশুনে মনে হবে, ভারত অ্যাফ্লুয়েন্ট সোসাইটি হয়ে গিয়েছে। মানুষের হাতে কাঁচা টাকার অঢেল জোগান। চাহিদাবৃদ্ধিজনিত কারণেই এই মূল্যস্ফীতি। কিন্তু বাস্তব কি তাই? এনএসও ২০২০-২১ সালের জন্য জাতীয় আয়ের যে এস্টিমেট দিয়েছে তাতেই পরিষ্কার যে, ২০১৭-১৮ থেকে মাথাপিছু বার্ষিক আয় নিম্নগতি নিয়েছে: ২০১৭-১৮-তে ছিল ১ লক্ষ ২৬৮ টাকা, ২০২০-২১-এ সেটা নেমে এসেছে ৯৯ হাজার ৬৯৪ টাকায়। ২০২০-২১ সালে দেশের জিডিপি পূর্ববর্তী বছরের সাপেক্ষে ৭.৩ শতাংশ কমে গিয়েছে বা মাইনাস (-) ৭.৩ পার্সেন্ট হয়ে গিয়েছে। ব্যক্তিগত উপভোগ, গ্রস ফিক্সড ক্যাপিটাল ফর্মেশন, রপ্তানি ও আমদানি—অর্থনীতির এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ সূচকও পূর্ববর্তী দু’বছরের তুলনায় খারাপ হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বীকার করেছে ডিমান্ড শক বা চাহিদায় ধাক্কা লাগার কথা। কম চাহিদা এবং উপভোগের কালেও বেঁচে থাকার শেষ আশা নিয়ে বহু মানুষ নানাভাবে ঋণ করতে বাধ্য হয়েছে। ধার নিয়েও একটা বড় অংশের মানুষ তা পরিশোধ করতে পারেনি অথবা হিমশিম খাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষের সঞ্চয় বা আমানত কমে গিয়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। গরিব নেমে গিয়েছে দারিদ্রসীমার নীচে। দারিদ্রসীমার নীচে যারা ছিল তারা জানে না শেষমেষ বাঁচবে কীভাবে। ব্যক্তিগত ভোগ-চাহিদা যখন বিপরীতমুখী তখনই এই ঘটনা! অতএব, অর্থনীতির এই মতিগতিকে দুর্লক্ষণই গণ্য করতে হবে। জ্বালানি, কাঁচামাল এবং বিদঘুটে করনীতির কারণে ম্যানুফ্যাকচারিং ও পরিষেবা ক্ষেত্রের ‘ইনপুট কস্টস’ বেড়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্কোচনই স্বাভাবিক নিয়ম। করোনার ধাক্কায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে অর্থনীতির ছোট ও মাঝারি ক্ষেত্র (এমএসএমই)। আর এই ক্ষেত্রটাই সবচেয়ে বেশি পরিারের রুটিরুজির ভার নিয়ে থাকে। এমএসএমই নুয়ে পড়া লক্ষ লক্ষ মানুষ ও পরিবারের বিপন্নতার সমার্থক। করোনা এবং লকডাউনের ধাক্কা চাকরি বা কর্মসংস্থানের উপর কতটা ভয়ঙ্কর হয়েছিল সেটা নিয়ে দীর্ঘদিন চর্চা হয়েছে। ওই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আশায় দেশ যখন বুক বাঁধছে তখন সিএমআইই জানাচ্ছে, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে না-পারার ব্যর্থতাও বিরাট আকার নিয়েছে। গত এপ্রিলে কাজ হারিয়েছে ৭০ লক্ষাধিক শ্রমজীবী মানুষ। অন্যদিকে, একাধিক বেসরকারি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, ২০২০-তে যারা কাজ হারিয়েছিল তাদের প্রায় ৪০ শতাংশ পরবর্তী দশ-বারো মাসে সামান্য বেতন/মজুরির কাজও জোগাড় করতে পারেনি। অর্থাৎ ৭০ লক্ষাধিক নতুন বেকার যোগ হল পুরনো বেকারদের সঙ্গে। এই ধরনের শহুরে বেকারদের একটা বড় অংশ গ্রামীণ কর্মক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করছে।
সব মিলিয়ে দেশের কাজের বাজারের আজ ভয়ানক অবস্থা! করোনাকালে দেশে কত শ্রমিক কর্মচ্যুত হয়েছে? সংসদে নির্দিষ্ট প্রশ্ন ছিল মোদি সরকারের কাছে। উত্তর দেয়নি। পরিবর্তে এক রাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়ে সরকার যে-কথা বলিয়ে নিয়েছে তার মূল্য আগবাগডুমের অধিক নয়। বুঝতে অসুবিধা হয় না, কেন মোদিবাবুরা জবাবটা এড়িয়ে গেলেন। বছরে দু’কোটি চাকরি দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর সাতবছরে কাজ খাওয়ার অধিক কিছুই উপহার দিতে পারেনি এই সরকার। শাক দিয়ে মাছ ঢেকে কোনও লাভ হবে না। যতদিন গদি আঁকড়ে থাকবেন মোদি ততদিন তাঁকে কাজের কাজ কিছু করতেই হবে। সবার টিকাকরণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য সদর্থক পদক্ষেপ করুন। তার প্রথম শর্ত, যুক্তিগ্রাহ্য তেলের দাম এবং করনীতি। আর বাস্তবের মাটিতে পা রেখেছেন যাঁরা সেই অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ মেনে চাহিদা বৃদ্ধির ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। অন্যথায় আরও খারাপ দিন দেখানোর জন্য দেশবাসীকে বাধ্য করবেন নরেন্দ্র মোদি!