কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
এটা চীনের নিজস্ব সমস্যা ভেবে যাঁরা বালিতে মুখ গুঁজে ছিলেন তাদের ভুল ভাঙতে দেরি হয়নি। মাত্র দু’সপ্তাহের ভিতরে দুঃসংবাদ মিলল রোগটি চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ার। ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে পাওয়া গেল একজন নতুন করোনা রোগীকে। তারপর থেকে এই অদৃশ্য শক্তি যে-খেলা শুরু করেছে তার ধারা বিবরণী দেওয়ার ক্ষমতা দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর কিংবা সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষটিরও নেই। তবে, এই অজানা দানবের ভয়াবহতা ও উদ্দেশ্য মাস খানেকের ভিতরেই আঁচ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ৩০ জানুয়ারি হু এটিকে বৈশ্বিক বিপদ (পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অফ ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন বা পিএইচইআইসি) ঘোষণা করে দেয়। ২৩ জানুয়ারির হু-র তরফে ইমার্জেন্সি কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ততদিনে বিপদটি কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও সিঙ্গাপুরের মতো অত্যন্ত উন্নত ও ধনী দেশগুলিতে পৌঁছে গিয়েছে। তবু, হু-র উচ্চ পর্যায়ের ওই কমিটির কয়েকজন সদস্য পিএইচইআইসি ঘোষণা করার ব্যাপারে আপত্তি তুললেন। তাঁরা বললেন যে, এখনই এত বড় ঘোষণাটি বাড়বাড়ি হয়ে যাবে! অতএব জরুরি ঘোষণাটি এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেল। আর তার পর থেকেই চলতে লাগল আক্রান্ত দেশগুলির পাশে দাঁড়ানোর সর্ববিধ উপায় সন্ধান। সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হল আক্রান্ত গরিব দেশগুলিকে বাঁচানোর উপর। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ হু রোগটির নামকরণ করল কোভিড-১৯। মনে রাখতে হবে, আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাটি তখনও ১ লক্ষের অনেক কম, কয়েক হাজারের ভিতরেই ঘোরাফেরা করছে। কোভিড-১৯ এক লক্ষ নরনারীকে আক্রমণ করতে সময় নিয়েছে ৬৭ দিন বা সাড়ে ৯ সপ্তাহের মতো। অর্থাৎ নতুন করোনা আমাদের সতর্ক বা সজাগ হওয়ার জন্য যথষ্ট সময় দিয়েছে। এত বড় শত্রুর কাছ থেকে এতটা সুযোগ নিঃসন্দেহে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। আর এই সুযোগ নষ্ট করার পরিণাম কতটা খারাপ হতে পারে তা আমরা ক্রমান্বয়ে দেখে চলেছি। দেখেছি, সংক্রমণ কী দ্রুততার সঙ্গে ২ লক্ষ, ৩ লক্ষ করতে করতে সাড়ে ৭ লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে! বলা বাহুল্য, এখনও কোনও ম্যাজিকের সন্ধান কেউ দিতে পারেননি। মিশ্র চেতনাই এখনও সম্বল। তাই আশঙ্কা হয় যে, আজ বুধবার সকালে আপনি এই লেখা যখন পড়ছেন আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাটি ততক্ষণে হয়তো ৮ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং মৃতের সংখ্যাটিও ৩৮ হাজারের বেশি! মানুষের বসতিযুক্ত একটিও জায়গা আর অবশিষ্ট নেই, যা নোবেল করোনার নীরব বিচরণক্ষেত্র হয়ে ওঠেনি।
চীনের প্রাথমিক গাছাড়া ভাবটির কথা বাদ দিলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই সরাসরি দায়ী করা চলে। অথচ, তারাই নিজেদের উন্নত বিশ্বের বাসিন্দা বলে কলার উঁচু করে চলে। আগামী দু’সপ্তাহকে আমেরিকা তাদের সবচেয়ে বড় দুঃসময় হিসাবে আশঙ্কা করছে। ভগবানকে ধন্যবাদ। ভারতের জন্য একটু বাড়তি সময় সুযোগ বরাদ্দ করেছেন তিনি। তথাকথিত উন্নত দেশগুলির তুলনায় আমরা অনেকটাই বেশি সজাগ ও সতর্ক। অনেক কষ্ট স্বীকার করেই আমরা লকডাউন মেনে চলেছি। তবে এটাই যথেষ্ট নয়। আরও কিছুটা কষ্ট আমাদের করতেই হবে, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির নির্দেশ মতো। একইসঙ্গে সরকারকেও ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে চিকিৎসার সুযোগ এবং গৃহবন্দি দেশবাসীর ভরণপোষণের সবরকম ব্যবস্থা। তা না-হলে এই যে কষ্ট করা হল, বিপুল আর্থিক ক্ষতি হল, তা আক্ষরিক অর্থেই জলাঞ্জলি যেতে পারে।