কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
সুখবর এই যে, চীন অনেকটাই সামলে উঠেছে। সেন্ট্রাল হুবেই প্রদেশ থেকে মঙ্গলবার তুলে নেওয়া হয়েছে টানা দু’মাসের লকডাউন। শুধুমাত্র যাঁরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তাঁদেরকেই ওই প্রদেশের বাইরে পা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে, এমন অনুমতির জন্য উহান শহরকে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত। অনেকে এজন্য চীনের কমিউনিস্ট সরকারের কঠিন কঠোর নীতিকেই ধন্যবাদ দিচ্ছেন। মতবাদ বা রাজনীতির ধরন নিয়ে আমাদের বিরোধিতা থাকতেই পারে, কিন্তু চীনের এই আপসহীনতার নীতিটি অনুসরণ না-করার কোনও যুক্তি নেই। আপাতত লকডাউনের মাধ্যমে সামাজিক ব্যবধান বা দূরত্ব তৈরি করে নেওয়াই সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ। বস্তুত রবিবার ১৪ ঘণ্টার ‘জনতা কার্ফু’ থেকেই আমাদের লকডাউনের অভিজ্ঞতার সূচনা। দেরিতে হলেও তা স্বাগত। আরও স্বস্তির বিষয় হল, সোমবার থেকে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে ৩০টি জায়গার ৫৪৮টি জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র সরকার তাদের রাজ্যে কার্ফু জারি করেছে। অন্তর্দেশীয় বিমান এবং দূরপাল্লার ট্রেন ও বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিপদ ভারতকে স্পর্শ করামাত্রই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রশাসনকে করোনা মোকাবিলার জন্য আন্তরিকভাবে প্রস্তুত করতে থাকেন। সমানে সতর্ক করে গিয়েছেন কেন্দ্রকেও। উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ার জন্যও কেন্দ্রের সহায়তা দাবি করে এসেছেন সমানে। তবু, করোনায় মৃত্যু এড়ানো যায়নি। সোমবার দমদমের বাসিন্দা একজনের মৃত্যু হয়েছে সল্টলেকের একটি হাসপাতালে। এক সপ্তাহে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯। বলা বাহুল্য, আক্রান্ত এবং মৃত সকলের সঙ্গেই কোনও না কোনওভাবে বিদেশ সফরের যোগ রয়েছে। এই দুর্ভাগ্য ভারতের অন্যসকল জায়গাগুলির ক্ষেত্রেও মোটামুটিভাবে সত্য। তাহলে রোগটা এত ছড়াল কী করে? মৃতের সংখ্যাটি এক সংখ্যায় বেঁধে রাখা কষ্টকর হচ্ছে কেন? আক্রান্তের সংখ্যাটি কেন পেরিয়ে গেল পাঁচশো? বিশেষজ্ঞরা এজন্য বিদেশ থেকে আসা কিছু মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণকেই দায়ী করছেন। তাঁদের বেশিরভাগই শিক্ষিত, এমনকী কয়েকজন বিশিষ্ট মানুষ হয়েও ফরেন কানেকশনটা চেপে গিয়েছেন! এই অসাধুদের তালিকায় দু-একজন ডাক্তারও আছেন!
বিপন্মুক্ত হওয়ার, ঘুরে দাঁড়াবার এখনও সময় আছে। এই সুবর্ণ সুযোগ আমরা একজনও নষ্ট না-করি যেন। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া দরকার। ছিদ্রান্বেষণের রাজনীতি নয়। গুজবে কান নয়। কুসংস্কারে মন দেওয়া নয়। শুধু কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশিকাগুলিই আমরা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলব। আর অবশ্য করে মানব লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা। না-মানলে গ্রেপ্তার, জেল ও জরিমানার অপ্রীতিকর ব্যবস্থা আছেই। কিন্তু সরকারকে তেমন পদক্ষেপে বাধ্য করাটাও সমীচীন নয়। এ লজ্জা আমার আপনার আমাদের সকলের। বিপদটা তাতেই অবশ্য সীমায়িত হবে না। বিপদের অনেক আশঙ্কাও বাস্তব হয়ে উঠতে পারে। তাই আসুন, আমরা সকলে সকলের সঙ্গে দৈহিক দূরত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে আত্মিক ঐক্য স্থাপনের এক অনন্য নজির গড়ে তুলি। কলেরা, প্লেগ, গুটি বসন্ত (স্মল পক্স), পোলিও-সহ অনেক কঠিন রোগের বিরুদ্ধে আমরা লড়েছি এবং জিতেছি, বীরের মতোই। এত জয়ের ইতিহাসকে সামনে রেখেই আমাদের এই লড়াইটাও চালিয়ে যেতে হবে, যে-যুদ্ধের শেষে মানুষের পক্ষে ‘জয়’ ছাড়া আর কিছুই লেখা দেখতে পাচ্ছি না আমরা।