কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গোড়া থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেকারণে সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিশাল একটা অংশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য। শুধু এ রাজ্যই নয়, কার্যত বিভিন্ন রাজ্যই এই সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে।
কারণ, সামাজিক যোগসূত্র ছিন্ন করাই এখন সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকেও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানেই করোনা আক্রান্তর খবর পাওয়া যাবে, সেই জেলাকে সঙ্গে সঙ্গে ‘লকডাউন’ করে দেওয়া হবে। রাজধানী দিল্লিতেও আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা, সেই সঙ্গে ঘোষণা হয়েছে লকডাউনেরও।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল রবিবার জানিয়ে দিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত দেশের ২২টি রাজ্যের ৭৫টি জেলায় (এর মধ্যে রয়েছে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা) করোনা ছড়িয়েছে। সরকার যাই বলুক, দেশ জুড়ে লকডাউনে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছেই। শুনশান হয়ে গিয়েছে রাস্তা। প্রায় সওয়ারিহীন ঘুরছে বাস। বেসরকারি গাড়িঘোড়াও তুলনায় নগণ্য। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনতা কার্ফুতে বাড়ি থেকে বের হননি প্রায় কেউই। যেন এক অলিখিত ‘ভারত বন্ধ’ দেখা গেল। মোদির ডাকা জনতা কার্ফুর জেরে গোটা দেশেই কমবেশি প্রায় একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। কারণ, খোদ মানুষের মনেই সংক্রমণ তথা মৃত্যুভয় ঢুকে গিয়েছে। উবে গিয়েছে সিএএ-এনআরসির আতঙ্ক। করোনা ভাইরাস হঠাৎ করেই একতার সেই সেতু হয়ে হিন্দু-মুসলমানের রাজনীতি, দলাদলি, হিংসা, দ্বেষ-বিদ্বেষকে বিনাশ করে দিয়েছে। যাঁরা এ রাজ্যে সিপিএমের ডাকা ২৪ ঘণ্টার বন্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন, তাঁরাও জানেন জনতা কার্ফু সেই বন্ধকে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে গোল দিয়েছে। এই সাফল্য কিন্তু মোদি কিংবা বিজেপির নয়, আমাদের মতো সাধারণ দেশবাসীর। ভারত আবার দেখল, বিভাজন মানে পরাভব। একতা বিজয়ের অস্ত্র। ফলে, কোনও নায়ক এই যুদ্ধে নেই, খলনায়ককে বশে আনতে সামাজিক সম্পর্ক বর্জনই এই মুহূর্তে আমাদের এক এবং একমাত্র হাতিয়ার। এর বিকল্প আর কোনও পথ নেই।
সুতরাং, সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে, ব্যক্তিগত শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞানগম্যি, ভাবধারা, অর্ধকুম্ভ ভরা পাণ্ডিত্য বর্জন করে, ঘরে বসে থাকি। আমি বা আমার পরিবারের কেউ সংক্রমিত নই, এই ভাবখানা ত্যাগ করে চুপ করে থাকার সময় এটা। সব থেকে বড় কথা, অহেতুক আতঙ্কিত হবেন না। লকডাউন মানে অনাহারে কাটাতে হবে, এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। তাই গোটা বাজারকে তুলে এনে ফ্রিজে ঢোকানোরও কোনও অর্থ নেই। কয়েকজনের এই খাদ্য মজুতদারির কারণেই বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট দেখা দেবে, আর বেশ কিছু মানুষ খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবেন। তখনই মনে হবে, আকাল সৃষ্টি হয়েছে। বাজারহাট, মুদির দোকান খোলা থাকবে, মাছ-সব্জির অভাব হবে না, যতক্ষণ না আমার-আপনার মধ্যে কেউ সেই সঙ্কট ইচ্ছাকৃত তৈরি না করি। অতএব, পৃথিবী নামক গ্রহের মানবজাতি নামক প্রাণের অস্তিত্বরক্ষার এই আপ্রাণ লড়াইয়ে আমাদের সকলের সংযম পালনই হোক বাঁচার সংকল্প।