অনেক বাধা আর প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে আবার আমরা পাঠকের মুখোমুখি। গত একশো বছরের ইতিহাসে মানবজাতির সামনে এমন অভূতপূর্ব সঙ্কট এসেছে বলে মনে পড়ে না। তিন মাস বয়সের এক মারণ ভাইরাসের সঙ্গে সারা পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত আধুনিক নাগরিক সমাজের অদৃশ্য লড়াই চলছে। কতশত অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমারু বিমান এই আধুনিক পৃথিবী তৈরি করেছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু তার সবই একে অপরকে ধ্বংস করার জন্য। বিদ্বেষ আর শত্রুতাকে চরিতার্থ করার জন্য। কিন্তু নবজাতক এই করোনা ভাইরাস সব হিসেব উল্টে দিয়েছে। ভালোবাসা নয় বন্ধুত্ব নয়, স্রেফ ভয় আর আতঙ্ক আজ সমগ্র মানবসমাজকে একসূত্রে গেঁথে দিয়েছে। ছলচাতুরি, হুমকি পাল্টা হুমকি, অস্ত্রের ঝনঝনানি সব আজ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। চীন থেকে আত্মপ্রকাশ করে তিনমাস বয়সি সেই ভাইরাস আজ উন্নত ইউরোপ ও আমেরিকাকে পর্যন্ত নাজেহাল করে দিয়েছে। এপিসেন্টার চীন থেকে ইউরোপ পেরিয়ে এখন আমেরিকায় থাবা বসাতে উদ্যত। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইতালির প্রধানমন্ত্রীর চোখে জল। হতাশ গলায় তিনি বলছেন মহামারীর নিয়ন্ত্রণ আমরা হারিয়ে ফেলেছি। গোটা দেশটাই কার্যত ছারখার হওয়ার মতো অবস্থায়।
আমাদের ভারতও এর প্রভাবে বেসামাল। গোটা দেশ ঘরবন্দি। ব্যবসা লাটে। তার উপর আর্থিক বছরের শেষ, মার্চ মাস বলে কথা। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় অর্থনৈতিক মন্দা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। তবু যাবতীয় অসুবিধাকে দূরে সরিয়ে ফের আমরা অগণিত পাঠকের কাছে হাজির। কথা দিয়েছিলাম, লড়াই করে দ্রুত ফিরে আসব। সেই কথা আমরা রেখেছি।
এই পত্রিকার প্রাণপুরুষ প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বরুণ সেনগুপ্ত এই দায়বদ্ধতার পাঠ আমাদের দিয়ে গিয়েছেন পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে। যেখানে পাঠকের কাছে রোজ সকালে কাগজ পৌঁছে দেওয়াই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য, ধ্যানজ্ঞান। তাঁর সেই আদর্শকে পাথেয় করেই আবার আমরা ফিরে
এসেছি আপনার দরজায়। পাঠকের কাছে ছাপার অক্ষরে খবর পৌঁছে দেওয়ার সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আবার ‘বর্তমান’এই সময়কার জ্বলন্ত সমস্যার খতিয়ান নিয়ে হাজির। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে বর্তমানের প্রত্যেক কর্মী এই শপথ পালন করে যাবে, এই আমাদের অঙ্গীকার। হকাররা আতঙ্কিত হয়ে পড়ায় কাগজের বিলিবণ্টনও ভীষণ ধাক্কা খাচ্ছে। তবে আমাদের বিশ্বাস, হকার ভাইরাও সাময়িক অসুবিধা কাটিয়ে উঠে আবার কাগজের স্বাভাবিক বিলিবন্টন চালু করবে।
কিন্তু ওই যে বলছিলাম, এই আপৎকালীন মুহূর্তে দেশের অবস্থা, আমাদের রাজ্যের অবস্থা মোটেই সুবিধার নয়। গোটা দেশ লকডাউনের মধ্যে কোনওরকমে দিন গুজরান করছে। সবে মাত্র কয়েকদিন কেটেছে আরও অনেক সময় বাকি। মোট ২১ দিনের লকডাউন। তাই দীর্ঘ সময় এখনও ঘরবন্দি থাকতে হবে। নিঃসন্দেহে ধৈর্যের পরীক্ষা। কিন্তু সেই পরীক্ষায় আমাদের সবাইকে সসম্মানে উত্তীর্ণ হতেই হবে। না হলে বড় মূল্য চোকাতে হবে। বহু জায়গায় আবার মানুষ বাজারে পর্যন্ত জেতে ভয় পাচ্ছে। নিত্যপণ্যের আকালের আশঙ্কায় কোথাও কোথাও মজুতদারিও শুরু হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির খবরও মিলছে নানা প্রান্ত থেকে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ। তবু সর্বত্র মানুষের এখন একটাই প্রশ্ন, আবার কেউ প্রাণঘাতী মারণ ভাইরাসের শিকার হল না তো? এক অদৃশ্য অজানা আশঙ্কা ও ভয়ের প্রহর গুনছে সবাই। কলকারখানা, অফিস কাছারি, স্কুল কলেজ সব বন্ধ। দেশ জুড়ে একটাই স্লোগান একে অপরের থেকে দূরে যাও। বাজারেও
একে অপরের থেকে অন্তত একমিটার দূরত্ব বজায় রাখো, যাতে এই
ভয়ঙ্কর অসুখ গোটা সমাজকেই রোগীতে পরিণত করতে না পারে।
এরই মধ্যে গরিব মানুষের জন্য সরকার ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তাই চ্যালেঞ্জ যতই কঠিন হোক শেষ পর্যন্ত মানব সভ্যতার জয় হবেই।