উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
এসবের মাঝেই উদ্বগ বাড়িয়েছে একটি অন্যতম নিত্যপ্রয়োজনীয় সব্জি, আলু। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত যে জ্যোতি আলু কেজিপ্রতি ১২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তারই দাম ১৪ টাকা। তাও গুণগত দিক থেকে যথেষ্ট নিম্নমানের। মোটামুটি ভালো আলু ১৫-১৬ টাকার নীচে মিলছে না। দাম কমবে কি না, কমলে কতদিন বা কতটুকু, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ, সময়টা নির্বাচনের। দিকে দিকে সবাই ব্যস্ত প্রচারে, একে অপরকে আক্রমণে। সরকার নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছিল, তারও বৈঠক যে শেষ কবে হয়েছে, তা অনেকেই মনে করতে পারছেন না। ফলে বাজার তার নিজের গতিতেই এগিয়ে চলেছে। ফড়েদের রমরমা। যে যেভাবে পারছে, বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ বলে কিছুই নেই।
প্রশ্ন হল, আলুর মতো নিত্যপণ্যের এই মূল্যবৃদ্ধি কেন? বাজারে খোঁজখবর নিয়ে জানা গিয়েছে, এবার মাঠ থেকে আলু ওঠার মুখে চাষিরা যে বিরাট দাম পেয়েছেন, তা কিন্তু নয়। একটা সময় তাঁদের লোকসানেই আলু ছেড়ে দিতে হয়েছে। কারণ, আলু ধরে রাখা বা হিমঘরে টাকা খরচ করে রাখার মতো অর্থবল তাঁদের অনেকেরই নেই। অসহায় এবং দুঃস্থ চাষিদের সাহায্যার্থে সেই সময় সরকার এগিয়ে এসে ধানের মতো আলুতেও সহায়ক মূল্য ঘোষণা করেছিল। কিন্তু নিয়মকানুনের জটিলতা এবং কিছু সমস্যার কারণে ধান কেনার মতো এই প্রকল্পটি সেভাবে সার্থক হয়ে উঠতে পারেনি। তারচেয়েও বড় কথা, এই প্রকল্প ঘোষণার কিছুদিন পরেই বৃষ্টির কারণে বাজার এমনিতেই চড়া হয়ে যাওয়ায় চাষিদের কাছে এটি আর আকর্ষণের জায়গাও ছিল না।
সর্বশেষ পরিস্থিতি হল, এবার যে বিরাট উৎপাদন হবে বলে আশা করা গিয়েছিল, বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির কারণে তা কিন্তু হয়নি। উৎপাদন হয়েছে অনেক কম। ফলে হিমঘরও সেভাবে ভর্তি হয়নি। ফলে বর্তমানে এমন একটা অবস্থায় আলুর বাজার দাঁড়িয়ে রয়েছে, যাতে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা রয়েছে চাষি এবং ব্যবসায়ী মহলে। কারণ, আলুর বাজার সবসময়ই নির্ভর করে উৎপাদন, রাজ্যের নিজস্ব চাহিদা এবং বাইরের কয়েকটি রাজ্যের চাহিদার উপর। এবার ভোট বা অন্য কারণে এখনও হিমঘর থেকে আলু সেভাবে বের হওয়া শুরু হয়নি। তা হলে বাজারে আলুর জোগান বেড়ে যাবে। নিয়মমতো জোগান বেড়ে গেলে দাম কমে যাওয়ারই কথা। কিন্তু আলুর হিসেব এত সহজ নয় বলেই উদ্বেগ বাড়ছে। কিন্তু নির্বাচনী উত্তাপের সুযোগ নিয়ে কেউ মওকা বুঝে বাড়তি মুনাফা লুটছে কি না, সেদিকে নজর দেওয়াটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
শেষদফার ভোট হবে আগামী ১৯ মে। ফলাফল বেরবে ২৩ মে। তারপর সরকার গঠন এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে আরও বেশ কয়েকটা দিন কেটে যাবে। ফলে অন্তত আরও মাসখানেক এই ডামাডোল চলবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। সাধারণ মানুষের একটাই আর্তি, ভোট যেমন হচ্ছে হোক। কিন্তু আলু, সব্জি, মাছ, মাংস সহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার এখনই সদর্থক পদক্ষেপ নিক। না হলে শেষমেশ যাঁদের জন্য ভোট, সেই সাধারণ মানুষকেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
আরও একটা বিষয় মনে রাখা দরকার। নেতানেত্রীরা যতই তাঁদের ভোট প্রচারে ব্যস্ত থাকুন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের আমলা এবং পদাধিকারীরা তো আছেনই। তাঁরা অন্তত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হোন। ভোট মানেই প্রশাসন ঠুঁটো, এই ধারণা অন্তত ভেঙে যাক।