উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য কুসংস্কার প্রাচীন কাল থেকেই আছে। কিছু কুসংস্কার ব্যক্তি তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। সেসব নিয়ে সমাজের মাথাব্যথা না করলেও চলে। কিন্তু, কিছু ক্ষেত্রে মানুষের ভুল ধারণা বা কুসংস্কার অন্যের উপর অত্যাচারে পর্যবসিত হয়ে যায়, অন্যের পক্ষে বিপদ, এমনকী প্রাণনাশেরও কারণ হতে পারে এই দুঃখজনক পরিস্থিতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রের খবর, সারা পৃথিবীতে এই পর্যন্ত এইচআইভি আক্রান্ত সাড়ে তিন কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে শুধু গত বছর মৃত্যু হয়েছে দশ লক্ষ নর-নারীর। আমরা সচেতন হলে হয়তো মৃত্যুর এই মিছিল অংশত ঠেকানো সম্ভব হতো। অনেক রোগী একটু চিকিৎসা এবং সহানুভূতি পেতে পারতেন। এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার জন্য বহু মানুষ নিজে একেবারেই দায়ী নয়। তার বড় প্রমাণ আক্রান্তদের দলে অনেক ছোট শিশুও রয়েছে। আমাদের বিবেক কী বলে—তাদের চিকিৎসা, শুশ্রূষা, সহানুভূতি, ভালোবাসা কি প্রাপ্য নয়? পশ্চিমবঙ্গ অন্তত শিক্ষাদীক্ষায় একটি অগ্রণী রাজ্য। তা সত্ত্বেও জানা যাচ্ছে, গত কয়েক মাসের মধ্যে কলকাতার একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দক্ষিণ কলকাতার একটি ব্যস্ত হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীকে নিগ্রহ, চিকিৎসায় গাফিলতি এবং রোগীর পরিচয় ফাঁস করে দেওয়ার মোট তিনটি ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে। এই ঘটনা তিনটির একটিতে এক প্রসূতি এবং তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে গিয়েছে। এক তরুণীর হাসপাতালের আউটডডোর টিকিটে ‘এইচআইভি পজিটিভ’ লিখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে!
এইসব অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। তদন্তের পর অন্যতম স্বাস্থ্যসচিব সুরেন্দ্র গুপ্ত সম্প্রতি সব হাসপাতালকে এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের সব কর্তাকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন। স্বাস্থ্য দপ্তর একটি নির্দেশিকাও জারি করেছে। নির্দেশের সাত দফার অন্যতম: এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের নাম পরিচয় কোনোভাবে প্রকাশ করা যাবে না। অনুমতি বিনা কারও এইচআইভি টেস্ট করা যাবে না। এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার বা তাকে অসম্মান করা চলবে না। স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তা সতর্ক করে বলেছেন, এই নির্দেশিকা লঙ্ঘিত হলে চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্য কর্মী পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধেই ‘এইচআইভি আইন, ২০১৭’ অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য দপ্তরের এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। মনে রাখতে হবে, এইচআইভি বা এইডসের মতো মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইটা সার্থক করে তুলতে হলে সরকারের এই ভূমিকাই কাম্য। সরকারের এই দরদি ভূমিকা সমাজকেও মানবিক করে তুলতে সাহায্য করবে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে আধুনিক চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সমাজ এবং সরকারের এই চেহারাটা জরুরি। তা নাহলে মানুষ রোগ গোপন করে রেখে বিপদ বাড়িয়ে তুলতে পারে।