উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
একটা সময় পর্যন্ত এই ভোটকেন্দ্রিক রাজনীতিতে সৌজন্যটুকু বজায় থাকত। সাতের দশকের পর থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে লাগল রাজনীতির সৌজন্যবোধ ও ভদ্রতাটুকু। ক্রমেই রাজনীতিকে বেঁধে ফেলল দুর্বৃত্তায়নের নাগপাশ। এখন তা এতই বৃহৎ আকার ধারণ করেছে যে, মনে হয় আমাদের যেন তার থেকে মুক্তি নেই। আজ যদি নির্বাচনী দেওয়াল লিখন, নেতাদের বক্তৃতা লক্ষ্য করা যায়, তবে বহুক্ষেত্রে দেখা যাবে শুধুই কিছু নোংরা কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, পরস্পরকে খারাপ কথা বলে আক্রমণ কিংবা অপমানে বিদ্ধ করা ইত্যাদি। প্রশ্ন ওঠে, এর থেকে কী শিখবে আগামী প্রজন্ম! যে আইন প্রণয়নকারীদের অনেকে নিজেরাই আইন মানেন না, তাঁরা কীভাবে দেশ গড়বেন! যে আইন প্রণয়নকারীদের অনেকেই অশুদ্ধ ভাষা প্রয়োগ করেন অনায়াসে, খারাপ কথা বলতে যাঁদের জিভ কাঁপে না, তাঁরা কীভাবে সংসদে বসবেন গিয়ে! কতটুকু দেশের শ্রীবৃদ্ধি করতে পারবেন!
এবারের ভোটযুদ্ধে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের অনেকেরই হলফনামা দেখলে সামগ্রিকভাবে মানুষের ধারণা খুব খারাপ হতে বাধ্য। এঁদের অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক। তা নয় হল। যাঁরা সংসদে এমপি আছেন, তাঁদের অনেকেরই গত পাঁচ বছরে আয় পনেরো-বিশ শতাংশ থেকে ছশো শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তাঁদের কেউ কেউ নির্বাচন কমিশনের কাছে শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুয়ো হলফনামা দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, স্কুলের গণ্ডি না পেরিয়েও বিরাট ডিগ্রির সার্টিফিকেট জমা দেন। তাই নিয়ে বিরোধী দল অভিযোগ জানায়। বিতর্ক হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা হয়। এঁদের তাতে কিছু আসে যায় না। আবার অনেকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ক্রিমিন্যাল কেসও আছে। খুন, জখম, রাহাজানি, অপহরণ আরও কত কী! এঁরা কি আজ আমাদের দেশের মুখ? কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা। দেশ এগচ্ছে, নাকি নেতারা এগচ্ছেন! এনিয়েই একটা গণভোট হতেই পারে।
একটা সময় ভোট মানে ছিল উৎসব। দেওয়ালে দেওয়ালে প্রচার। সেখানে থাকত মজার ছড়া, কার্টুন আরও কত কী! উদ্দেশ্য ছিল, পরিশীলিত হাসির মোড়কে প্রতিপক্ষকে ব্যঙ্গের তিরে ঘায়েল করা। গত সেই ছয় ও সাতের দশকে সিপিএম বা সিপিআই লিখল, ‘দুআনা সের বেগুন কিনে মন হল প্রফুল্ল, / বাড়ি এনে কেটে দেখি সব কানা অতুল্য’। এর পাল্টা লিখল কংগ্রেস, ‘চীনের চিহ্ন কাস্তে হাতুড়ি, পাকিস্তানের তারা, / এখনও কী বলতে হবে দেশের শত্রু কারা?’ কিংবা কংগ্রেস লিখল, চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে কদমতলায় কে? / প্রমোদ নাচে কেষ্ট নাচে জ্যোতি বসুর বে।’ এর উত্তরে পাশের দেওয়ালে সিপিএম লিখল, ‘ঠিক বলেছিস, ঠিক বলেছিস, ঠিক বলেছিস ভাই / ১১ই মার্চ ইন্দিরাকে সাজিয়ে আনা চাই।’ মানুষ এসব উপভোগ করতেন। এখন আর উপভোগের কিছুই অবশিষ্ট নেই। কদর্যতার মধ্য থেকে আজ মানুষের মননে উঠে আসে শুধুই অশ্রদ্ধা, ভয়। এটাই বুঝি আজকের রাজনীতির ‘পুণ্যফল।’ স্বার্থের, ভোগের, প্রাপ্তির কিংবা বাঁটোয়ারার রাজনীতির আজ এটাই কি ভবিতব্য? দেশ কি সত্যিই এগচ্ছে?