উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
বিষ্ণুপুরের আইসি পথিকৃৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, গাজন উৎসবে দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল হয়। তার জেরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। রাস্তা অবরোধ করা হয়েছিল। পুলিস মোতায়েন করা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে।
বুড়ো শিবের গাজন উৎসব কমিটির সম্পাদক উদয়কুমার দে বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে গাজন উৎসবকে কেন্দ্র করে মটুকগঞ্জের বিশেষ একটি জায়গায় গণ্ডগোল হয়। এবারেও সেই আশঙ্কা থেকে সেখানে বাড়তি স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও এদিন ভোরে স্থানীয় কিছু মদ্যপ যুবক গাজনের শোভাযাত্রার উপর হামলা চালায়। তাদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে কয়েকজন ভক্ত জখম হন। তাতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। ভোরেই থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপুর শহরে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালগঞ্জে শতাব্দী প্রাচীন বুড়ো শিবের মন্দির রয়েছে। সেই উপলক্ষে ভক্তরা শহরের আবরার মাঠে দেবতার উদ্দেশে অর্ঘ্য নিবেদন করেন। সেখানে পুজো হয়। পরে রাতে সেখান থেকে মূল মন্দির পর্যন্ত শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। সামনে সুসজ্জিত আলোর বন্দোবস্ত করা হয়। ভক্তদের মধ্যে কেউ গড়িয়ে, কেউ দণ্ডি খেটে এগিয়ে যান। শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু’পাশে হাজার হাজার দর্শনার্থী জড়ো হন। বছরের পর বছর ধরে এই রীতিতেই রাত গাজন উৎসব হয়ে আসছে। মঙ্গলবার ছিল রাত গাজন। সেই উপলক্ষে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েকবছর ধরে মটুকগঞ্জ এলাকায় ঝামেলা পাকানোর নজির রয়েছে। তবে এবার যাতে কোনও গণ্ডগোল না হয় তার জন্য গাজন কমিটির পক্ষ থেকে ওই এলাকায় বাড়তি স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়। বেশ কিছু পুলিস কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়। কিন্তু, তারপরেও অশান্তি এড়ানো যায়নি। এদিন আবরার মাঠ থেকে শোভাযাত্রা ভোরের দিকে মটুকগঞ্জে এলে সেখানে বেশকিছু মদ্যপ যুবক শোভাযাত্রা আটকে দেয়। ভক্তরা শোভাযাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে মদ্যপ যুবকরা শোভাযাত্রার লাইট ভেঙে দেয়। প্রতিবাদ করলে হামলা চালানো হয়। তাতে কয়েকজন ভক্ত জখম হন। সেই খবর চাউর হতেই মুহূর্তের মধ্যেই প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ক্লাবে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। টিভি, আলমারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ট্রফি ভেঙে চুরমার করা হয়। পরে একে একে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িতে জনরোষ আছড়ে পড়ে।
এদিন সকালে মটুকগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ধারে একাধিক দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। নিকাশি নালায় দুমড়ানো একাধিক বাইক ও সাইকেল পড়ে রয়েছে। প্রায় ৪০ ফুট গভীর কুয়োর মধ্যেও একটি বাইক পড়ে রয়েছে। একাধিক সাইকেল পুকুরের জলে রয়েছে। রাস্তার ধারের একটি টিউবওয়েল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পুরসভার ট্যাপকলও ভাঙা হয়েছে। সকালে পুলিস ঘটনাস্থলে এলে দফায় দফায় উত্তেজনার পারদ চড়ে। ঘটনায় যুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি তুলে শহরের প্রধান রাস্তায় মটুকগঞ্জের মোড়ে ভক্তরা অবরোধ করেন। রাস্তার উপর রীতিমতো শামিয়ানা খাটিয়ে দিনভর অবরোধ করা হয়। যানজটের সৃষ্টি হলে যানবাহনকে বাইপাস দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে প্রচুর পুলিস মোতায়েনও করা হয়েছে।
স্থানীয় একটি গ্যাস ঝালাইয়ের দোকানের মালিক শ্যামাপদ কর্মকার বলেন, আমরা রাতে দোকানে বসে শোভাযাত্রা দেখছিলাম। হঠাৎ করে তুমুল চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। চারদিকে ভাঙচুর হচ্ছে দেখে দোকান বন্ধ করে ঘরে ঢুকে যাই। কিছুক্ষণ পরে আমাদের দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। কাদের সঙ্গে কী হল আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না। কিন্তু, আমাদের ক্ষতি হয়ে গেল। দোকানের টিনের দরজা, ঝালাইয়ের দামি যন্ত্রপাতি ভেঙে চুরমার করা হয়েছে।