উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশার উপদ্রবের নির্দিষ্ট সময়সীমা হয় না। সে কারণে এই গ্রীষ্মেও এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তরের অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়েছেন কলকাতা পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদ। সংবাদে প্রকাশ, তিনি জানিয়েছেন, ওই ২৫টি জায়গায় যেন তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। না হলে বড়সড় বিপত্তি ঘটবে। স্বাস্থ্যদপ্তরের অধিকর্তার কথায়, সারা বছরই মশকবাহিত রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলির উপরে নজর রাখা হয়। এব্যাপারে যা যা ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১১-’১৩ সাল এই তিন বছরে শহরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশ বেড়েছিল। ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়াও প্রাণ কেড়ে নিয়েছে অনেকের। ডেঙ্গু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীও বেজায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। পুর প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, বছরের শুরু থেকেই মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করতে হবে। ২০১৪ সাল থেকে মশাবাহিত রোগ দমনে কোমর বেঁধে নামে গোটা রাজ্যেরই পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলি। ফের ২০১৫-’১৬ সালে শহরে ডেঙ্গুতে বহু মানুষ আক্রান্ত হন। তারপর মশা প্রতিরোধের পদ্ধতি এবং কার্যকলাপে বদল আনা হয়। কলকাতায় সতর্কীকরণের পাশাপাশি পুর কমিশনার ১৬টি বরোর স্বাস্থ্য আধিকারিককে নিজ নিজ এলাকার সম্ভাব্য মশার আঁতুড়ঘরগুলি সম্পর্কে জানাতে নির্দেশ দেন। সেই রিপোর্ট আসা মাত্র দেখা যায়, স্বাস্থ্যদপ্তরের অধীনস্থ ২৫টি জায়গার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এমনকী, এই তালিকায় রয়েছে শিশুদের হাসপাতালও। জমা জল ও স্তূপাকার আবর্জনা নিয়ে স্বাস্থ্যদপ্তরের উদাসীনতায় আতঙ্কিত স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা।
ওই চিঠি অনুযায়ী জানা গিয়েছে, কাশীপুরে নর্থ সাবার্বান হাসপাতাল, রবীন্দ্র সরণীর পরিবার কল্যাণ দপ্তরের স্টোর, রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের যক্ষ্মা হাসপাতাল, বিবেকানন্দ রোডের সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক, রাজা রাজকৃষ্ণ স্ট্রিটের ইএসআই হাসপাতাল, বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ের অবিনাশ দত্ত মাতৃসদন, নারকেলডাঙা মেন রোডের ডাঃ বি সি রায় হাসপাতাল, বাগমারি রোডের নার্সেস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বেলেঘাটা মেন রোডে আইডি হাসপাতাল, নারকেলডাঙা নর্থ রোডের পি সি চন্দ্র মেমোরিয়াল হাসপাতাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, কনভেন্ট রোডের পাস্তুর ইনস্টিটিউট, কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, ডাঃ জি এস বোস রোডস্থিত কেএমইউএইচও স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ওই এলাকারই লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতাল, লালা লাজপত রায় সরণীর শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের চিত্তরঞ্জন সেবাসদন, সাবার্বান হাসপাতাল রোডের পিজি পলিক্লিনিক, এম আর বাঙ্গুর হাসপাতাল, গাঙ্গুলিবাগানের ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রাজা এস সি মল্লিক রোডস্থিত কে এস রায় যক্ষ্মা হাসপাতাল, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ এবং উদ্বেগজনক। এই ২৫টি প্রতিষ্ঠানের জঞ্জাল ফেলার জায়গা, নিকাশি নালা, ছাদের উপর থাকা জলাধার, কর্মী আবাসন সহ একাধিক অংশ থেকে নেওয়া নমুনায় রোগবাহিত মশার বাসা গড়ে উঠেছে।
সুতরাং, দেখা যাচ্ছে—জনসচেতনতার জন্য বাড়ি বাড়ি প্রচার, বাড়ি-ফ্ল্যাটবাড়িকে জরিমানা করার গালভরা হুমকি, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে হোর্ডিং-ফ্লেক্স, টিভি, রেডিওয় প্রচারের পরেও গোড়ায় গলদ রয়েই গিয়েছে। রাজ্যের কোনও কোনও পথে হাঁটলে আজও দেখা যাবে, কোথাও না কোথাও আবর্জনা স্তূপ হয়ে রয়েছে। শহরতলি থেকে পঞ্চায়েত এলাকায় ঢুকলেই মিলবে খোলা নর্দমা, কিংবা জল নিকাশের ব্যবস্থা নেই। সরকারি দপ্তর এমনকী যে কোনও থানা-হাসপাতালের আশপাশে খোলা জায়গায় ঝোপজঙ্গল, ডাবের খোলা, টায়ার, ফেলে দেওয়া টিনে জল জমে রয়েছে। বিশেষত প্ল্যাস্টিক-কাগজের কাপ, ভাঁড়। ফলে, কেবলমাত্র চিঠি চালাচালি করাটাই কোনও কাজের কাজ নয়, প্রয়োজন যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ। সেই সেই দপ্তর যার অধীনে রয়েছে, তাঁকে এর জন্য দায়বদ্ধ করা। সাধারণ মানুষের জন্য যদি বিধিবদ্ধ শাস্তি বা জরিমানার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, তাহলে এক্ষেত্রে কেন ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকা গ্রহণ করা হবে?