মানস মহন্ত, শিলিগুড়ি, বিএনএ: আজ, শনিবার মহাসপ্তমী। ষষ্ঠীর মতো এদিনও পুজো পরিক্রমা শুরু হবে হাসমিচক থেকে। রেললাইন পেরিয়ে শহরের দক্ষিণ দিকের পুজোগুলি দেখব। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ফ্লাইওভার দিয়ে দেশবন্ধুপাড়া, ইন্ডোর স্টেডিয়াম হয়ে ফুলেশ্বরী রেল আন্ডারপাসকে বাঁদিকে রেখে ডানদিকে সোজা এগলে পাওয়া যাবে ক্ষণিক সংঘের পুজো। এখানে পুজো দেখে আন্ডারপাস পেরিয়ে এগলেই বাঁদিকে পড়বে তরুণ তীর্থের পুজো। এই মণ্ডপের পিছনের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে পড়বে মহিলা কলেজের মাঠের কোণে সূর্যনগর ফ্যান্সি ইয়ুথ ক্লাবের পুজো। শিল্পীর হাতের নিখুঁত তুলির টানে গোটা মণ্ডপটি সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এদের থিম ‘মা আসছেন রঙের ছোঁয়ায়’। এই পুজো দেখার পর কলেজের সামনের রাস্তার ধরে এগলেই সূর্যনগর মিউনিসিপ্যাল গ্রাউন্ডের উল্টোদিকের মাঠে সূর্যনগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়নের পুজো মণ্ডপ। এই পুজো দেখার পর ফুলেশ্বরী মোড়ে এসে এনজেপি রোড ধরে এগিয়ে বেত কোম্পানির উল্টো দিকের গলিতে ঢুকলে মাঠজুড়ে সবুজায়ন করা অগ্রণী সংঘের পুজো। এদের থিম ‘শীতল স্নেহের ছায়া’। গাছপালা পরিবেশকে শীতল রাখে, জল জীবের তৃষ্ণা মেটায়। তাই গাছপালার উপকারিতা, জল ধরে রাখার বার্তা এরা দিয়েছে। অগ্রণী সংঘের পুজো মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে এনজেপি মেইন রোড ধরে দেশবন্ধুপাড়ার পাইপ লাইনে রাস্তার ডানহাতে পড়বে হিমাচল সংঘের পুজো। এখানে ‘এক টুকরো মহাভারত’কে তুলে ধরা হয়েছে। মণ্ডপে প্রবেশের মুখেই রাখা আছে গীতা। মহাভারতের বিভিন্ন ঘটনা যেমন, অর্জুনের লক্ষ্যভেদ, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, ভীষ্মের শরশয্যা, কর্ণের রথের চাকা মাটিতে বসে যাওয়া, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ময়দানে অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ দেওয়ার মতো দৃশ্য রয়েছে। বিভিন্ন ছবি ও মডেল দিয়ে সেসব তুলে ধরা হয়েছে। এই মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে ডানদিকে এগিয়ে গেলে পড়বে গোপালমোড়। সেখান থেকে বাঁদিকে সোজা গেলে রয়েছে তরাই স্কুলের মাঠ। এই মাঠে এবারও বিগবাজেটের পুজো করেছে সুব্রত সংঘ। এদের থিম ‘থাকতে চাই মোরা আপন নীড়ে, হারিয়ে যাচ্ছি শহরের সভ্যতার ভিড়ে’। নারকেলের ছোবা, পাট, হোগলাপাতা সহ বিভিন্ন পরিশেবান্ধব উপকরণ দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। স্কুলের মাঠে বসেছে মেলা। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেরলে পাশেই রয়েছে দাদাভাই স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো। মাঠের পূর্বদিকে মণ্ডপ বানিয়েছে এরা। থিম ‘সোনার খাঁচার স্বপ্ন ফেরি’। এখন শিশুরা যে চার দেওয়ালের মাঝে বন্দি তাকেই থিমের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। সেজন্য মূল মণ্ডপের সামনে সুদৃশ্য খাঁচা বানানো হয়েছে। মণ্ডপের ভিতরে আছে কাচের কাজ। মণ্ডপের বাইরে ১৫০০’র বেশি পাখির মডেল রয়েছে। দাদাভাই ক্লাবের মোড় থেকে পশ্চিম দিকের রাস্তা ধরে সোজা এগিয়ে একটা ছোট বাঁক নিলেই ডানদিকে মাঠের মধ্যে দেখা যাবে ওয়াইএমএ’র পুজো। ‘বিপন্ন সবুজ, বিপন্ন প্রাণ’ এদের থিম। এখান থেকে আলো চৌধুরী মোড়ে গিয়ে ডানদিকে গেলে শক্তিসোপান ক্লাবের পুজো দেখা যাবে। ওই মোড় থেকে বাঁদিকে শ্রীমা সরণী ধরে এগলে রাস্তাতেই পড়বে সানরাইজ ক্লাবের পুজো। এখান থেকে কিছুটা এগলেই পাওয়া যাবে নবগ্রাম উইনার্স ক্লাবের পুজো। উইনার্স ক্লাবের পুজো থেকে গেটবাজার মোড়ে পৌঁছে বাঁদিকে সোজা গেলেই এনজেপি সেন্ট্রাল কলোনির বিগবাজেটের পুজো। এদের থিম ‘নবপত্রে সনাতনী’। তালপাতা, হোগলাপাতা, নারকেলপাতা, ঘাস সহ ন’রকম পাতা দিতে মণ্ডপ বানানো হয়েছে।
সেখান থেকে গেটবাজার মোড়ে ফিরে এসে শক্তিগড়ের দিকে এগলে প্রথমেই রাস্তার বাঁদিকে পড়বে বলাকা ক্লাবের পুজো। এই পুজো দেখে শক্তিগড় স্কুলের দিকে গেলে শক্তিগড় স্কুলের মাঠে দেখা যাবে উজ্জ্বল সংঘের পুজো। ডেঙ্গু রোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এদের থিম ‘মশাশুরের দেশে’। কোথায় মশার আঁতুরঘর হয়, কীভাবে মশা নিধন করতে হবে সেসব এখানে দেখানো হয়েছে। এখান থেকে জলের ট্যাঙ্কের সামনে দিয়ে একটু এগিয়ে বাঁদিকে ঘুরে দেড়শো মিটার গেলে রবীন্দ্র মঞ্চের সামনে শক্তিগড় শৈলেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগারের পুজো। এদের থিম ‘মা আসছেন স্বপ্নে উড়ান’। আমরা ঘুমিয়ে পড়লে কিংবা কখনও জেগে থেকেও অলীক কল্পনার দেশে চলে যাই। শিল্পীর ভাবনায় সেই স্বপ্ন মণ্ডপে উঠে এসেছে। এখান থেকে ট্রাফিক পুলিসের নির্দেশিত পথে এগিয়ে যেতে হবে জলপাইমোড়ের দিকে। জলপাইমোড় থেকে এসএফ রোড ধরে সোজা এগলে রাস্তার দু’ধারে পরপর দু’টি পুজো দেখা যাবে। একদিকে মিলনপল্লি যুবক বৃন্দের পুজো অন্যদিকে মিলনপল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো। মিলনপল্লি সর্বজনীন ভুট্টাদানা ও শুকনো লঙ্কা দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছে। এরপর সোজা রাস্তা ধরে থানা মোড়ে এসে আনন্দময়ী কালীবাড়ির পুজো দেখে এদিনের মতো পুজো পরিক্রমা শেষ করা যেতে পারে।