বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতাদের নিস্পৃহ আচরণের প্রতিবাদে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এই কিশোরী। তার দেখানো পথে হেঁটে ‘পরিবেশের জন্য শুক্রবার’ নামে এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার পডুয়া। প্রাপ্তবয়স্কদের সচেতন করতে তারা প্রতি শুক্রবার স্কুলে না-গিয়ে রাস্তায় নেমে মিছিল-সমাবেশ করে।
‘অ্যাসপারগার সিন্ড্রোম’ নামে বিরল মনোরোগে আক্রান্ত গ্রেটা চিরকালই স্পষ্ট বক্তা বলে পরিচিত। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে বলার সময়েও কোনও ‘মেকি’ সৌজন্য দেখায়নি। কী ভাবে ‘প্রাপ্তবয়স্করা’ পরিবেশের বিশাল ক্ষতি করে চলেছে, কেমন করে রাষ্ট্রনেতারা ‘কথা রাখেননি’, তার খতিয়ান দিয়েছিলেন। বলেন, ‘‘পরিবেশ রক্ষা করতে বারবার নানা সময়সূচি ঠিক করেছ তোমরা। আবার তোমরাই সেই সময়সূচি মানোনি। শুধুই আর্থিক বিকাশ নিয়ে কথা বলে গিয়েছ। ফলে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’’ রূঢ় স্বরে সে বারবার একই কথা বলতে থাকে— ‘‘তোমাদের এত দুঃসাহস হয় কী করে!’’ গ্রেটার সাবধানবাণী— ‘‘এখনও যদি কিছু না কর, আমরা কিন্তু তোমাদের ক্ষমা করব না। কখনওই না।’’
যেকোনও ধরনের অনুমানের ওপর অনিশ্চয়তা বেশি কাজ করে। এ ছাড়া নোবেল কমিটি যেহেতু ওই পুরস্কার দেওয়ার আগে তালিকায় থাকা নামগুলো প্রকাশ করে না, ফলে জল্পনা-কল্পনা আরও বেশি। হিংসা ঠেকাতে অবদান, না জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে অবদান রাখায় শান্তিতে নোবেল দেওয়া হবে, এটা নিয়েও একধরনের বিতর্ক রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। ফলে অনিশ্চয়তা আরও বেশি। নরওয়ের রাজধানী অসলোতে ১১ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। এর আগের দিন ঘোষণা করা হবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। ওই দিন সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে শান্তিতে মনোনয়ন পাওয়া কয়েকজনের নাম প্রকাশ করা হবে।
গত বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন কঙ্গোর নাগরিক ডেনিস মুকওয়েগে এবং ইরাকের মানবাধিকারকর্মী নাদিয়া মুরাদ। যৌন হিংসা ঠেকাতে অবদান রাখায় তাঁদের নোবেল দেওয়া হয়। কিন্তু এবার অনেকেই বাজি ধরছেন, গ্রেটা থুনবার্গ পাবে শান্তিতে নোবেল। সম্প্রতি দু’টি পুরস্কার পেয়েছে সে। লন্ডনের মানবাধিকারবিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের সর্বোচ্চ সম্মাননা পুরস্কার দিয়েছে গ্রেটাকে। এ ছাড়া সুইডেনের বিকল্প নোবেলখ্যাত ‘২০১৯ রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড’ পাচ্ছে গ্রেটা। এই জল্পনা-কল্পনার মধ্যে গ্রেটার পক্ষে কথা বলেছেন স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডান স্মিত। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে গ্রেটা যা করেছে, তা অসাধারণ। শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
তবে পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলোর হেনরিক উরডাল বলেছেন, তাঁর ধারণা, গ্রেটা নোবেল পাবে না। এবার সম্ভাবনা খুবই কম। এবার কারা শান্তিতে নোবেল পেতে পারেন, তার একটি ইঙ্গিতও দিয়েছেন হেনরিক। তিনি বলেন, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ এবার নোবেল পেতে পারেন। কারণ তাঁর প্রচেষ্টায় ইরিত্রিয়ার সঙ্গে ইথিওপিয়ার শত্রুতাপূর্ণ মনোভাবের অবসান হয়েছে। এ ছাড়া দু’টি প্রতিষ্ঠান রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এবং কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টও পেতে পারে এই পুরস্কার।
এই সেই মেয়ে, যে পনেরো দিনের জলপথের পাড়ি শেষ করে নিউ ইয়র্কে পৌঁছেছিলেন। সুইডেন থেকে বিমানে নিউ ইয়র্ক পৌঁছনো অনেক সহজ হলেও সে পথে যায়নি গ্রেটা। যাত্রাপথে এতটুকু কার্বন-দূষণ যাতে না হয়, সে জন্য পরিবেশ সচেতন কিশোরী বেছে নিয়েছিল পাল তোলা বড় নৌকা। সৌর প্যানেল থেকে সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে এবং জলের নীচে টারবাইন ঘুরিয়ে জলবিদ্যুতের শক্তিতে ওই জলযানকে চালানো হয়। অতলান্তিক পেরিয়ে যখন ১৬ বছরের এই কন্যার নৌকা ব্রুকলিনের কোনি দ্বীপে পৌঁছয়, তখন সেখানে সাংবাদিক আর শুভাকাঙ্ক্ষীর ভিড়। সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটারের পথ পেরিয়ে আসা কিশোরীকে ঘিরে ছবি তোলার ধুম। সকলেই চিৎকার করে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রেটাকে। পৌঁছনোর আগে গ্রেটা নিজে একটি দূরের আলো-মাখা ঝাপসা ছবি ট্যুইটারে পোস্ট করে লিখেছে, ‘‘ল্যান্ড!!! দ্বীপের আলো, আর অদূরেই নিউ ইয়র্ক সিটি।’’