দক্ষিণবঙ্গ

কালনায় প্রাচীন মন্দিরগুলির টেরাকোটার কাজ নষ্ট হচ্ছে, হতাশ ইতিহাস গবেষকরা

গণেশ মজুমদার, কালনা: বৈষ্ণব, শৈব ও কালী সাধনার পবিত্র তীর্থক্ষেত্র কালনা। এই শহরের একদিকে যেমন রয়েছে প্রাচীন বৈষ্ণব ক্ষেত্র। তেমনই রয়েছে শৈব ধর্মাবলম্বী ও কালী সাধানার মঠ মন্দির। শুধু কালনা শহর নয়, শহরতলিতে শতাব্দীপ্রাচীন আরও নানা মন্দির রয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে ধর্মীয় ভাবাবেগের সঙ্গে রয়েছে নানা শিল্প নৈপুণ্যের স্থাপত্য। যা দেখতে সারা বছর দেশ-বিদেশের ভক্তরা ভিড় করেন।
মাত্র সাড়ে চার বর্গ কিলোমিটার প্রাচীন ভাগীরথী নদী তীরবর্তী কালনা শহর। একসময় বাণিজ্য নগরী হিসেবে খ্যাত ছিল কালনা। পাশাপাশি মনোরম পরিবেশ সমৃদ্ধ এই শহর। নদীপথে নদীয়ার শান্তিপুর ও কালনার পাশেই রয়েছে হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়া। কালনা-কাটোয়া রুটে অম্বিকা কালনা স্টেশনে নেমেই এখানে আসা যায়। স্টেশন থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে শহরের মধ্যস্থলে রয়েছে বৈষ্ণব, শৈব ও কালী সাধনার পীঠস্থান মঠ-মন্দির। কালনা ঠাকুরপাড়ায় রয়েছে পাঁচশো বছরের প্রাচীন মহাপ্রভু মন্দির। এই মন্দিরে স্বয়ং চৈতন্যদেব নদীপথে নৌকায় এসেছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় মন্দিরে চৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ প্রভুর পুর্ণাবয়ব দারু মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। যা জীবন্ত সচল ঈশ্বরীয় রূপে খ্যাত। মন্দিরে সংরক্ষিত আছে চৈতন্য মহাপ্রভুর ব্য‌ব঩হৃত নৌকার বৈঠা ও নিজ হস্তে লেখা পুঁথি। পাশেই রয়েছে সূর্যদাস পণ্ডিতের টোল। যা নিত্যানন্দ প্রভুর শ্বশুরালয়। যা শ্যামসুন্দর মন্দির নামে পরিচিত। আজও মন্দিরে বিবাহস্থল কুলতলা বিদ্যমান। অনেকে মনে করেন, হিন্দু মতে বিবাহের পরই নবদম্পত্তি কুলতলায় আশীর্বাদ নিতে আসেন। এছাড়াও চৈতন্য মহাপ্রভুর চরণচিহ্ন যুক্ত শিলাখণ্ড বিশ্রামস্থল তেঁতুলতলা বিরাজমান।
বর্ধমান রাজাদের কাছে কালনা ছিল প্রিয় নগর। রাজ পরিবারের হাত ধরেই শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠে একাধিক বৈষ্ণব ও শিব মন্দির। ১৭৩৯ সালে গড়ে ওঠে পঁচিশ চূড়ার লালজি মন্দির। পাশে আরও একটি পঁচিশ চূড়া কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির গড়ে তোলে রাজ পরিবার। অপূর্ব শিল্পনৈপুণ্যে টেরাকোটার স্থাপত্যে ভরা দু’টি মন্দির। লালজি মন্দিরে রয়েছে গিরি গোবর্ধণ মন্দির। মন্দির উপরের অংশে রয়েছে নানা দেবদেবী ও পশুপাখির মূর্তি। কয়েক ফুট দূরে রয়েছে রাসমঞ্চ। একসময় রাস উৎসবে এই মঞ্চে উৎসবের ঢেউ ভক্তদের মন কাড়ত। আজ অনেকটাই ধংসপ্রাপ্ত। পাশেই রয়েছে সুউচ্চ প্রতাপেশ্বর দেউল বা শিব মন্দির। মন্দির গাত্রে রয়েছে পৌরানিক ও তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার নানা দিকের অপূর্ব শিল্প ভাস্কর্য। অনতিদূরে রয়েছে শৈব ধর্মালম্বলীদের ১০৮শিব মন্দির। এমন মন্দির বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই। জ্যামিতিক নিয়মে দু’টি বৃত্তাকারে প্রতিটি মন্দিরে সাদা- কালো শিবলিঙ্গগুলি উত্তর দিক নির্দেশ করছে। মন্দিরময় এলাকাটি রাজবাড়ি চত্বর নামে পরিচিত। শ্রাবণ মাস, শিবরাত্রি, জন্মাষ্টমী ভিড় উপচে পরে। তবে সারা বছর দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। রাজবাড়ি চত্বরের প্রতিটি মন্দির ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীন। এছাড়াও রয়েছে জলেশ্বর মন্দির, পঞ্চরত্ন মন্দির, রূপেশ্বর মন্দির, রত্নেশ্বর প্রভৃতি মন্দির।এছাড়াও রয়েছে ভগবানদাস বাবাজির পাতালগঙ্গা মন্দির। কথিত আছে, বৈষ্ণব সাধক ভগবান দাস বাবাজি প্রতিদিন ভাগীরথী নদীতে স্নান করে ঠাকুরের পূজার্চনা করতেন। কিন্তু বার্ধক্যে তিনি তা পারছিলেন না। তিনি রাধা-গোবিন্দের কাছে প্রার্থনা করেন, তাঁর আর নদীতে স্নান করে পুজোপাঠের ক্ষমতা নেই। মন্দির প্রাঙ্গণে যদি মা গঙ্গার আবির্ভাব ঘটে তবে তাঁর ইচ্ছা পূরণ হয়। পরদিনই সকালে উঠে ভগবান দাস বাবাজি দেখেন মন্দির প্রাঙ্গণে মাটি ফুঁড়ে জল বের হচ্ছে। তিনি বুঝতে পারেন প্রভু তাঁর ডাকে সারা দিয়েছেন। যা আজও পাতালগঙ্গা নামে ভক্তদের কাছে পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে গোপালবাড়ি, বিদ্যাবাগীশ পাড়ায় রয়েছে সাধক কমলাকান্তের বাস্তুভিটে, জাপট মিশনপাড়ায় রয়েছে সাধক ভবাপাগলা আশ্রম। কালনা-২ ব্লকের গোপালদাসপুরের রাখাল রাজা মন্দির, জগৎগৌরী মা মনসা মন্দির। কালনা-১ ব্লকে রয়েছে গোপেশ্বর মন্দির।
কালনার বাসিন্দা সুশীল মিশ্র বলেন, পর্যটক টানতে যা সম্পদ থাকার তা যতেষ্ট মজুত রয়েছে। এত অল্প পরিসরে এক স্থাপত্য আর কোথাও নেই। আমরা ঠিকমতো মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারছি না। পর্যটনের মধ্যে দিয়ে কালনার অর্থনীতি চাঙ্গা করতে আরও থাকার হোটেল বা লজ ও সৌন্দর্যায়ন খুবই প্রয়োজন। সরকারের সেদিকে নজর দিলে ভালো হয়। ইতিহাস গবেষক শিক্ষক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কালনার প্রাচীন স্থাপত্যগুলি রক্ষণাবেক্ষণ অনেটাই ঢিমেতালে চলছে। নষ্ট হচ্ছে মন্দির গাত্রের শিল্প নৈপুণ্যের প্রচীনত্ব। সরকারিভাবে সংস্কার ও নজরদারি আরও দরকার।  • নিজস্ব চিত্র
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

অতিরিক্ত কর্মের চাপ গ্রহণ করে বেকায়দায় পড়তে পারেন। নতুন কর্মলাভের সম্ভাবনা। আয় বাড়বে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮২.৬৮ টাকা৮৪.৪২ টাকা
পাউন্ড১০৯.৫৩ টাকা১১৩.১১ টাকা
ইউরো৯১.৭৫ টাকা৯৪.৯৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
21st     September,   2024
দিন পঞ্জিকা