গল্পের পাতা

গুপ্ত রাজধানী: ফিরোজ শাহ কোটলা দুর্গ
সমৃদ্ধ দত্ত

তিমুর ই বেগের মধ্যে সৃষ্টি ছিল না। তার পূর্ববর্তী আরও অনেক শাসকদের মতোই তার আনন্দ ছিল ধ্বংসে। ধ্বংস মানেই লুটপাট। লুট মানেই পাহাড়সমান সম্পদ। যত সম্পদ, তত বড় হবে সেনাবাহিনী। যত বড় হবে সেনাবাহিনী, ততই বেড়ে চলবে সাম্রাজ্য। তিমুর ই বেগ যাকে ইতিহাস তিমুর ই লঙ কিংবা তৈমুর লঙ আখ্যা দিয়েছে। তিনি নিজেকে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইতেন। তাই তিনি জ্যোতিষী আর মৌলবীদের নিয়ে নিজের নামের একটি উপাধি তৈরি করে নিয়েছিলেন। সাহিব কুরান। এই উপাধি কোন শক্তিধর পায়? মধ্যযুগে ইসলামিক পশ্চিম এশিয়ায় এই উপাধি পাওয়া মানে হল, যার উপর একইসঙ্গে দুই প্রধান গ্রহ বৃহস্পতি আর শনির প্রভাব আছে। তাই সে অপরাজেয়। তৈমুর ১৩৭০ সালে বেরিয়েছিলেন বিশ্বজয় করতে। কখনও ফিরেছেন, কখনও বহু বছর ফেরেননি। কিন্তু ১৪০৪ সালে যখন স্থায়ীভাবে ক্লান্ত হয়ে তিনি সমরখন্দে ফিরেছিলেন, তখন তিমুর তথা তৈমুর লঙের অধিকারে বিপুল সাম্রাজ্য। দিল্লি আর বাগদাদ মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন প্রায়। তিফিল, আলেপ্পো, দামাস্কাস দখল করা হয়ে গিয়েছে। আজকের মস্কোয় পৌঁছে গিয়েছেন। মিশরের সুলতান আত্মসমর্পণ করেছেন। এমনকী চীনের একাংশ বশ্যতা স্বীকার করেছে। 
কিন্তু সবথেকে বড় ক্ষতি তৈমুর করেছেন হিন্দুস্তানের। দিল্লি। ১৩৯৮ সালে খা‌ইবার পাস হয়ে যখন তিনি দেখলেন কোনও বড়সড় বাধাই এল না, তখন অবাক লেগেছিল। যদিও অবাক হওয়ার কারণ ছিল না। কারণ ততদিনে কুশাসন আর ঝগড়াবিবাদ এবং ক্ষমতার দম্ভে পাগলামির জেরে তুঘলক রাজত্ব প্রায় ধুঁকছে। শেষ শক্তিশালী সুলতান ছিলেন ফিরোজ শাহ। তারপর থেকে আর সেরকম সুলতান কোথায়? তাই তৈমুর অনায়াসে দিল্লি এলেন। আর নৃশংস ধ্বংস ও মৃত্যুলীলায় মেতে উঠলেন। এই নগরী অভিশপ্ত। একের পর এক আক্রমণ হয়েছে। আর সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। তৈমুরে আক্রমণ ছিল এরকমই ভয়ঙ্কর। ৮০ হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছে তাঁর নৃশংসতায়। 
তৈমুর এসেই সবথেকে আগে খবর নিয়েছিলেন কোথায় পাওয়া যাবে ধনসম্পদ। দিল্লিজুড়ে আক্রমণ আর লুণ্ঠন চললেও  তাকে জানানো হল, কুবেরের বিষয়আশয় এখনও রাখা আছে একটি দুর্গে। ফিরোজ শাহ কোটলায়। মহম্মদ বিন তুঘলকের এক জ্ঞাতিভাই এই ফিরোজ শাহ তুঘলক তখনও পর্যন্ত শেষ শাসক যিনি দিল্লিকে এক সুরম্যনগরীতে পরিণত করেছিলেন। ১ হাজার ২০০ বাগান, ২০০টি ছোট ছোট উপ নগরী, ৩০টি জল সংরক্ষণ ব্যবস্থা, ৫০টি বাঁধ, দেড়শোর বেশি সেতু। এবং এক দুর্গ। যমুনা নদীর তীরে। দুর্গে বাস করতেন ফিরোজ শাহ কোটলা। সমস্যা একটাই। দুর্গ নির্মাণের কারণ যা, সেই আসল উদ্দেশ্যই পালন করতে পারেননি তিনি। সেটি হল, সুরক্ষা নির্মাণ। যেকোনও শাসক কেল্লা বা দুর্গ নির্মাণ করেন সুরক্ষার কথা ভেবেই। যাতে বহিরাগত আক্রমণ ঠেকানো যায়। সেই কারণেই কমবেশি প্রতিটি কেল্লাকে ঘিরে থাকে পরিখা অথবা বড়সড় খাল। কিন্তু ফিরোজ শাহ এসব ভাবেননি। তাঁর অবসান হয়েছিল ১৩৮৮ সালে। ১০ বছর পর যখন তৈমুর আক্রমণ করলেন দিল্লি , তখন সেই দুর্গ রক্ষা করার মতো শক্তিশালী কেউই ছিলেন না। অতএব এক্ষেত্রেও তৈমুর দুর্গ আক্রমণ করে লুণ্ঠন ও কিয়দংশ ধ্বংস করে গেলেন।
দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা বলতে যারা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কথাই জানেন, সেই পর্যটকদের অপেক্ষায় সারা বছর অপেক্ষা করে ফিরোজ শাহ কোটলার দুর্গ। বাহদুর শাহ জাফর মার্গ ধরে দিল্লি ফোর্টের দিকে অগ্রসর হওয়ার পর ডানদিকে যে গলিটা প্রবেশ করেছে, সেটাই হল ফিরোজ শাহ কোটলার প্রবেশপথ। 
১৩৫৪ সালের আগে তুঘলক বংশের রাজধানী ছিল এই নগরের দক্ষিণে।  তুঘলকাবাদ। সেই নগরী  ছেড়ে এলেন ফিরোজ শাহ। পশ্চিমে চলে এসে  যমুনাতীরে নির্মাণ করলেন নয়া শহর। ফিরোজাবাদ। এতদিন রাজধানী ছিল আরাবল্লী পাহাড়ের অংশে। এবার যমুনার কাছে। কারণ জলের সমস্যা। এখানে জলের অভাব নেই। ফিরোজাবাদ নতুন রাজধানী। সেখানে গড়ে তোলা কেল্লা ফিরোজ শাহ কোটলা। 
ওই যে ওটা হল জামি মসজিদ। না, জামা মসজিদ নয়। সেটা আলাদা জায়গায়। আর একটু দূরে। এটা হল জামি মসজিদ। যা মুঘল পূর্ববর্তী তুর্কি স্থাপত্যের নিদর্শন। কিন্তু এ কী! এই ধ্বংসস্তূপের মতো দেখতে ভাঙাচোরা প্রাচীর, দীর্ঘ স্তম্ভ, গম্বুজ আর সারিবদ্ধ ব্যারাকের মতো অন্ধকার ঘর এবং অন্ধকূপের মতো পাতাল প্রবেশের আহ্বান সংবলিত দুর্গে ঢুকলে কেমন একটা গা ছমছম করছে কেন?
নিঝুম দুপুর অথবা শাহজানাবাদের দিকে ডুবে যাওয়া সূর্যের আলোয় মানুষের আনাগোনা থাক আর নাই থাক, কিছু ফকির, কিছু ঘরছাড়া আর কিছু ঘরপোড়া মনপোড়াদের আশ্রয় দেয় ফিরোজ শাহ কোটলা। আর তাদেরই আশপাশে ঘুরে বেড়ায় রোদে আর ছায়ায় কিছু বিড়াল, কিছু পায়রা, কিছু ছাগল, কিছু প্রজাপতি, কিছু কুকুর আর একরাশ ফড়িং। এরা কারা? দীর্ঘকালের বিশ্বাস এরাই হল, ফিরোজ শাহ কোটলার জিন (দৈত্য)। আসল জিনরা অদৃশ্য হয়ে ঘুরছে। এরা হল সেইসব জিনের প্রতিনিধি। অথবা প্রচ্ছায়া। পুরনো দিল্লির আস্থা এই জিনে। এই জিনের দলের আলাদা আলাদা নাম। জিনদের নাম? হ্যাঁ। কেউ নানহে বাবা! কেউ লাথ ওয়ালে বাবা। কেউ জিন মামু। কেউ পাহাড়ি চাচা! 
এই সংস্কার আর বিশ্বাস কি নিছক লোককথা? একেবারেই নয়। ১৯৭৬ সালে তুর্কমান গেটে যে পুলিসি তাণ্ডব হয়েছিল সেকথা সর্বজনবিদিত। সেই ঘটনার রাজনৈতিক অভিঘাত ইতিহাসে প্রকট। কিন্তু সকলের আড়ালে সেই তুর্কমান গেট ছেড়ে চলে এসেছিলেন এক ফকির। লাডো শাহ। সঙ্গে করে নিয়ে এলেন তাঁর চারপাশে ঘিরে থাকা জিনেদের। লাডো শাহ তো সেই কবেই চলে গিয়েছেন অন্য জগতে। তাঁর জিনদের সম্পর্কে মানুষের আস্থা আর শ্রদ্ধা রয়ে গিয়েছে। তাই পুরনো দিল্লি মেয়ের বিয়ে, ছেলের চাকরি, সংসারে শান্তি, হাসপাতালে ভর্তি থাকা স্বজন, দূরে থাকা আত্মীয় অথবা ঘরে থাকা মানুষের উন্নতি, যেকোনও প্রার্থনা করে ফিরোজ শাহ কোটলার জিনদের কাছে। কীভাবে? প্রতি বৃহস্পতিবার একটি করে চিঠি লিখতে হবে। সেই চিঠি কোটলায় গুহামুখে অথবা আড়ালে রেখে আসতে হবে। কী চাইছেন? লেখা থাকবে চিঠিতে। সেইসব মানত নাকি পূর্ণ হয়! উপকারী জিনদের আশীর্বাদে! 
ফিরোজ শাহ কোটলা। দিল্লির জিনদুর্গ! 
4Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধায় চিন্তা ও উদ্বেগ। বেকারদের ভালো প্রতিষ্ঠানে কর্মপ্রাপ্তির প্রবল যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৩ টাকা৮৪.৯৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.০৬ টাকা১১১.৮৬ টাকা
ইউরো৮৯.৯১ টাকা৯৩.৩২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     October,   2024
দিন পঞ্জিকা