গল্পের পাতা

অভিশপ্ত কুলধারা

সমুদ্র বসু: অলৌকিক তকমা স্থান-নামের সঙ্গে আলাদা মাত্রা যোগ করে। অলৌকিক ব্যাপার নিয়ে বিশ্বাসী অবিশ্বাসী দু’পক্ষেরই নিজস্ব দাবিদাওয়া আর মতামত অন্তহীন। আর এমনই অজস্র অলৌকিক ঘটনার ঘনঘটায় মোড়া ভারতবর্ষ। স্থান কাল বিশেষে ভারতের পরিধি সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ জুড়ে রয়েছে এমন অজস্র অলৌকিক ভাণ্ডার। ইতিহাস, মিথ আর জনবিশ্বাসের মিশেলে সেইসব কাহিনি সময়ের সঙ্গে মান্যতা পেয়ে আসছে। আর যা কিছু আলো-আঁধারিতে ঘেরা, যেখানেই রহস্যের সামান্যতম আভাস, সেখানেই মানুষের আগ্রহ অপরিসীম। সত্যি মিথ্যা বিশ্বাস সরিয়ে রাখলে একথা অনস্বীকার্য যে এমন কাহিনি প্রকারান্তরে সেই স্থানকে আরও বেশি চর্চিত করে তোলে।
ভারতের মানচিত্রে অবস্থিত রাজস্থান রাজ্যটি জনপ্রিয় বিবিধ কারণে— সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্রে যার উজ্জ্বল উপস্থিতি। এই রাজস্থানেরই অন্যতম প্রসিদ্ধ শহর জয়সলমির। সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’র সুবাদে এই শহর বাঙালির কাছে আরও বেশি পরিচিত। জয়সলমির থেকে আনুমানিক ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি শহর কুলধারা। বলা ভালো পরিত্যক্ত শহর। এই কুলধারাই আজকের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। একসময়ে সমৃদ্ধ কুলধারা কীভাবে আজকের অভিশপ্ত কুলধারায় পরিণত হয়েছে জানার জন্য পিছিয়ে যেতে হবে কয়েকশো বছর। কথিত আছে, ১২৯১ সাল নাগাদ মূলত পালিওয়াল ব্রাহ্মণদের দ্বারা এই গ্রামের পত্তন হয়। সমৃদ্ধ জনপদ কুলধারা মূলত কৃষিনির্ভর ছিল। তবে এটিকে মরূদ্যান বললেও অত্যুক্তি হয় না। আজও পরিত্যক্ত এই জনপদের অবশিষ্ট থেকে একদা উন্নত অবস্থার আন্দাজ পাওয়া যায়। কিন্তু রাজস্থানের মতো মরু অঞ্চলে সবরকমভাবে বসবাসের অনুকূল পরিবেশ সত্ত্বেও হঠাৎই কীভাবে রাতারাতি জনশূন্য হয়ে গেল গোটা জনপদ তা আজও রহস্যময়। শুনতে আশ্চর্যজনক হলেও এমনটাই মনে করা হয়ে থাকে যে, ১৮২৫ সাল নাগাদ রাতারাতি ওই অঞ্চলের চুরাশিটি গ্রামের বাসিন্দারা গায়েব হয়ে যান। জনশ্রুতি, তৎকালীন সময়ে জয়সলমিরের দেওয়ান ছিলেন অত্যাচারী সেলিম সিং। দুর্নীতিপরায়ণ, অত্যাচারী, ক্রূর— সমস্ত দোষই ছিল সেলিম সিংয়ের মজ্জাগত। একদিন তাঁর কুনজর পড়ে কুলধারার গ্রাম প্রধানের সুন্দরী কন্যার দিকে। কিন্তু তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় ব্রাহ্মণদের প্রতিবাদ। যদিও এতে দমে যাননি সেলিম সিং। ক্রমে নিজের দাবি মেটানোর জন্য গ্রামবাসীদের উপর অস্বাভাবিক করের বোঝা চাপাতে থাকেন তিনি, যাতে গ্রামবাসীরা পিছু হটে, মেয়েটিকে তাঁর অধীনে করে দেয়। আর এমন সময়ই ঘটে সেই অত্যাশ্চর্য, অমীমাংসিত ঘটনাটি। রাতারাতি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায় গ্রামের সমস্ত বাসিন্দা। সব কিছুই ছিল যথাস্থানে, শুধু ছিল না কোনও মানুষ। তাদের আর সন্ধান মেলেনি কখনও। স্বভাবতই যা নিয়ে চর্চা আজও চলে বিস্তর। কেউ বলেন, অত্যাচারী দেওয়ানের হাত থেকে বাঁচার জন্য রাতারাতি একবস্ত্রে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সবাই। আবার কারওর মতে, কুলধারার অধিবাসীরা পরবর্তী সময়ে পশ্চিম রাজস্থানের যোধপুর শহরের কাছাকাছি কোনও একটি স্থানে বসতি গড়েছিলেন। যদিও দু’ক্ষেত্রেই তর্কের সুযোগ রয়েছে বিস্তর, যেমন এত সংখ্যক মানুষ একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ার পথে কারওরই নজরে এল না বা পরবর্তীতেও কুলধারার পালিওয়াল ব্রাহ্মণদের বংশধরদের সন্ধান পাওয়ার মতো প্রামাণ্য তথ্য মেলেনি। আলোচনা প্রসঙ্গে উঠে আসে অলৌকিক অনুষঙ্গও। যদিও উত্তর অমিল। শোনা যায় দেওয়ান সেলিম সিং পুনরায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সেখানে যাঁরাই রাত কাটাতেন, তাঁদেরই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হতো। ক্রমেই কুলধারা ঘিরে নানা কাহিনি হাওয়ায় ভাসতে থাকে। আজও বড় অংশের মানুষের বিশ্বাস যে, তৎকালীন বাসিন্দাদের অভিশাপেই জনশূন্য হয়ে রয়েছে কুলধারা। তাঁরা যেমন সেখানে শান্তিতে বাস করতে পারেননি, অন্য কেউও পারবে না। আজও সেখানে হাওয়ায় নাকি ভাসে অতীতের দীর্ঘশ্বাস। সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে বহু বছর। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ধূসর হয়ে যায়নি কুলধারা অধ্যায়। আজও এই পরিত্যক্ত জনপদ ঘিরে মানুষের কৌতূহল, আশঙ্কা রয়েছে পুরো মাত্রায়। সময়ের সঙ্গে বেশকিছু বাড়ি ভগ্নপ্রায় হলেও অক্ষত আছে আরও কিছু বাড়ি এবং গ্রামের মন্দির। আশপাশের এলাকার পরিবর্তন পুরো মাত্রায় হলেও কুলধারায় যেন সময় থমকে আছে আজও।
এই রহস্যময়  কুলধারা নিয়ে বিভিন্ন প্যারানরমাল সংস্থা গবেষণা চালিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। তাঁদের সদস্যদের অজানা কেউ কখনও ডেকেছে নাম ধরে, কখনও ধাক্কা দিয়েছে। কেউ কেউ পেয়েছেন কান্নার আওয়াজ। তারপর গাড়ির কাচে শিশুর হাতের ছাপ পাওয়া বা তাপমাত্রার হঠাৎ হঠাৎ অস্বাভাবিক পরিবর্তন হওয়ার মতো বিচিত্র এবং ব্যাখ্যাহীন কিছু ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন গবেষকরা। লেখালিখিও হয়েছে বিস্তর। তবে কেউই কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি। যা জন্ম দিয়েছে আরও অনেক প্রশ্নের। উত্তর আজও অজানা। সময়ের মতোই জটিল এবং রহস্যময় গ্রাম এই কুলধারা। ভারত সরকার কুলধারাকে হেরিটেজ নগরী হিসেবে ঘোষণা করেছে। বলাই বাহুল্য এই ঘোষণা কুলধারার আকর্ষণে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জনের জন্য আপনিও সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করে আসতে পারেন মরুরাজ্যের নগরী কুলধারা। 
1Month ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১০ টাকা৮৪.৮৪ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৪ টাকা১১২.১৯ টাকা
ইউরো৯১.৫৩ টাকা৯৪.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
14th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা