পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
অমল-চারুলতা তথা সৌমিত্র-মাধবী জুটি নিয়ে বাঙালির আগ্রহে আজও ভাটা পড়েনি। এতবছর পরেও শ্যুটিং করার সময় সেই পুরনো জুটি বা বন্ধুত্বের সান্নিধ্য কতটা উপভোগ করেন?
আমার খুব একটা বিশেষ অনুভূতি হয় না যে, আমরা একসময় বড় বড় নায়ক-নায়িকা ছিলাম, আজ আবার ফিরে এসেছি। যা ছিল, ছিল। বর্তমান যা, সেটাকে নিয়েই চলাই ভালো। সেইদিক দিয়ে আমি খুব সৌভাগ্যবান যে, এখনও কাজ করতে পারছি। আমার বয়সি বা বন্ধু স্থানীয় অভিনেতা-অভিনেত্রী, তাঁদের অনেকেই আর নেই। এক এক করে চলে যাচ্ছেন। এটা একদিক থেকে একটা মনোবেদনার কারণ বইকি। সেখানে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে, ওই খানিকটা গল্প-গুজব, গোমড়া মুখে সেটে বসে না থেকে খানিকটা আনন্দের সঙ্গে কাজ করা যায়। এই আর কি!
রমাপদ চৌধুরীর ‘ছাদ’ গল্পটি অবলম্বনে তৈরি ‘বরুণবাবুর বন্ধু’তে অভিনয় করতে করতে ছবির গল্পে, কাঠামোয়, নির্মাণে কোনও নতুনত্ব পেলেন?
এই কাহিনীটাকে আশ্রয় করে একটা শর্ট ফিল্ম অনেকদিন আগেই হয়েছিল। অনীক দত্তর ছবিটা পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি। বরুণবাবুর বাড়িতে, মানে যে চরিত্রটাতে আমি অভিনয় করেছি, তাঁর একজন পুরনো বন্ধু আসবেন। এইটুকু ছাড়া পুরো কাহিনীচিত্রটা নতুন করে তৈরি হয়েছে। ছবির চিত্রনাট্য শুনেই আমার অত্যন্ত ফ্যাসিনেটিং লেগেছিল। একদিক থেকে দেখলে, ছয় কিংবা সাতের দশকের বাংলা ছবিতে যেমনভাবে পারিবারিক গল্প ঘোরাফেরা করত, এটা সেরকম ধরনেরই একটা ছবি। একটা বড় পরিবার, তার অনেক শাখা-প্রশাখা, ডাল-পালা রয়েছে। চিত্রনাট্য পড়ার সময়, শ্যুটিংয়ে বা পরবর্তী সময়ে যখন গোটা ছবিটা দেখলাম তাতে আমার মনেও হয়েছে, এই পারিবারিক গল্পটা আবার পুরনোকালে ফিরে যেতে পারত, তা না হয়ে এর দৃষ্টিভঙ্গিটা অত্যন্ত আধুনিক ও সমকালীন বিষয়বস্তু তৈরি করতে পরেছে।
ছবিটায় অভিনয় করতে করতে আপনার কোনও স্কুলের বন্ধুর কথা মনে পড়েছে, যাঁর সঙ্গে আপনার দীর্ঘদিন দেখা হয়নি?
আমার স্কুল জীবন তো এক জায়গায় নয়। পাঁচ-সাত জায়গায় আমি স্কুলে পড়েছি। আমার বাবার বদলির চাকরি ছিল। সেই সব জায়গায় বন্ধুবান্ধব অনেকেই ছিল, ঠিক স্কুলের বন্ধু বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু আমার কোনও কালেই ছিল না। আমি তো স্কুল পলাতক বালক।
এই ছবির আবহে সত্যজিৎ রায়ের ঘরানার ছোঁয়া লক্ষ করা যাচ্ছে, এ বিষয়ে আপনার কী মত?
ওই যে বললাম, পাঁচ, ছয় কিংবা সাতের দশকের গোড়ার দিকের পারিবারিক সামাজিক কাহিনীর কাঠামো নিয়ে বাংলা ছবির যে ধারা বা ঐতিহ্য ছিল, সেটা এই ছবির মধ্যে অনুভূত হয়। সত্যজিৎ রায়ের বেশিরভাগ ছবি সেই রকমই। সেই দিক থেকে হয়তো কোথাও একটা মিল আছে। তাছাড়া, এই ছবিটার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিটাও হয়তো মনে করিয়ে দেয় সত্যজিৎ রায়কে।
এখন বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে সেই বাড়ির তরুণ প্রজন্মর একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, এই পরিবর্তনটা আপনি কীভাবে দেখেন?
পরিবর্তন আজকেই হঠাৎ হয়েছে তা তো নয়। সাকসেসিভ জেনারেশন আস্তে আস্তে পাল্টাতে থাকে। দশ-পনেরো বছর অন্তর যুবা প্রজন্মের দৃষ্টিকোণ পাল্টায়। যেমন ধরুন ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর কোনও র্যাডিক্যাল পরিবর্তন কি হয়ে যায়নি মানুষের মনে? আজ সমস্ত ভালো ছেলেমেয়েরা বিদেশে চলে যাচ্ছে কাজ করতে। পাশাপাশি আর একটা প্রজন্ম তাঁরা অবসর নিচ্ছে, বুড়ো হচ্ছে। ফলে সমাজটা আস্তে আস্তে একটা বৃদ্ধাশ্রমে পরিণত হচ্ছে। সুখের কথা, এত পরিবর্তনের মধ্যে একটা আশারও ইঙ্গিত থাকে।
ছবিতে বরুণবাবুর এক গণ্যমান্য বন্ধুর আসা নিয়ে সকলে ব্যাতিব্যস্ত। আপনি বিশ্ববরেণ্য অভিনেতা, যদি এই রকমভাবে কোনও পুরনো বন্ধুর বাড়িতে যেতে চান, তখন কী হবে অনুমান করতে পারেন?
(হেসে) হ্যাঁ, অনেক সময় আমি আমার বন্ধুর বাড়িতে যাই। একটা অসুবিধার ব্যাপার হচ্ছে যে, অন্যান্য কারণেও তো দূরত্ব তৈরি হয়। শুধু অবস্থানিক নয়। কাজের পরিধি আলাদা হয়ে যায়, প্রত্যেকের কাজের সময় পাল্টে যায়। আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুও আমাকে আগে জিজ্ঞাসা করে নেয়, আমি বাড়ি থাকব কি না। আমি সেলিব্রিটি বলে আমার বন্ধুটি ইতস্তত করছে তা কিন্তু নয়, এটা হচ্ছে সামাজিক অবস্থার দুর্বিপাক। এ নিয়ে তো কিছু করার নেই।
মানুষের জীবনে বোধ হয় একটু অভাব দরকার : মাধবী
সৌমিত্র-মাধবী জুটির উন্মাদনা আজও সমান। এর রহস্য কী?
রহস্য দর্শকদের মনে। আমাদের কিছু নেই। দর্শক আমাদের পছন্দ করেন, তাই তো আমাদের অস্তিত্ব।
ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে বরুণবাবু ও তাঁর স্ত্রীয়ের মধ্যে কত স্বাভাবিক সংলাপ বিনিময়। যেন অভিনয়ই নয়। এটাই কি সৌমিত্র-মাধবী জুটির আসল ইউএসপি?
আমি তো অভিনয় করতে পারি না। অভিনয় করিওনি কোনওদিন। আমি যেটুকু পারি তা হল একটা চরিত্রকে অনুভব করা। আর কিছু পারি না।
আপনি খুব বেছে ছবি নির্বাচন করেন। এই ছবিটার কোন কোন দিক আপনার পছন্দের?
প্রথমত, পরিচালক অনীকবাবুকেই আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, চিত্রনাট্য। অনীকবাবু অনেক ডিটেলে ভেবেছেন। বুঝিয়েছেন। এটাও আমার খুব ভালো লেগেছে। এখন এই ডিটেলে ভাবাটা কমে গিয়েছে। আমরা একদা এগুলোতে অভ্যস্ত ছিলাম।
বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের কোনও ঝলক কি আপনি আজকের পরিচালকের ছবিতে দেখতে পান?
তখন খুব অভাব ছিল। মানুষের জীবনে একটু অভাব দরকার। না হলে বোধহয় হয় না। ঐশ্বর্যের মধ্যে হয় না। এখন বড় ঐশ্বর্য।
নতুন প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করলেন, কেমন মনে হল?
এখনকার প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কেউই কিন্তু কম বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতী নন। তাঁদের সঠিকভাবে চালনা করলে, তাঁরা ঠিকই ফল দেবেন।
আপনাদের সময়ের থেকে আজকের প্রজন্মের অভিনয়ে কতটা পার্থক্য চোখে পড়ে?
আপনাদের যেমন পড়ে, আমারও পড়ে। ধরুন, আমি যদি ছবিটা করি, আমি যদি অর্ধশিক্ষিতা হই, তাহলে যে ছবিগুলো হয়, সেটাই হচ্ছে। শিক্ষার দরকার। ভাবতে হবে। ভিতরে ঢুকতে হবে।
এখনকার প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আপনার কী পরামর্শ?
পরামর্শ দিয়ে কোনও লাভ নেই। ওই জন্য দিই না।