পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
দাবার দুনিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন বাবা রাজ সেনের আঙুল আঁকড়ে। কারণ রাজবাবু অ্যালেখিন চেস ক্লাবের দাবা প্রশিক্ষক। সেই ছকে বাঁধা জীবন থেকে ছকহীন রুপোলি পর্দার দুনিয়ায় রোহনের পা রাখা সত্যজিৎ, ঋত্বিক, রোজেলিনি, হিচককের সৃষ্টিকে সেলাম ঠুকে। প্রথমে কতকগুলি ছোটছবি দিয়ে হাতে খড়ি। তখন ক্লাস ইলেভেন। সবকটি ছবিই কলকাতা আন্তজার্তিক চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত হয়। সাহস বাড়ল। মাথায় বড় ভাবনা ঘুরপাক খেতে শুরু করল। বন্ধু অর্পণ দেবকে সঙ্গে নিয়ে বসে গেলেন চিত্রনাট্য লিখতে। তারপরেই বড়পর্দার দুনিয়ায় আচমকাই রোহনের চেকমেট। রোহন ছবিটা যখন শুরু করেন, তখন তিনি সদ্য ভোটাধিকার পেয়েছেন। শ্যুটিং শেষ। পোস্ট প্রোডাকশনের কাজও প্রায় সারা। এবার কিস্তিমাত করার পালা। ছবিটি মুক্তি পেতে পারে সম্ভবত আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে।
‘রোহন যখন আমার বাড়ি চিত্রনাট্য নিয়ে এল, আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাইনি যে, ওইটুকু ছেলে ছবির পরিচালক। আমার ছেলের থেকে একটু বড়। তারপর যখন রোহন গল্পটা বলতে শুরু করল, আমার চরিত্রটা বিশ্লেষণ করে বোঝাতে লাগল, আমি আর দোনমনা করিনি। এক কথায় হ্যাঁ করে দিলাম।’ শ্যুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার মাস খানেক পরেও বিস্ময় কাটে না টালিগঞ্জের টেলিদুনিয়ার ‘দুষ্টু মেয়ে’ রূপাঞ্জনা মিত্রর। এই ছবিতে রূপাঞ্জনা অবশ্য ভালো মেয়ের চরিত্রে। ‘মাত্র তিন চারেট সিন। কিন্তু অসম্ভব অর্থবহ,’ বললেন রূপাঞ্জনা। ছবিতে তাঁর চরিত্রের নাম কথা। একজন ব্যর্থ সিনেমা পরিচালকের স্ত্রী। স্বামীর হতাশার শিকার এই গৃহবধূ। ক্রোধে অন্ধ স্বামী একদিন তাকে বাড়ি থেকে বার করে দেয়। কথার বক্তব্য কেউ শুনতে চায় না। আবার সেই স্বামীই, যখন তার তৃতীয় ছবি হিট করল, স্ত্রী কথাকেই উৎসর্গ করল সেই সাফল্য। ‘আমি আগে এমন চরিত্রে অভিনয় করিনি,’ মুগ্ধতা মিশিয়ে বলেন রূপাঞ্জনা।
‘একটা উনিশ বছরের ছেলে আড্ডা মারবে, কফিহাউস যাবে, একাধিক প্রেম করবে, দু’চারটে বিপ্লবও করে ফেলতে পারে, সেটা না করে সিনেমা নিয়ে সারাদিন পাগলামি করছে। আমি ভাবতাম আমার মতো সিনেমা পাগল আর কেউ নেই। রোহনকে দেখলাম আমার চেয়েও এক ধাপ উপরে,’ ডোভার রোডের কফিশপের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলি বললেন অভিনেতা জয় সেনগুপ্ত। তিনি এই ছবিতে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। ব্যর্থ পরিচালক। নিজের অভিনীত চরিত্রটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে জয় বললেন, ‘আসলে অভিজিৎ সিনেমা পাগল মানুষ। কিন্তু তার জন্য যতটা পাগলামো করে, ততটা করা হয়তো উচিৎ নয়। কারণ, জীবনের অন্যান্য সম্পর্কগুলো বজায় রাখাটাও কর্তব্য।’
ছবিতে অভিজিৎ-কথার পাশাপাশি সিদ্ধার্থ-লাবণীরও সমান্তরাল মিস্টি প্রেমের উপাখ্যান আছে। চরিত্র দুটিতে অভিনয় করেছেন যথাক্রমে আনন্দ চৌধুরী ও বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়। সিদ্ধার্থর মায়ের চরিত্রে আছেন শাশ্বতী গুহঠাকুরতা। একজন স্বাধীনচেতা, স্পষ্ট ও আদর্শবাদী একাকী মায়ের ভূমিকায়। শাশ্বতীর কাছেও নতুন লেগেছে তাঁর অভনীত চরিত্রটি। এছাড়া এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার অঞ্জনের ভুমিকায় আছেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। প্রয়াত অভিনেতা মৃণাল মুখোপাধ্যায়ের অভিনীত চত্রিটি নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাইলেন না রোহন। গল্পটি তাঁর বিশ্লেষণে, ‘আমাদের ছবির স্কেলটা একাধারে একজন মধ্যবিত্ত ছেলের এবং একজন আপারক্লাস লেভেলের পরিচালকের ক্রাইসিস নিয়ে। কার না জীবনে সমস্যা আছে! সেই সমস্যাকে অতিক্রমে করে আবার অভিজিৎ-কথার কোথাও গিয়ে মিল হচ্ছে। এটাই ছবির মূল মোটিভ।’ দৈনন্দিন সামাজিক পারিপার্শিকতা থেকে ছোট ছোট সাদা-কালো আবেগগুলোকে নিয়ে দাবার বোর্ডের মতো গল্প সাজিয়েছেন রোহন। তাঁর মতে, ‘গল্প বলার যদি সাহসটা থাকে, আর মাথায় ও মনে যদি গল্প বলার ইচ্ছেটা থাকে, তাহলে একটা সিনেমা ঠিক তৈরি করে ফেলা যায়।’ রোহনের মধ্যে এই জেদটাকে প্রত্যক্ষ করেই টলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী পরিচালকের ছবিতে লগ্নি করতে এগিয়ে এসেছেন কিছুক্ষণ এন্টারটেইনমেন্ট-এর অমৃতা দে। তাঁর প্রত্যয়, ‘আমি ভুল করিনি। রোহনের বয়স অল্প হতে পারে। কিন্তু ছবির বিষয়, ভাবনা ও নির্মাণ আশা করি সকলকে সন্তুষ্ট করবে।’ সুর করেছেন রাজদীপ গঙ্গোপাধ্যায়। গান গেয়েছেন রূপঙ্কর বাগচী, অমৃতা দে ও কিঞ্জল চট্টোপাধ্যায়। গান লিখেছেন তিনি, যিনি তাঁর ছেলেকে একদা দাবার ঘর চিনিয়েছিলেন। অ্যালেখিন চেস ক্লাবের প্রশিক্ষক, রোহনের বাবা রাজ সেন।
ছবি ভাস্কর মুখোপাধ্যায়